এআই প্রযুক্তিতে মাছ চাষ

উৎপাদন ৪ গুণ, গ্যাস ট্যাবলেটেও বাঁচবে ৭০ শতাংশ মাছ

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি ময়মনসিংহ
প্রকাশিত: ০৮:১৩ এএম, ১১ নভেম্বর ২০২৪

ময়মনসিংহের ত্রিশালে এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে মাছ উৎপাদন বাড়ানোর কৌশল উদ্ভাবন করেছে উপজেলা প্রশাসন। এতে রক্ষা হবে ফসলি জমি, মাছ উৎপাদন বাড়বে ৪ গুণ, পুকুরে গ্যাস ট্যাবলেট প্রয়োগ করলেও ৭০ শতাংশ মাছ বাঁচানো সম্ভব হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার কানিহরি ইউনিয়নের সরকারি ৫২ শতাংশ পুকুরে পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরু করা হয়। এরই মধ্যে এ কার্যক্রমে সফল হয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। ৫২ শতাংশ জমিতে এআই প্রযুক্তি উদ্ভাবনে ২৬ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। তবে চাষি পর্যায়ে ১ একর জমিতে এ পযুক্তি ব্যবহারে ৫ লাখ টাকা খরচ হতে পারে বলে জানিয়েছেন তারা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, পুকুরে নিয়মিত খাবার দেওয়া, সব ধরনের যত্ন নেওয়ার পরেও মাছের গ্রোথ আসছে না। বিক্রির সময় কাঙ্ক্ষিত উৎপাদন না পাওয়ায় মাছ চাষ করে লোকসানের মুখে পড়েন অনেক চাষি। এ লোকসান থেকে চাষিদের বাঁচাতে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে তৈরি করেছেন বিশেষ সেন্সর ও মোবাইল অ্যাপ, যা চলে আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্সের মাধ্যমে। এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে কম জায়গায় বেশি মাছ চাষ করেও সফল হয়েছেন তারা।

এআই প্রযুক্তিতে মাছ চাষ, উৎপাদন ৪ গুণ, গ্যাস ট্যাবলেটেও বাঁচবে ৭০ শতাংশ মাছ

এআই প্রযুক্তি সার্বক্ষণিক মাছ চাষের পুকুরে অক্সিজেনের পরিমাণ ঠিক আছে কি না, অ্যামোনিয়ার পরিমাণ বাড়লো কি না, কখন কী পরিমাণ খাবার দিতে হবে, পুকুরে গ্যাস ট্যাবলেট (মাছ মেরে ফেলার) দেওয়া হলেও এ প্রযুক্তির মাধ্যমে তাৎক্ষণিক প্রয়োজনীয় অক্সিজেন উৎপাদন করে ৭০ শতাংশ মাছ বাঁচানো সম্ভব। তবে এতে অক্সিজেন সিলিন্ডারের প্রয়োজন হয় না। এ প্রযুক্তি অটোমেটিক গ্যাস উৎপাদন করে পুকুরের পানিতে প্রয়োগ করে।

তারা জানান, পুকুরের স্বাস্থ্য সম্পর্কে ধারণা না থাকা, পুকুরে কী পরিমাণ অক্সিজেন প্রয়োজন, তা জানা না থাকা। যে কারণে নষ্ট হয় পুকুরের স্বাস্থ্য। এতে মাছ চাষে লোকসান গুনতে হয় চাষিদের। এ সমস্যা সমাধানে ১ বছর আগে উদ্যোগ নেয় ত্রিশাল উপজেলা প্রশাসন। একটি সরকারি পুকুরে স্থাপন করা হয় সেন্সর। সেন্সরের সাথে যুক্ত করে বানানো হয় একটি মোবাইল অ্যাপ।

পুকুরের চারদিকে রাখা হয় খাবার ছিটানোর মেশিন। অক্সিজেন সাপ্লাই বাড়ানোর জন্য পানির নিচে ও উপরে স্থাপন করা হয় যন্ত্র। এসবই পরিচালনা করে এআই প্রযুক্তি। পুকুরে যখন যা প্রয়োজন হয়, স্বয়ংক্রিয় ভাবে তা চালু হয়ে যায়। গ্রাফিক্সে নিয়মিত পাওয়া যায় পুকুরের স্বাস্থ্যের তথ্য। তাই দ্রুত নেওয়া যায় ব্যবস্থা। এতে হাতের কোনো প্রয়োজন নেই।

সূত্র জানায়, সাধারণত চাষের জন্য পুকুরের গভীরতা হয় ৫-৬ ফুট। কিন্তু এ পদ্ধতিতে পুকুরের গভীরতা ১৮ ফুট পর্যন্ত করা হয়। এতে অল্প জমিতে বেশি মাছ চাষ করা সম্ভব। প্রচলিত পদ্ধতিতে শতাংশে ১৫০-২০০টি পাঙাশ মাছ চাষ করা যায়। আর এ পদ্ধতিতে ১২০০ মাছ চাষ করা হয়। খাবারের পরিমাণও লাগে কম।

এ পদ্ধতিতে ৫৮ শতাংশ এ পুকুরে ৭২ হাজার পাঙাশ চাষ করা হয়েছে। পরীক্ষামূলক চাষ সফল হওয়ায় এখন প্রশিক্ষণ ও চাষি পর্যায়ে প্রযুক্তি ছড়িয়ে দিতে কাজ করছে উপজেলা প্রশাসন। স্থানীয় মৎস্য বিভাগ বলছে, মাছ চাষে এমন প্রযুক্তি ব্যবহার বিশ্বের বিভিন্ন দেশে হয়। দেশে এটি শুরু হলে উপকৃত হবেন চাষিরা। বাড়বে উৎপাদন ও মাছের গুণগতমান।

এআই প্রযুক্তিতে মাছ চাষ, উৎপাদন ৪ গুণ, গ্যাস ট্যাবলেটেও বাঁচবে ৭০ শতাংশ মাছ

ত্রিশাল উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সামসুজ্জামান মাসুম জাগো নিউজকে বলেন, ‘মাছ চাষে এআই প্রযুক্তি উদ্ভাবনের মূল উদ্দেশ্য অল্প জায়গায় কিভাবে ৩-৪ গুণ মাছ উৎপাদন করা যায়। এ প্রযুক্তির মাধ্যমে পুকুরে প্রয়োজনীয় সেন্সর লাগানো থাকে। সেন্সর থেকে জানা যায়, পুকুরে কী পরিমাণ অক্সিজেন, অস্বাভাবিক কিছু হয়েছে কি না, তাপমাত্রা প্যারামিটারের মাধ্যমে সংগ্রহ করে। পরে পুকুরে কখন কী প্রয়োজন, খাবারের প্রয়োজন আছে কি না, তাপমাত্রা কেমন আছে? তা সেন্সরগুলোর সাহায্যে অটোমেটিক জানা যায়। যা সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় ভাবে কাজ করে।’

কিশোরগঞ্জ ডিপ্লোমা ইনস্টিটিউটের মৎস্য ইনস্ট্রাক্টর রনি সাহা জাগো নিউজকে বলেন, ‘এআই প্রযুক্তি স্থাপনে ৫২ শতাংশ জমিতে ২৬ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এ প্রযুক্তির সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট ১০ লাখ টাকা ও বিভিন্ন ধরনের ডিভাইস আছে। এগুলো স্থাপনে ১৬ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। চাষি পর্যায়ে ১ একরের জন্য খরচ হবে ৫ লাখ টাকা। বাজারে যে বিষ (গ্যাস ট্যাবলেট) আছে, এগুলো পুকুরের অক্সিজেন কমিয়ে দেয় বা শূন্য করে দেয়। যে কারণে পুকুরের মাছগুলো মারা যায়। এ প্রযুক্তির ফলে সার্ভারে দেখাবে পুকুরের অক্সিজেন কমে যাচ্ছে এবং সার্ভার মেশিনগুলো অক্সিজেন বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য কাজ করবে। পরে অটোমেটিক অক্সিজেনের মাত্রা বাড়িয়ে দেবে। যা পুকুরে বাতাস তৈরি করবে এবং পানিতে অক্সিজেন প্রয়োগ করবে। আমাদের এখানে যে প্রযুক্তি আছে। তা দিয়ে প্রতি ঘণ্টা ৬৪ কেজি অক্সিজেন তৈরি করবে।’

ত্রিশাল উপজেলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জুয়েল আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা চাষি পর্যায়ে প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা নিচ্ছি। কৃষক পর্যায়ে আগ্রহী করতে প্রতি ইউনিয়নে একটি করে পুকুরে চাষের উদ্যোগ নিয়েছি। তবে এসব পুকুরে আমাদের লোকজন সার্বক্ষণিক খোঁজ-খবর রাখবে।’

মঞ্জুরুল ইসলাম/এসইউ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।