নারী ও শিশু

নারীরা শুধু সুযোগের অপেক্ষায় থাকবে না, সুযোগ সৃষ্টি করবে

নারীরা শুধু সুযোগের অপেক্ষায় থাকবে না, সুযোগ সৃষ্টি করবে

রুবাবা দৌলা মতিন। বাংলাদেশের একজন সফল করপোরেট ব্যক্তিত্ব। টেলিকম সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান গ্রামীণফোন লিমিটেডের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করেছেন। বর্তমানে বহুজাতিক কোম্পানি ওরাকল বাংলাদেশ-নেপাল-ভুটানের কান্ট্রি ম্যানেজিং ডিরেক্টর। বাংলাদেশের নারীদের বিভিন্ন খাতে উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য তিনি ২০০৬ সালে অনন্যা শীর্ষ দশ পুরস্কারে ভূষিত হন।

Advertisement

নারীর অধিকার, কাজের পরিবেশ, ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা প্রভৃতি বিষয়ে কথা বলেছেন জাগো নিউজের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মো. সামিউর রহমান সাজ্জাদ।

জাগো নিউজ: ক্যারিয়ারে আপনি টেলিকম, স্বাস্থ্যখাত, প্রযুক্তিখাতে সফলতার সঙ্গে কাজ করছেন। এই জার্নিটা কেমন ছিল?

রুবাবা দৌলা: আমার ক্যারিয়ারের জার্নিটা চ্যালেঞ্জিং হলেও অত্যন্ত সমৃদ্ধশালী ও শেখার অভিজ্ঞতায় ভরপুর। টেলিকম, স্বাস্থ্য ও প্রযুক্তি— এই তিনটি খাতেই কাজ করতে গিয়ে আমি নিত্যনতুন সমস্যার সমাধান, উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনা এবং টেকসই উন্নয়নমূলক সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ পেয়েছি। প্রতিটি খাতের নিজস্ব চ্যালেঞ্জ ও সুযোগ রয়েছে, যা আমাকে বহুমুখী দক্ষতা অর্জনে সহায়তা করেছে। বিশেষ করে প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে নেওয়ার কাজ করতে পারাটা আমার জন্য অত্যন্ত গর্বের।

Advertisement

আমি সব সময় আমার কাজ ও দক্ষতার মাধ্যমে নিজের অবস্থান দৃঢ় করতে চেষ্টা করেছি। আমার বিশ্বাস, যোগ্যতা, আত্মবিশ্বাস ও নিরবচ্ছিন্ন প্রচেষ্টার মাধ্যমে নারীরা সব ধরনের বাধা অতিক্রম করতে পারে।

জাগো নিউজ: একজন নারী উদ্যোক্তা হিসেবে আপনি কি কখনো বৈষম্যের শিকার হয়েছেন?

আরও পড়ুন নারী উদ্যোক্তা তৈরির ‘উদ্যোক্তা’ ফাহমিদা নিজাম নারী উদ্যোক্তাদের পণ্যে নারীরাই বেশি আগ্রহী নারী নির্যাতন ও ধর্ষণ: ক্রমবর্ধমান সামাজিক সংকট

রুবাবা দৌলা: প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নারীদের বিভিন্ন পর্যায়ে বৈষম্যের মুখোমুখি হতে হয়, যা আমি নিজেও অনুভব করেছি। কখনো নেতৃত্বের সিদ্ধান্ত গ্রহণে, কখনো কাজের স্বীকৃতিতে নারী হিসেবে অতিরিক্ত প্রমাণের প্রয়োজন হয়। তবে আমি সব সময় আমার কাজ ও দক্ষতার মাধ্যমে নিজের অবস্থান দৃঢ় করতে চেষ্টা করেছি। আমার বিশ্বাস, যোগ্যতা, আত্মবিশ্বাস ও নিরবচ্ছিন্ন প্রচেষ্টার মাধ্যমে নারীরা সব ধরনের বাধা অতিক্রম করতে পারে।

জাগো নিউজ: আপনার পর্যবেক্ষণে বর্তমানে বাংলাদেশের নারীরা তাদের অধিকার নিয়ে কতটুকু ভাবে?

Advertisement

রুবাবা দৌলা: বর্তমানে বাংলাদেশের নারীরা তাদের অধিকার নিয়ে অনেক বেশি সচেতন। শিক্ষা, কর্মসংস্থান, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীদের দৃশ্যমান অংশগ্রহণ বেড়েছে। তবে এখনো অনেক নারী সামাজিক ও পারিবারিক চাপে তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হন। সচেতনতা বৃদ্ধি, নীতি-নির্ধারকদের সঠিক পদক্ষেপ ও পরিবার থেকে সমর্থন পেলে নারীরা আরও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে তাদের অধিকার আদায়ে সক্ষম হবে।

জাগো নিউজ: সমাজ ও রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীরা তাদের প্রতিভার সাক্ষর রেখে যাচ্ছে। তাদের এগিয়ে যাওয়ার চালিকাশক্তি কী?

রুবাবা দৌলা: নারীদের এগিয়ে যাওয়ার প্রধান চালিকাশক্তি হলো তাদের শিক্ষা, আত্মপ্রত্যয়, মানসিক দৃঢ়তা ও সমাজের সহযোগিতা। বর্তমানে প্রযুক্তি ও ডিজিটাল কানেক্টিভিটির সুবাদে নারীরা সহজেই নতুন সুযোগ ও জ্ঞানের সংস্পর্শে আসতে পারছে। পাশাপাশি পরিবার ও সমাজের সমর্থন, নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে অন্তর্ভুক্তি এবং নারীদের জন্য আরও সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে তাদের অগ্রগতি আরও ত্বরান্বিত করা সম্ভব।

নারীদের এগিয়ে যাওয়ার প্রধান চালিকাশক্তি হলো তাদের শিক্ষা, আত্মপ্রত্যয়, মানসিক দৃঢ়তা ও সমাজের সহযোগিতা। বর্তমানে প্রযুক্তি ও ডিজিটাল কানেক্টিভিটির সুবাদে নারীরা সহজেই নতুন সুযোগ ও জ্ঞানের সংস্পর্শে আসতে পারছে।

জাগো নিউজ: কর্মক্ষেত্রে নারীরা কী ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়? এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমাদের করণীয় কী?

রুবাবা দৌলা: কর্মক্ষেত্রে নারীরা বিভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়, যেমন—সমান সুযোগের অভাব, বেতন বৈষম্য, নেতৃত্বের ক্ষেত্রে বাধা এবং কর্মজীবন ও ব্যক্তিগত জীবনের ভারসাম্য রক্ষা। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রতিষ্ঠানের নীতি আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক হতে হবে। নারীদের দক্ষতা উন্নয়নে প্রশিক্ষণ, কর্মক্ষেত্রে বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ এবং পরিবার ও প্রতিষ্ঠানের সমর্থন এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

জাগো নিউজ: তরুণ নারী উদ্যোক্তাদের জন্য আপনার পক্ষ থেকে কিছু বলুন।

রুবাবা দৌলা: তরুণ নারী উদ্যোক্তাদের জন্য আমার পরামর্শ হলো—নিজেকে বিশ্বাস করুন, নিরবচ্ছিন্নভাবে শিখতে থাকুন এবং কোনো বাধা আপনার স্বপ্নের পথে অন্তরায় হতে দেবেন না। ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত গ্রহণে তথ্যভিত্তিক বিশ্লেষণ করুন এবং নেটওয়ার্ক তৈরি করুন। প্রতিটি সফলতার পেছনে ধৈর্য, পরিশ্রম ও আত্মবিশ্বাসের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সমাজ ও কর্মক্ষেত্রে পরিবর্তন আনতে হলে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে এবং সেই পরিবর্তনের অগ্রদূত হতে হবে আপনাকেই।

সবশেষে বলতে চাই, নারীরা শুধু সুযোগের অপেক্ষায় থাকবে না, তারা সুযোগ সৃষ্টি করবে। আত্মবিশ্বাস, কঠোর পরিশ্রম ও দৃঢ় সংকল্প নিয়ে এগিয়ে গেলে, সাফল্য নিশ্চিত।

এসআরএস/এএসএ/এএসএম