সাহিত্য

ইয়াসিন আযীযের চারটি কবিতা

ইয়াসিন আযীযের চারটি কবিতা

অকৃতজ্ঞ ও ঈর্ষা

Advertisement

সকালের শুরুতে লাউয়ের ডগাসোনারোদ মেখে নেয় আপন মনেভাবে সূর্যের স্নিগ্ধ ভালোবাসাদিয়েছে বুঝি তাকে একাই;পাশের মাচার কুমড়ো ফুল রেখে তাইসূর্যের পানে চেয়ে থাকে।

একদিন ভরা পূর্ণিমার রাতেএকফোঁটা শিশির পড়ে তার ডগায়দিন কয়েক বাদে ডগায় কুঁড়ি আসে—বড়ো হতে থাকে লাউ মাচায়।শিমের লতার কাছে গল্পের ফাঁকেসূর্যের সাথে প্রণয়ের কথা বলে লাউলতা।সে ভাবে সূর্যই রাতে চাঁদ হয়ে এসেপ্রণয় শিশিররস দিয়েছিল ভালোবেসে।

মাটি আর জলের সাথে শিকড় তখনো...মাটি আর জলের কথা ভুলে যায় এভাবেই!ভ্রমরের আলিঙ্গনে পরাগায়নসে-তো মনেই রাখেনি—লাউলতা!শিমের লতা, লাউলতার কথা শুনেবাতাসে দোলে আর মুচকি হাসে।কুমড়ো ফুল মাথা উঁচিয়ে তাকায়ভাবে ষড়যন্ত্র হচ্ছে তাকে নিয়েই।

Advertisement

****

নিজেকে আগে বদলাই

আমরা নিজেরা না বদলাইঅন্যকে শুধু বদলাতে চাই।

নিজের বেলায় আইনের ধার ধারি নাঅন্যকে বলতে চুল পরিমাণ ছাড়ি না।

Advertisement

জাতিতে আমরা উপদেশবাদীরাখি না খোঁজ, নিজেই অপরাধী।

পরের উপকারে সেরা আমরাই;বিচার মানি—তালগাছ আমার চাই!

নিজের স্বার্থে ষোলোআনা বাজি—জানো না কত নিচে নামতে রাজি!

চলো বদলাই নিজে সবার আগেএকাই জাগবো, যদি কেউ না জাগে।

শুরুটা হোক আমাকে দিয়ে নতুনেরফোটাতে সত্য অথবা মিথ্যা পতনের।

মহাকাল দেবে সাক্ষ্য সে মহৎ কর্মেরমানুষ কি শুধরাতে পারে ভুল—ধর্মের?

****

মধ্যবিত্তের প্রিয় ঋতু

আমার প্রিয় ঋতু কোনটি—বলা মুশকিল। আমি কোনো কিছুতেই সেভাবেআটকে থাকি না। তবে আমি শীতের অপেক্ষায় মুখিয়ে থাকি—সস্তায়নানারকম শাক-সবজি কিনতে পারব ভেবে। কৃষক থেকে ভোক্তা পর্যন্তপৌঁছতে: গাড়ি ভাড়া বৃদ্ধি, রাস্তায় চাঁদাবাজের দৌরাত্ম্য, অতি মুনাফালোভীরকারসাজি; সব মিলিয়ে আকাশ ছুঁয়ে যায় দাম। দুশো টাকায় ছোটো একটাব্যাগ ভরে উঠুক শাক-সবজিতে—আমার মতো মধ্যবিত্তরা তা-ই চায়।বাজারে গিয়ে হতাশই হতে হয় বরাবর। না না, কেউ আমাকেনিরামিষ ভোজী ভেবে ভুল করবেন না। মাছ, মাংস খুব একটা পছন্দ নয়আমার ঠিক! তবে পছন্দ করেই লাভ কী বলুন? এ নিয়ে একটি মুখরোচকগল্প জানি আমি। সেটা না হয় অন্যদিন বলা যাবে। আজ এটুকুই...

****

মানব জীবন

সকলকেই একদিন খালি হাতে ফিরে যেতে হয়। যেভাবে একদিন ফিরেগিয়েছিল ব্রিটেন...। অতীতে সোভিয়েত, সম্প্রতি ফিরে গেল আমেরিকা—আফগানিস্তান থেকে। বাংলা থেকে অপধ্বস্ত হয়ে একাত্তরে ফিরেছিলপাকবাহিনী। এভাবেই সকলকে খালি হাতে ফিরে যেতে হয়। মহাবীরআলেকজান্ডার ফিরে গিয়েছিল খালি হাতে ভারতবর্ষ হতে। খালি হাতেফিরে গিয়েছে সাদ্দাম হোসেন, কর্নেল গাদ্দাফি, হোসনি মুবারকের মতোহালের দীর্ঘস্থায়ী শাসকগণ।

ক্ষমতার লোভে, ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থে যতই বাহাদুরি করি না কেন—একদিনঠিকই রিক্ত, শূন্য হাতে পাড়ি দিতে হয় জীবন তরী। কারও ক্ষমতা চিরস্থায়ীনয়—ইতিহাস তা-ই বলে। তবুও চরম সুখানুভূতির মুহূর্তের চেয়ে স্বল্পায়ুমানব জীবনে, জানি না আমাদের কেন এত নক্ষত্র হওয়ার সাধ!

এসইউ/এএসএম