বিশেষ প্রতিবেদন

পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন নিয়ে বিপাকে বিএনপি

কাউন্সিল হওয়ার পর দুই মাসেরও বেশি সময় পার হয়েছে। এর মধ্যে তিন ধাপে ৪২ নেতার নাম ঘোষণা করেছে বিএনপি। সর্বশেষ ১৮ এপ্রিল সহ-সাংগঠনিকদের নাম ঘোষণার পর থেকে কমিটি ঘোষণা অনানুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ রেখেছে দলটি। এর আগে যুগ্ম মহাসচিব ও সাংগঠনিক সম্পাদকসহ মহাসচিব, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ও কোষাধ্যক্ষর নাম ঘোষণা করা হয়। এদিকে কাউন্সিলের মাধ্যমে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয় নেয়া দলটি হঠাৎ করে বাকি নেতাদের নাম ঘোষণায় বিরত থাকায় নেতাকর্মীদের মাঝে কোন্দল আর হতাশা যেন বেড়েই চলছে। সূত্রে জানা গেছে, যেসব নেতার নাম ইতিমধ্যে ঘোষণা করা হয়েছে তা নিয়েই অভ্যন্তরীণ কোন্দলে বিপর্যস্ত বিএনপি। ক্ষেত্র বিশেষে ক্ষোভ এমন আকার ধারণ করছে তা নিয়ন্ত্রণের বাইরেও যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। তাই আপাতত কমিটি ঘোষণার ক্ষেত্রে ধীরগতির কৌশল অবলম্বনের পথ বেছে নিয়েছে দলটি।নানা প্রতিবন্ধকতার মাঝেও গত ১৯ মার্চ দলটির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। কাউন্সিলের দুই মাস অতিক্রম হলেও দলের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম তথা জাতীয় স্থায়ী কমিটিসহ পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে পারেনি দলটি। তবে এরআগে, পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হওয়ার ছয় দিনের মাথায় প্রথমে স্থায়ী কমিটি এবং ২০ দিনের মাথায় পূর্ণাঙ্গ নির্বাহী কমিটি গঠন করেন খালেদা জিয়া। কিন্তু এবার তা হয়নি। ফলে কমিটি গঠনে বিলম্ব হওয়ায় দলটির অভ্যন্তরে নানা আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। যথাসময়ে কমিটি গঠনে ব্যর্থ বিএনপির ভবিষ্যত নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, সার্বিক পরিস্থিতি বুঝেশুনে কমিটি গঠন করার পক্ষে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান। কোনোমতেই যাতে কমিটি গঠন নিয়ে দলের মধ্যে অসন্তােষ তীব্র আকার ধারণ না করে এজন্য মা-ছেলে একাধিকবার আলাপ-আলোচনাও করছেন।নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির নতুন নির্বাহী কমিটিতে শীর্ষ পদপ্রত্যাশী এক নেতা জাগো নিউজকে বলেন, বিশেষ সিন্ডেকেটের হাতে বিএনপির কমিটি গঠন ক্ষমতা চলে গেছে। কাউন্সিলররা খালেদা জিয়ার হাতে কমিটি গঠনের সব ক্ষমতা দিলেও তাকে (খালেদা জিয়া) ব্ল্যাকমেইল করে ইতিমধ্যেই সিন্ডিকেটটি সফলতার মুখ দেখেছে।তিনি মনে করেন, তিন ধাপে যেসব নেতার নাম ঘোষণা করা হয়েছে তাদের মধ্যে অনেককেই প্রত্যাশার চেয়ে ভালো পদ দেয়া হয়েছে। এখনো কমিটিতে পরবর্তী নেতাদের নাম ঘোষণা না আশায় প্রকাশ্যে না এসে লজ্জায় বন্দিজীবন পার করছেন।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় নয়াপল্টন ও চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ের দুটি সিন্ডিকেট বিএনপির নতুন নির্বাহী কমিটি গঠন করছে। দলের মহাসচিব থেকে শুরু করে সিনিয়র এমন কোনো নেতা নেই যিনি কমিটি গঠন কীভাবে হয় সে বিষয়ে অবগত। তবে সিন্ডিকেটের কবলে বন্দি হয়ে কমিটি গঠন হলে পরবর্তী অভ্যন্তরীণ কোন্দল সামলানোই বিএনপির জন্য মুশকিল হয়ে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। দলের চলমান এই সংকট সমাধানে সিনিয়র নেতাদেরকে খালেদা জিয়ার সঙ্গে পরামর্শ করে পরবর্তী কমিটি ঘোষণার পরামর্শও দেন তারা।এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, বিএনপির কমিটি গঠনের একক ক্ষমতা দলের চেয়ারপারসনকে দেয়া হয়েছে। যত তাড়াতাড়ি কমিটি পূর্ণাঙ্গ হবে, তত মঙ্গলজনক।নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য বলেন, দেড় মাসেও স্থায়ী কমিটি ঘোষণা না করা দুঃখ ও হতাশাজনক। মনে হচ্ছে, কমিটি ‘ব্ল্যাকহোলে’ চলে গেছে। কমিটি কবে হবে, তা নিয়ে তাদের কোনো ধারণা নেই। তার জানা মতে, স্থায়ী কমিটির সদস্যদের কারও মত বা পরামর্শ খালেদা জিয়া নিচ্ছেন না। কমিটির বেশিরভাগ সদস্যই হতাশ। তবে দলের কেউ তাকে কোনো কিছুর জন্য দায়ীও করতে পারবেন না। কারণ, কাউন্সিলে দলের নেতারাই তাকে একক ক্ষমতা দিয়েছেন।এদিকে নয়াপল্টনে অবস্থান নিয়ে ক্রমান্বয়ে কমিটির নাম ঘোষণা দিচ্ছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। কবে নাগাদ কমিটি হবে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, কয়েক ধাপে কিছু পদে নাম ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি আশা করছেন, শিগগিরই নির্বাহী কমিটি ও স্থায়ী কমিটি ঘোষণা করা হবে। এ নিয়ে দল বিপাকে পড়েনি বলেও মন্তব্য করেন তিনি। বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদ অবশ্য মনে করেন, গত দুই মাসে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা হলে ভালো হতো। কিন্তু সেটি না হওয়ায় হতাশা বেড়েছে। এভাবে একটা বিব্রত অবস্থায় পড়ে যাওয়ার সম্বাবনা রয়েছে। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মনে করেন, বিএনপির বিরুদ্ধে অপপ্রচার চলছে। চলছে নানামুখি ষড়যন্ত্রও। সব ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে বিএনপি যথা সময়ে ঘুরে দাঁড়াবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। কমিটি গঠন পক্রিয়া চলমান বলেও দাবি করেন তিনি।এমএম/বিএ/আরআইপি

Advertisement