কোনো একটা দুর্যোগ, ঘটনা বা দুর্ঘটনা যাই হোক না কেন এ নিয়ে আগে যতোটা আলোচনা হয় পরে আর খোঁজ রাখা হয় না খুব একটা। বিশেষ করে প্রাকৃতিক দুর্যোগের খবর যতোটা ঘটা করে প্রচার করা হয় পরে আর তেমন কোনো খোঁজ রাখা হয় না। রোয়ানুর কথাই ধরা যাক। এই ঘূর্ণিঝড় নিয়ে যথেষ্ট সরব ছিল গণমাধ্যম। এটাই স্বাভাবিক। এবং এরফলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও অনেকটাই কমানো গেছে। কিন্তু রোয়ানু আঘাত হানার পর ক্ষতিগ্রস্থ অঞ্চলের মানুষ কী পরিমাণ দুর্ভোগে আছে সেটি নিয়ে খুব একটা মাথাব্যথা আছে বলে মনে হয় না। অথচ ওই অঞ্চলেরর মানুষের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। আমরা ইতোপূর্বেও সম্পাদকীয় স্তম্ভে সেসব কথা তুলে ধরেছি। রোয়ানু দুর্গত ১২টি উপজেলায় এখনো বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হয়নি। ঘরবাড়ি হারিয়ে লাখ লাখ মানুষ খোলা আকাশের নিচে। বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ায় ক্ষতির পরিমাণ বেড়েছে। অনেক স্থানে দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা। রয়েছে বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট। পানিবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষের টনক নড়ছে না। সরকারিভাবে যে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে তা ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা তৈরির মধ্যেই সীমাবদ্ধ বলে অভিযোগ রয়েছে। এ অবস্থায় কর্তৃপক্ষের দ্রুত যথাযথ ও পর্যাপ্ত পরিমাণে ত্রাণ সহায়তার বিকল্প নেই।উপকূলীয় অঞ্চলে বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ায় লোকালয়ে জলোচ্ছ্বাসের পানি ঢোকে পড়ে ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। যে সমস্ত বেড়িবাঁধ আছে সেগুলো স্বাভাবিক জোয়ার-ভাটা ঠেকানোর উপযোগী। বড় কোনো ঘূর্ণিঝড়ে বড় ধরনের জলোচ্ছ্বাস হলে তা ঠেকানোর সাধ্য নেই নিচু এবং দুর্বল এসব বেড়িবাঁধের। অথচ বহুদিন ধরেই যুগোপযোগী বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি করে আসছে উপকূলবাসী। এমনকি বেড়িবাঁধগুলো ঠিকমত সংস্কারও করা হয়নি। হলে এই বিপুল ক্ষতির হাত থেকে উপকূলবাসীকে রক্ষা করা যেত। দেশের সম্পদও রক্ষা হত। অথচ বেড়িবাঁধ নির্মাণ বা সংস্কার করতে যে পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন হতো এখন ভাঙা্ রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি ও অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণে তার চেয়ে বহুগুণ বেশি অর্থের প্রয়োজন হবে। কে নেবে এর দায়ভার?জলবায়ূর পরিবর্তনজনিত কারণে বাংলাদেশ এমনিতেই ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এসব কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সংখ্যা ও তীব্রতা বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। সে জন্য এখনই থেকেই প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। বিশেষ করে বেড়িবাঁধগুলোর সংস্কার জরুরি। এছাড়া জরুরি ভিত্তিতে ত্রাণ কার্যক্রমও চালাতে হবে। উপকূলবাসী যেন রোয়ানুর ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারে সে জন্য সবধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে জরুরি ভিত্তিতে। এইচআর/পিআর
Advertisement