মতামত

তুমি রবে নীরবে…

রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল সোমবার চির অবসান ঘটলো বেগম সম্পাদক নূরজাহান বেগমের জীবনের। কিন্তু যে আলো তিনি জ্বেলে গেছেন সেটি জ্বলবে দীপশিখার মতোই। তাই তাঁর চলে যাওয়া মানেই প্রস্থান নয়। বাঙালির বিশেষ করে নারী সমাজের কাছে অনন্ত প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবেন তিনি। বস্তুত জীবদ্দশাতেই কিংবদন্তিতে পরিণত হয়েছিলেন নূরজাহান বেগম। ৯১ বছরের বর্ণাঢ্য জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তাঁর চিন্তা চেতনা ও মননে ছিল সমাজকল্যাণ ও নারী মুক্তির ভাবনা। আমরা এই মহীয়সী নারীর মহাপ্রয়াণে গভীরভাবে শোকাহত। তাঁর প্রতি রইলো আমাদের গভীর শ্রদ্ধা। নারী মুক্তির কণ্ঠস্বর বেগম পত্রিকা প্রকাশিত হয়েছিল আরেক দিকপাল সাংবাদিক সওগাত সম্পাদক মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীনের হাতে। তাঁর পরিচালনায় কবি বেগম সুফিয়া কামালের সম্পাদনায় বেগম পত্রিকার কয়েক সংখ্যা প্রকাশের পর নূরজাহান বেগমই আমৃত্যু বেগম সম্পাদনার গুরু দায়িত্ব পালন করছেন নিষ্ঠার সঙ্গে। যে সমাজে ব্যক্তি উদ্যোগে প্রকাশিত একটি সাহিত্য পত্রিকার প্রকাশনা কয়েক বছর টিকিয়ে রাখাই দায় সেখানে প্রায় ৭ দশক ধরে তিনি মাসিক বেগম-এর প্রকাশনা অব্যাহত রেখেছেন আমৃত্যু।  তাঁর এই অনুপ্রেরণার উৎস ছিলেন নারী জাগরণের পথিকৃৎ বেগম রোকেয়া।  সাখাওয়াত মেমোরিয়াল স্কুল ও লেডি ব্রেবোর্ন কলেজের কৃতী ছাত্রী ছিলেন নূরজাহান বেগম। বাঙালি মুসলমান সমাজে যে যুগে নারীরা ছিলেন অবরোধবাসিনী অর্থাৎ নারীর ঘরের বাইরে যাওয়া বারণ ছিল যখন, তখন শুধু তিনি বাইরে বের হননি নারী মুক্তির ডাকও দিয়েছিলেন বেগম প্রকাশনার মধ্য দিয়ে। নারীর  সাহিত্য সাধনা, সাংবাদিকতা, সৃজনশীল বিকাশে বেগম পত্রিকার মাধ্যমে অনন্য ভূমিকা রেখেছেন তিনি। যে সময় পত্রিকায় নারীদের নাম প্রকাশ করাও ছিল অচিন্তনীয় সে সময় ছবিসহ লেখা প্রকাশ করে দুঃসাহসিকতার পরিচয় দেন তিনি।  দেশের প্রতিষ্ঠিত ও বিখ্যাত নারী লেখকের অনেকেরই হাতেখড়ি হয়েছে বেগম পত্রিকার মাধ্যমে। ধর্মান্ধতা ও কূপমণ্ডুকতার বিরুদ্ধে তিনি বরাবরই ছিলেন সোচ্চার। প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীর রক্তচক্ষুর বিরুদ্ধেও তিনি থেকেছেন অবিচল। তাই সমাজপ্রগতিবাদী হিসেবে অনেকেরই মানস চিন্তায় ঠাঁই করে নিয়েছেন তিনি।  বেগম ইতিহাসের সাক্ষী। এই পত্রিকার সংরক্ষণ জরুরি। বেগম-এর প্রকাশনা অব্যাহত থাকলেই  তাঁর প্রতি যথাযথ শ্রদ্ধা জানানো হবে। আমরা এই মহীরুহ নারীর আত্মার চিরশান্তি কামনা করছি। তাঁর বিদেহি আত্মার প্রতি জানাচ্ছি গভীর শ্রদ্ধা। এইচআর/পিআর

Advertisement