‘আমি এখন ঘরের বোঝা। এখন হাসপাতাল থেকেও বাসায় আসি না। কীভাবে আসবো? ঘরে কীভাবে মুখ দেখাবো? আন্দোলনে গিয়ে গুলি খাইছি। আমার মা, ভাই-বোনদের সঙ্গেও কথা বলি না। গুলি খাওয়ার পর থেকে কাজ করি না। আমাদের সংসার চালাতে অনেক কষ্ট হয়।’
Advertisement
কথাগুলো বলছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ ২০ বছর বয়সী অটোরিকশাচালক মো. নাদিম। জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার বিপ্লবে তিনিও যোগ দিয়েছিলেন। ১৭ থেকে ১৯ জুলাই পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের আন্দোলনে উপস্থিত ছিলেন। ২০ জুলাই আন্দোলনে অতর্কিতভাবে বিজিবির গুলিবর্ষণে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। শরীরের বিভিন্ন স্থানে মোট ৭টি গুলি লাগে বলে জানান তিনি।
ঝালকাঠি জেলার নলছিটি থানার মৃত খোকা হাওলাদারের ছেলে নাদিম। বাবার মৃত্যুর পর অভাবের সংসারের হাল ধরতে অটোরিকশা চালানো শুরু করেন। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে বড় ভাই ও দুই বোনের বিয়ে হওয়ায় তারা আলাদা বসবাস করেন। মেজো ভাই ও নাদিম মাকে নিয়ে (নাসিক) ১নং ওয়ার্ডের চান টাওয়ারের অপর পাশের একটি ভাড়া বাড়িতে বসবাস করছেন। মূলত নাদিমের উপার্জনেই সংসার চলছিল। তবে আন্দোলনে যুক্ত হয়ে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর চিকিৎসার জন্য অটোরিকশাটি বিক্রি করে দেন। পাশাপাশি ঋণগ্রস্ত হয়ে দুঃখের জীবন কাটছে পরিবারটির।
২০ জুলাইয়ের স্মৃতিচারণ করে নাদিম জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি অন্যান্য দিনের মতো ওইদিনও সকালে আন্দোলনে গিয়ে দুপুরে বাসায় খেতে এসেছিলাম। ১৭ জুলাই থেকেই আমাদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হচ্ছিল। ২০ জুলাই বিকেলে আন্দোলনে যাওয়ার জন্য চিটাগাং রোডে যাচ্ছিলাম, এমতাবস্থায় বিজিবি আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্য করে অতর্কিত গুলি চালানো শুরু করে। বাঁচার জন্য পালিয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ পুল পর্যন্ত এসেছিলাম। তখন বিজিবি আমাদের গুলি করতে করতে পেছনে আসছিল। পুলের কবরস্থান মসজিদের সামনে আসার পরই আমি একের পর এক গুলি খাই। গুলি খেয়ে পড়ে যাই। মোট ৭টি গুলি আমার শরীরে লেগেছে।’
Advertisement
তিনি আরও বলেন, ‘সেদিন আশপাশের মানুষ আমাকে বাসায় নিয়ে এলে আমার ভাই ও খালু সাইনবোর্ড প্রো-অ্যাকটিভ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে সাময়িক চিকিৎসা করেই আমাকে ঢাকা মেডিকেলে রেফার করে। এরপর আরও দুটি হাসপাতালে ঘুরে অপারেশন করাই। অপারেশনের পর প্রায় ১০-১২ দিন বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছিলাম। তখন শুনেছি পুলিশ আহতদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে। এই ভয়ে আমিও পালিয়ে যাই আত্মীয়র বাসায়। এরপর থেকে সরকার কর্তৃক আমাদের চিকিৎসা চলছে। তবে উন্নত চিকিৎসা আমরা পাচ্ছি না। আমার হাত দিয়ে কিছুই করা যাচ্ছে না। অচল হয়ে আছে। এর মধ্যে কিছুদিন আগে জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন থেকে আমাদের ১ লাখ টাকা অনুদান দেওয়া হয়েছে। মূল কথা আমি এখন হাসপাতাল থেকে বাড়িতেও তেমন আসি না। পরিবারের কথা মনে পড়ায় তাদের সঙ্গে দেখা করতে আসছি।’
নাদিমের বড় বোন নাসরিন বলেন, ‘আমার ভাইটা গুলি খাওয়ার পর আমরা ওর রিকশা বিক্রি করার পাশাপাশি আরও ঋণ কইরা চিকিৎসা করছি। এখন ঋণ টানতে কষ্ট হচ্ছে। আমার মায়ের সংসার চালাতে অনেক কষ্ট হয়। আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাই আমার ভাইটাকে যেন উন্নত চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করে তোলে। ওর ইনকাম ছাড়া আমার মায়ের সংসার চলবে না।’
এফএ/জেআইএম
Advertisement