রাজবাড়ীতে সাড়া ফেলেছে মাটির বিকল্প কোকোপিট চারা
রাজবাড়ীতে সম্পূর্ণ মাটিবিহীন আধুনিক প্রযুক্তিতে সবজি ও ফলের চারা তৈরিতে ব্যাপক সারা ফেলেছে গ্রিন এগ্রো নার্সারির কোকোপিট। প্লাস্টিকের ট্রেতে নারকেলের ছোবড়া, জৈব সার ও অনুখাদ্যের সংমিশ্রণে মাত্র ১৫-৩০ দিনের মধ্যে বীজ থেকে তৈরি হচ্ছে উন্নত জাতের বেগুন, মরিচ, টমেটো, পেঁপে, বাঁধাকপি, ফুলকপি, লাউ, কলা, তরমুজসহ ২৯ ধরনের সবজি ও ফলের চারা।
নার্সারির শেডে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ এবং রোগ-জীবাণু ও মশা-মাছি প্রতিরোধের ব্যবস্থা থাকায় এসব চারায় রোগবালাই নাই বললেই চলে। তাছাড়া এসব চারা রোপণের পর দ্রুত বেড়ে ওঠা এবং ফলন ভালো হওয়ায় দিন দিন বাড়ছে চাহিদা। পাশাপাশি গুণগত মান ভালো হওয়ায় বর্তমানে রাজবাড়ীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি হচ্ছে গ্রিন এগ্রোর চারা। ফলে চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ করতে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ।
আধুনিক পদ্ধতিতে মাটির বিকল্প হিসেবে কোকোপিটে সম্পূর্ণ মাটিবিহীন উন্নত ও ভালো জাতের সবজি ও ফলের চারা সাধারণ কৃষক পর্যায়ে পৌঁছে দেওয়ার জন্য ২০২২ সালের প্রথমে রাজবাড়ীর সদর উপজেলার বাগমারা মোড় এলাকায় ১ বিঘা জমির ওপর নার্সারি গড়ে তোলেন কাজী মোর্শেদ আলম। বর্তমানে নার্সারিতে প্লাস্টিকের ট্রের মধ্যে নারকেলের ছোবড়া, জৈব সার ও অনুখাদ্যের সংমিশ্রণে পানি ও সামান্য ছত্রাকনাশকের মাধ্যমে প্রায় ২৯ ধরনের সবজি ও ফলের চারা তৈরি হচ্ছে। চারা তৈরি ও পরিচর্যায় কাজ করছেন ১২ জন শ্রমিক।
এদিকে বীজতলার তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে শেডের ওপরে পলিফ্লিম এবং রোগ-জীবাণু ও মশা-মাছি রোধে চারপাশে সাইড নেট দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। ফলে এ চারা যেমন রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন; তেমনই দ্রুত বেড়ে ওঠার পাশাপাশি ফলনও ভালো হয়। মাটিবিহীন আধুনিক প্রযুক্তিতে চারা তৈরির জন্য গ্রিন এগ্রো ছাড়াও জেলায় কয়েকটি নার্সারি আছে।
এলাকার চাষি জামাল শেখ বলেন, ‘আমাদের চারা ওঠানোর সময় শেকড় ছিঁড়ে যেতো। কিন্তু ট্রেতে দেওয়া চারার শেকড় ছেঁড়ে না। যে কারণে লাগানোর পর চারা মারা যায় না। রোগবালাইও খু্ব কম। তাছাড়া এ চারা দ্রুত বাড়ে। ফলনও ভালো হয়। আজ ২ বছর ধরে এই চারা দিয়ে চাষ করছি। ফলন ভালো পাচ্ছি। আমার ক্ষেতে ফলন ভালো দেখে আশেপাশের অনেকেই চারা কিনে নিয়ে চাষ করছেন।’
শের আলী নামে আরেক চাষি বলেন, ‘মাটির চারা অনেক মারা যায়। বিধায় আমি এ চারা নিতে আসছি। সময়মতো চারা পাওয়া যায় না। তাই এক সপ্তাহ আগে বিভিন্ন ধরনের ২ হাজার সবজির চারা অর্ডার দিয়ে আজ নিতে আসছি। এ চারায় ফলন ভালো হয় এবং গাছ দ্রুত বেড়ে ওঠে। এখন অনেকেই এখান থেকে চারা নিয়ে চাষাবাদ করছেন।’
চাষি খলিল মন্ডল, খন্দকার এনামুল হাসান ও ফরিদ বলেন, ‘মাটির বীজতলায় পোকামাকড় ও রোগবালাইয়ের আক্রমণের কারণে চারা ভালো হতো না। এমনকি রোপণের পরেও অনেক চারা মারা যেতো। কিন্তু কোকোপিট চারা রোপণের পর দ্রুত বাড়ে এবং ফলনও ভালো হয়। যে কারণে এখন কোকোপিটের চারা দিয়ে চাষাবাদ করছি। তাছাড়া মাটির বীজতলা তৈরির খরচ আর কোকোপিটের চারা কেনার খরচ একই। কিন্তু এই চারা কেনায় ঝামেলামুক্ত ও ভালো চারা পাওয়া যায়।’
নার্সারির ম্যানেজার রবিউল ইসলাম বলেন, ‘নার্সারিতে সম্পূর্ণ মাটিবিহীন আধুনিক পদ্ধতিতে উন্নত ও ভালো জাতের রোগবালাইমুক্ত ২৯ ধরনের সবিজ ও ফলের চারা উৎপাদন করা হচ্ছে। চারার গুণগত মান ভালো হওয়ায় রাজবাড়ীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অনলাইনের মাধ্যমে বিক্রি হচ্ছে। বিপুল সংখ্যক চারার চাহিদা থাকায় শেড বাড়ানোর পরিকল্পনা আছে। কোকোপিট, জৈব সার ও অনুখাদ্য দিয়ে সবজি ও ফলের চারা রকমভেদে ১৫-৩০ দিনের মধ্যে উৎপাদন হয়। এই চারা একটিও মারা যায় না।’
রাজবাড়ী সদর উপজেলা কৃষি অফিসার মো. জনি খান বলেন, ‘এ পদ্ধতির মাধ্যমে কৃষকেরা সারাবছর উন্নত চারা পাচ্ছেন। এ চারা রোগ-জীবাণু প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন। যার কারণে মাঠে রোপণের পর রোগবালাই কম হবে। মাটিবিহীন চারা তৈরি হলেও এ চারায় সব ধরনের উপাদান আছে। ফলে এতে কৃষকেরা স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে। এতে মাটির বীজতলার চেয়ে সময় ও খরচ সাশ্রয় হয়। এই শেডের চারা এখন দেশের অন্য জেলায়ও যাচ্ছে।’
এসইউ/জিকেএস