সবচেয়ে বেশি কীটনাশকের ব্যবহার হয় ফল ও সবজিতে

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৪:৫১ পিএম, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪

দেশের কৃষকরা কীটনাশক ব্যবহারের নীতিমালা অনুসরণ করছে না বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. রুহুল আমিন। এ কারণে দেশে উৎপাদিত খাদ্যদ্রব্যগুলোর মধ্যে ফল ও সবজিতে কীটনাশক ব্যবহারের হার সবচেয়ে বেশি বলেও মনে করেন তিনি।

সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) রাজধানীর শাহবাগে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের (বিএফএসএ) কার্যালয়ে কর্তৃপক্ষের সার্বিক কার্যক্রম নিয়ে আয়োজিত এক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।

ড. রুহুল আমিন বলেন, দেশে উৎপাদিত কোনো খাদ্য কতটুকু নিরাপদ তাও জানা যায় না। এসব নিয়ে পর্যাপ্ত গবেষণাও হয় না।

সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জাকারিয়া। এ সময় আরও ছিলেন বিএফএসএ এর সদস্য মাহমুদুল কবির মুরাদ ও মো. ওয়াহিদুজ্জামান প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ড. রুহুল আমিন। তিনি এ সময় আরও বলেন, জাতিসংঘের এসডিজি গোলে খাদ্য নিরাপত্তা ও নিরাপদ খাবারের ব্যাপারে বলা হয়েছে। আমাদের দেশে গ্রামের মানুষ ২৩.৮ ও শহরে ৩৮ শতাংশ ফল খেয়ে থাকে। বিভাগ অনুযায়ী হিসাব করলে খাদ্যে ফল গ্রহণের এই হার বরিশালে ৪০.২, চট্টগ্রামে ১৭.৩, ঢাকায় ২৬.৫, খুলনায় ২৬.২, ময়মনসিংহে ৩৫.৮, রাজশাহীতে ৪৮.৯, রংপুরে ৬০.১ ও সিলেটে ৪৫.৭ শতাংশ।

এদিকে খাদ্যে গরুর মাংস ও পোলট্রি মাংস গ্রহণের হার গ্রামের মানুষের মধ্যে ১৫.৭ শতাংশ ও শহরে ৩৩.১ শতাংশ এবং ডিম গ্রহণের হার গ্রামের মানুষের মধ্যে ১০.১, শহরের মানুষ ১৮.৯ শতাংশ। তা ছাড়া দেশে ডিম, দুধ ও মাংসের উৎপাদন বেড়েছে। সেখানে ধনীদের এটি গ্রহণের হার ৭ শতাংশ ও গরিব মানুষের মাত্র ২ শতাংশ।

ফুড সেফটি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম সম্পর্কে তিনি বলেন, বিদেশে রপ্তানি করতে হলে নিরাপদ খাদ্য রপ্তানি করতে হবে। তা না হলে বিদেশিরা আমাদের পণ্য কিনবে না।

ড. রুহুল আমিন বলেন, তিনভাগে খাদ্য নিরাপত্তা নির্ভর করে। তার মধ্যে রয়েছে পাবলিক ফুড সেফটি, থার্ড পার্টি ও জাতীয় পর্যায়ে।

দেশে নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনের হার কতটুকু - এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কোনো খাদ্য কতটুকু নিরাপদ তা জানা যায় না। তবে ফল ও সবজিতে কীটনাশকের ব্যবহার বেশি।

কীটনাশক ব্যবহার সম্পর্কে বিএফএসএ এর চেয়ারম্যান জাকারিয়া বলেন, সবজিতে দেওয়া কীটনাশকের প্রভাব দূর করতে ১৫ মিনিট ভিজিয়ে রাখলে তা কিছুটা কমে। বেশি অনিরাপদ বা ক্ষতিকর খাদ্য এড়িয়ে চলতে হবে, যেমন কলিজা জাতীয় খাবার। এই খাবার পরিমাণে কত খেতে হবে।

নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের কার্যক্রম সম্পর্কে তিনি বলেন, সারাদেশে আমাদের ২৪৮ জন সদস্য কাজ করছে। এই সংখ্যা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া খাদ্যের নিরাপত্তা পরীক্ষায় বৈদেশিক অনুদানের মাধ্যমে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনায় আরও ৩টি ল্যাব তৈরি করা হবে। তাতে ৩১৮টি পদে লোকবল নিয়োগের জন্য সরকারের কাছে আবেদন করা হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, খাদ্য নমুনা পরীক্ষা করা নিয়মিত কাজ। প্রতিটি জেলা কার্যালয়কে মাসে কমপক্ষে ২টি নমুনা পাঠানোর নিয়ম রয়েছে। নিরাপদ শাক-সবজি ব্যবসায়ীদের হাতে আসলেও বাজারের পরিবেশের কারণে তা দূষণের কবলে পড়ে। এক্ষেত্রে বাজারগুলোর পরিবেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার ব্যাপারে কোন উদ্যোগ রয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি স্থানীয় সরকার ও পৌরসভার দায়িত্ব। সেখানে আমাদের কাজ করার সুযোগ কম।

বিএফএসএ এর চেয়ারম্যান জাকারিয়া আরও বলেন, খোলাবাজারে পণ্যের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা কঠিন। কেননা এটা তারা উৎপাদন করে না। তবে রেস্টুরেন্টে ভেজাল খাবার দেয় কিনা তা আমরা ধরে থাকি। আর ভেজাল পাওয়া গেলে কর্তৃপক্ষ কাউকে ছাড় দেয় না। তা ছাড়া রেস্টুরেন্ট বন্ধ করার ক্ষমতা আমাদের নেই। সেজন্য আদালতের ওপর নির্ভর করতে হয়।

এদিকে কুষ্টিয়ায় উৎপাদিত মসলায় চক পাউডারের উপস্থিতি পাওয়া গেছে বলে জানান তিনি। কয়েক মাস আগে একটি ব্র্যান্ডের কোমল পানীয়ের মধ্যে ক্ষতিকর উপাদান পাওয়া গেছে। জাকারিয়া বলেন, এর বিপরীতে আমরা ব্যবস্থা নেওয়ার পর তারা আদালতের দ্বারস্থ হয়ে অনুমোদন নিয়ে নিয়েছে।

এনএইচ/এএমএ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।