প্রবাস

রিঙ্গিতের মান হ্রাসে হতাশ মালয়েশিয়া প্রবাসীরা

আবারও মালয়েশিয়ান রিঙ্গিতের মূল্য কমায় হতাশ বাংলাদেশিরা। গত ১৭ বছরের মধ্যে রিঙ্গিতের মূল্য বর্তমানে সর্বনিম্নে। এখন ১ ডলারের বিপরীতে রিঙ্গিতের মূল্য ৪ দশমিক ২৪ রিঙ্গিতে এসে ঠেকেছে। আর বাংলাদেশি মুদ্রায় ১ রিঙ্গিতের মূল্য কমে দাঁড়িয়েছে ১৯.২০ টাকায়। এদিকে রিঙ্গিতের মান কমে যাওয়ায় দিনদিন কমছে প্রবাসীদের আয়। এক বছর আগে এক হাজার রিঙ্গিত পাঠালে দেশে ২৫ হাজার টাকা পাওয়া যেত। আর এখন পাওয়া যাচ্ছে ১৯ হাজার ৩ শ’ টাকা বা তার চেয়েও কম। এক বছরের মধ্যে রিঙ্গিতের মূল্য প্রায় ৮ হাজার টাকা কমে যাওয়ায় দেশে রেমিটেন্স প্রেরণ অনেকটাই কমে গেছে। তবে, চলতি মাসের শেষে রিঙ্গিতের মূল্য বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটির অর্থনীতিবিদরা। দেশটির স্থানীয় ব্যাংকগুলোতে শুক্রবার সকাল ১১টা ২ মিনিটে রিঙ্গিতের অর্থমূল্য ডলারের বিপরীতে ৪ দশমিক ০০২৫ এ নেমে আসে। গত ১২ মাসে ডলারের বিপরীতে এ মূল্য ২০ শতাংশ কমেছে, যা এশিয়ার সবচেয়ে বাজে অবস্থান। ১৯৯৮ সালের জুলাই মাসে ডলারের বিপরীতে এ মূল্য ৩ দশমিক ৮৮ রিঙ্গিতে নেমে এসেছিল। জানা গেছে, চীনা মুদ্রা ইউয়ানের মূল্যহ্রাসের প্রভাব পড়েছে রিঙ্গিতের ওপর। তেল রফতানিতে ঘাটতি থেকে মালয়েশিয়া সরকারের আয় কমে যায়। এরমধ্যে প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজ্জাকের ১ এমডিবি (১ মালয়েশিয়ান ডেভলপমেন্ট বিএইচডি) থেকে ২ দশমিক ৬ বিলিয়ন রিঙ্গিতের অনুদান নিজের একাউন্টে সরিয়ে নেয়ার বিষয়টি আলোচনার বাহিরে নয়।  মালয়েশিয়ায় একটি প্যাকিং কোম্পানিতে চাকরি করেন খুলনার ছেলে। মাসে ১৫০০ রিঙ্গিত আয় করেন। ২০১৪ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত ওই বেতনে বাংলাদেশি টাকায় সাড়ে ৩৭ হাজার টাকা আয় করতেন তিনি। রিঙ্গিতের দাম পড়ে যাওয়ায় এখন তা ২৯ হাজার টাকায় নেমে এসেছে।ফলে বাড়িতে টাকা পাঠানোও বন্ধ করতেও পারছেন না, আবার নিজেরও  চলতে খুব কষ্ট হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানাগেছে, ২০১৩-এর ডিসেম্বরের পর থেকেই ডলারের বিপরীতে রিঙ্গিতের মূল্য পড়তে থাকে। ২০১৩ সালের অক্টোবরে ১ ডলারের বিপরীতে রিঙ্গিতের মূল্য ছিল ২ দশমিক ৯৭ রিঙ্গিত। কিন্তু ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে তা বেড়ে ৩.৪০ রিঙ্গিতে পৌঁছায়। নাগরিকদের অসন্তুষ্টির মুখেও অর্থনৈতিক এ পতন ঠেকাতে গত বছরের এপ্রিলে জিএসটি (গুডস অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্যাক্স) চালু করে মালয়েশিয়া সরকার। ৬ শতাংশ ট্যাক্স যোগ হওয়ার ফলে ১০০ রিঙ্গিতের পণ্যের সঙ্গে সেবা গ্রহণকারী বা ক্রেতাকে দিতে হচ্ছে ১০৬ রিঙ্গিত। এদিকে জিএসটি চালুর প্রথম দিকে রিঙ্গিতের মূল্য ডলারের তুলনায় কিছুটা ওঠার চেষ্টা করলেও আবার ধসে পড়ে। জিএসটি যোগ হওয়ার ফলে, বাড়ি ভাড়া থেকে শুরু করে, খাওয়া এমনকি মোবাইল কার্ডের দামও বেড়ে গেছে ৬ শতাংশ হারে। কিন্তু আয় রয়েছে আগের মতোই। রিঙ্গিতের এ দরপতনে নাভিঃশ্বাস উঠেছে বাংলাদেশি শ্রমিকদের। ঢাকা খিলগাঁওয়ের  রিয়াদ হোসেন চায়না টাউন একটি এজেন্সীতে কাজ করেন। তিনি বলেন, আমরা কয়েকজন মিলে একটি কন্ডোতে থাকি। আগে বাসা ভাড়া দিতে হতো জনপ্রতি ২০০ রিঙ্গিত। এখন দিতে হচ্ছে ২২০ রিঙ্গিত করে। জিএসটি’র কারণে ভাড়া ১২ রিঙ্গিত বাড়লেও মালিক আরো ৮ রিঙ্গিত বেশি নিচ্ছেন। এছাড়া পরিবহন ভাড়া, দৈনন্দিন খরচও বেড়েছে সব পণ্যের।কুয়ালালামপুরের বাহরাইন ফাইন্যান্স কোম্পানীর মার্কেটিং ম্যানেজার এ কে এম হাবিবুর রহমান শিশির জানান, রেমিটেন্স পাঠানোর পরিমাণ আগের তুলনায় ৪০ শতাংশে নেমে এসেছে। এখন দিনে ১০ জন বাংলাদেশি গ্রাহকও পাওয়া যাচ্ছে না। নেপাল ও পাকিস্তানিদের অবস্থাও একই।  শিশির আরও বলেন, প্রবাসীরা  এখন হুন্ডির ওপর ঝুকেঁ পড়ছেন। হুন্ডিতে টাকা পাঠালে প্রতি রিঙ্গিতে ৪০ থেকে ৫০ পয়সা বেশি পাওয়া যায়।এ সুযোগে হুন্ডি ব্যবসায়িরা  বেশ সক্রিয় হয়ে উঠেছে।এমএমজেড/এমএস

Advertisement