ভ্রমণ

ঈদের আনন্দে ভ্রমণ করুন ঢাকার ২০ স্থানে

ঈদের আনন্দে ভ্রমণ করুন ঢাকার ২০ স্থানে

আসছে পবিত্র ঈদুল ফিতর। মুসলিমদের বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব এটি। এই ঈদের ছুটিতে বাড়তি আনন্দ যোগ করে ভ্রমণ। তাই অনেকেই ঘুরতে যেতে চান। ঢাকার আশেপাশের বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্রে পরিবার কিংবা বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে দলবেঁধে ঘুরে আসতে পারেন এই সুযোগে।

Advertisement

মৈনট ঘাটমৈনট ঘাট ঢাকার খুব কাছেই। ঢাকার দোহার উপজেলার পশ্চিম প্রান্ত ঘেঁষে বয়ে যাওয়া পদ্মা নদীর কোলে মৈনট ঘাট। স্থানটি ‘মিনি কক্সবাজার’ নামে পরিচিত। ঢাকার খুব কাছাকাছি হওয়ায় ২ ঘণ্টার মধ্যেই এখানে যেতে পারবেন। মাত্র ৯০ টাকায়। সারাদিন ঘুরে সন্ধ্যায় আবার ফিরেও আসতে পারবেন।

পানাম নগরপানাম নগর ঢাকার খুব কাছেই, মাত্র ২৭ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে নারায়ণগঞ্জের খুব কাছে সোনারগাঁতে অবস্থিত। যারা ঐতিহাসিক স্থানে ভ্রমণ করতে ভালোবাসেন; তাদের জন্য পানাম নগর হতে পারে সেরা। ঢাকার নিকটবর্তী হওয়ায় ভ্রমণপিপাসুদের কাছে বেশ জনপ্রিয় স্থানটি।

লোক ও কারুশিল্প জাদুঘরপানাম নগর ঘুরে চলে যেতে পারেন লোক ও কারুশিল্প জাদুঘরে। আবহমান গ্রাম বাংলার লোক সাংস্কৃতিক ধারাকে বিকশিত করার উদ্যোগে ১৯৭৫ সালের ১২ মার্চ শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন সোনারগাঁয়ের ঐতিহাসিক পানাম নগরীর একটি পুরোনো বাড়িতে প্রতিষ্ঠা করেন বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন।

Advertisement

বড় সর্দার বাড়িসোনারগাঁওয়ের বড় সর্দার বাড়ির ইটের ফাঁকে ফাঁকে ইতিহাস, বাতাসের অনুরণনে দুর্বোধ্যতা আর মেঝেজুড়ে রহস্য ও রোমাঞ্চ। খাজাঞ্চিখানা, দরবার কক্ষ, ঠাকুরঘর, গোসলখানা, কূপ, নাচঘর আর গুপ্তপথ নিয়ে বড় সর্দার বাড়ি। অবয়বে পুরোনো বৈভব নেই কিন্তু বৈভবের চলে যাওয়ার দাগ রয়েছে।

বাংলার তাজমহলসোনারগাঁতেই অবস্থিত তাজমহল মূলত ভারতের আগ্রায় অবস্থিত তাজমহলের অবিকল প্রতিরূপ। ১৫০ টাকার এক টিকিটে দুই মুভির মতো, বাংলার তাজমহলের সঙ্গে বাংলার পিরামিড দর্শন করতে পারবেন। বাংলার তাজমহলের মালিক আহসানুল্লাহ মনি একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে তার ‘তাজমহলের কপিক্যাট সংস্করণ’ প্রকল্পের ঘোষণা করেন। এটি রাজধানী থেকে ২০ মাইল উত্তর-পূর্বে সোনারগাঁয়ের পেরাবে নির্মিত হয়।

বাহ্রা ঘাটমিনি কক্সবাজারের মতো ঢাকার আশপাশেই আছে মিনি পতেঙ্গা। এই মনোমুগ্ধকর স্থান হলো বাহ্রা ঘাট। দোহার উপজেলায় অবস্থিত এই ঘাট বর্তমানে মিনি পতেঙ্গা নামে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ঢাকার কাছাকাছি হওয়ায় রাজধানীবাসী ডে লং ট্রিপের জন্য বেছে নেন দৃষ্টিনন্দন এ স্থান। গুলিস্তান থেকে প্রায় ৩৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।

মেঘনার চরঢাকার কাছে আড়াইহাজার চর অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠছে অল্প সময়ে। নিরিবিলি সময় কাটানোর জন্য আদর্শ এক স্থান এটি। সারাদিনের জন্য ঘুরতে পারবেন সেখানে। নদীর তীরে ট্রলারে পড়ন্ত বিকেল কাটানোর স্মৃতি মনে গেঁথে থাকবে সব সময়। গুলিস্তান থেকে দোয়েল বা স্বদেশ পরিবহনে মদনপুর যাবেন। সেখানে নেমে আড়াইহাজারের জন্য সিএনজি নেবেন।

Advertisement

গোলাপ গ্রামঢাকার সাদুল্লাহপুরের গোলাপ বাগান যেন লাল চাদর বিছিয়ে রেখেছে। কীভাবে গোলাপের চাষ করা হয়, কীভাবে তা সংগ্রহ করা হয়; তা নিজ চোখে দেখতে পারবেন। সাদুল্লাহপুর যেতে মিরপুর মাজার রোড হয়ে বেড়িবাঁধ সড়কে যাবেন। এ ক্ষেত্রে মিরপুর-১ থেকে বাস, টেম্পো, অটোরিকশা বা রিকশায় চড়তে হবে। বেড়িবাঁধ তুরাগের তীর তথা শিন্নিরটেক ঘাট থেকে ট্রলারে উঠতে হবে।

বেলাই বিলগাজীপুরের বেলাই বিলের সৌন্দর্যে মুগ্ধ পর্যটকরা। বিকেলে বিলের চারপাশে অপূর্ব দৃশ্য তৈরি হয়। সঙ্গে শাপলার ছড়াছড়ি। ঘুরে বেড়ানোর জন্য মনোরম জায়গা। সেখানে ইঞ্জিনচালিত আর ডিঙ্গি নৌকা পাওয়া যায়। বেলাই বিলে যেতে হলে প্রথমে গাজীপুর সদরে যাবেন। সেখানে নেমে টেম্পুতে কানাইয়া বাজার যান। রিকশায়ও যেতে পারেন। কানাইয়া বাজারে নেমে ব্রিজ পার হয়ে নৌকা ঠিক করে উঠে পড়ুন। পৌঁছে যাবেন বিলে।

বালু নদইট-পাথরের শহরে রাজধানীবাসীর নাগালে প্রকৃতি খুব কমই রূপ ছড়ায়। বিধায় এখানকার মানুষজন প্রকৃতির কিঞ্চিৎ ছোঁয়া পেলেই আপ্লুত হয়ে পড়েন। প্রকৃতির অনাদরে পড়ে থাকা বালু নদ ও এর আশপাশের এলাকা আকর্ষণ করছে প্রকৃতিপ্রেমীদের। রাজধানীবাসীর কিছুটা স্বস্তির স্থান হতে পারে এই নদী। কুড়িল চৌরাস্তা থেকে নারায়ণগঞ্জমুখী বিআরটিসি বাসে চড়ে বালু ব্রিজ নামবেন। সেখান থেকে রাস্তা পার হয়ে হেঁটে বা রিকশা নিয়ে চলে যান নীলা মার্কেট।

আরও পড়ুন ফাল্গুনের রাজধানীতে এক ঢিলে বহু পাখি  দুর্গম পাহাড়ি জনপদ জুরাছড়িতে একদিন 

চিড়িয়াখানাজাতীয় চিড়িয়াখানার অবস্থান ঢাকার মিরপুরে। ঈদের সময় ঢাকা চিড়িয়াখানা দর্শনার্থী কয়েকগুণ বেড়ে যায়। এবারও দর্শনার্থীর ঢল নামবে চিড়িয়াখানায়। চাইলে পরিবার পরিজন নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন।

আহসান মঞ্জিলবুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত ঢাকার নবাবদের আবাসিক ভবনগুলোর মধ্যে অন্যতম বিখ্যাত স্থান আহসান মঞ্জিল। এই ঈদে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে নবাবদের আভিজাত্যের ছোঁয়া উপভোগ করার মতো মজা আর হবে না।

লালবাগ কেল্লামুঘল আমলে নির্মিত একটি অনন্য ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসেবে পরিচিত লালবাগ কেল্লা। প্রতিদিন হাজারো মানুষের ভিড়ে মুখর থাকে লাল ইটের দর্শনীয় কেল্লাটি। সেই সঙ্গে দেখে আসতে পারেন কেল্লার পাশেই অবস্থিত ঐতিহাসিক লালবাগ শাহী মসজিদও।

বলধা গার্ডেনরাজধানীর ওয়ারীতে অবস্থিত বলধা গার্ডেনে রয়েছে প্রায় দেড় হাজার প্রজাতির গাছ। এখানে একটি সুন্দর পুকুর আছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা এই বাগানে নানা ধরনের গাছের পাশাপাশি রয়েছে পর্যটকদের জন্য গেস্ট হাউস।

জাতীয় সংসদ ভবনরাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউতে অবস্থিত জাতীয় সংসদ ভবনটি শুধুমাত্র বাংলাদেশই নয় বিশ্বের অন্যতম সেরা স্থাপত্যশৈলীর বাস্তব উদাহরণ। মার্কিন স্থপতি লুই কানের নকশায় নির্মিত অত্যাধুনিক এই ভবনটি তার ব্যতিক্রমী আকার ও নকশার জন্য জনপ্রিয়। ভবনের প্রবেশাধিকার সাধারণ মানুষের না থাকলেও আশেপাশের পরিবেশ, কৃত্রিম লেক ও রাস্তার ওপর অবস্থিত অস্থায়ী খাবারের দোকানগুলো বিকেলের পর জমজমাট হয়ে ওঠে।

বুড়িগঙ্গা ইকোপার্কশান বাঁধানো নদীর ঘাটে নৌকা বাঁধা দেখতে যেতে হবে বুড়িগঙ্গা ইকোপার্কে। মৃদুমন্দ হাওয়া খেতে চাইলে এখানে নৌকায় করে ঘুরতে পারেন। জায়গাটি গাছগাছালিতে ঢাকা। গাছের সারির ফাঁকে পাকা রাস্তা। শহরের কোলাহল ছেড়ে রাজধানীর উপকণ্ঠ শ্যামপুরে প্রায় সাত একর জায়গার ওপর গড়ে উঠেছে পার্কটি।

কার্জন হলরাজধানীর শাহবাগে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় কার্জন হল অবস্থিত। প্রায় ১১৫ বছরের পুরনো ব্রিটিশ স্থাপত্যের নজির ও ঐতিহাসিক ভবনটি বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষদের অংশ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। দ্বিতল এই ভবনটি ভারতবর্ষের তৎকালীন ভাইসরয় ও গভর্নর জেনারেল লর্ড কার্জনের নামানুসারে নির্মিত। লাল রঙা ইট দিয়ে কারুকার্যময় ভবনের সামনে রয়েছে সুন্দর ফুলের বাগান। ভবনের পেছনে রয়েছে প্রায় ৪০০ বছরের পুরনো ঐতিহাসিক মুসা খাঁ মসজিদ ও বিশাল একটি পুকুর।

হাতিরঝিলএক পাশে সবুজ অন্যপাশে টলটলে জলের ওপর দিয়ে চলেছে যাত্রীবাহী ওয়াটার বাস। ওয়াটার বাসে চড়ে ঘোরা যাবে পুরো হাতিরঝিল। মগবাজার থেকে রামপুরা এবং গুলশান পর্যন্ত এই ওয়াটার বাসে ভ্রমণ করা যাবে নির্ধারিত ভাড়ায়। হাতিরঝিলের প্রকৃত রূপ উপভোগ করতে চাইলে চলে যেতে পারেন রাতের বেলা। আলো ঝলমলে ব্রিজ ও ঠাণ্ডা হাওয়া মন-প্রাণ জুড়িয়ে দেবে।

রমনা পার্করাজধানীর শাহবাগ ও মিন্টু রোড এলাকা নিয়ে রমনা পার্কের অবস্থান। পার্কে রয়েছে নানান প্রজাতির গাছ এবং মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে। পরিবার নিয়ে পিকনিক করতে চাইলে রমনা পার্ক হতে পারে আদর্শ স্থান।

জাতীয় জাদুঘররাজধানীর শাহবাগে অবস্থিত জাতীয় জাদুঘর। জাদুঘরটি সুসংগঠিত এবং নৃতাত্ত্বিক ও আলংকারিক দিক থেকেও অনন্য। শিল্প বিভাগ, ইতিহাস ও ধ্রুপদী শিল্প বিভাগ, প্রাকৃতিক ইতিহাস বিভাগ এবং সমসাময়িক কিংবা বিশ্ব সভ্যতা বিভাগের মতো বিভিন্ন বিভাগে সাজানো বিশাল এই ভবনটির প্রতিটি কক্ষ। যা একদিনে দেখে চোখ জুড়াবে না। জাদুঘরে রয়েছে অত্যন্ত সমৃদ্ধ একটি পাঠাগার।

এসইউ/জিকেএস