অসীমের ছাদ বাগান

শহরকেন্দ্রিক পরিবেশবান্ধব উদ্যোগ

মামুনূর রহমান হৃদয়
মামুনূর রহমান হৃদয় মামুনূর রহমান হৃদয় , ফিচার লেখক
প্রকাশিত: ০২:১৪ পিএম, ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪

রাজধানীর মহাখালীর বাসিন্দা অসীম সরকার। গাছপালার প্রতি তার গভীর ভালোবাসার পরিচয় দিয়েছেন অনন্য ছাদ বাগানের মাধ্যমে। নগরজীবনের কংক্রিটের মাঝে প্রকৃতির সান্নিধ্য খুঁজে পাওয়ার জন্য তার ছাদকে রূপান্তরিত করেছেন সবুজ মহাকাব্যে। তার ছাদ বাগান শুধু একটি ব্যক্তিগত শখ নয়, শহরকেন্দ্রিক পরিবেশবান্ধব উদ্যোগও বটে।

তিনি বলেন, ‘আমি আসলে ভাড়াটিয়া, বাড়িওয়ালা নই। তবে এই বাগানের মাধ্যমে আমি গাছপালার প্রতি আমার ভালোবাসা প্রকাশ করছি। গাছ মানুষের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা কেবল গাছ ও মানুষই জানে। গাছ আমাদের কার্বন-ডাই-অক্সাইড নেয় এবং অক্সিজেন দেয়। শহরের পরিবেশে অভ্যস্ত হতে কষ্ট হচ্ছিল, এজন্য আমি ছাদ বাগান শুরু করি।’

শহরকেন্দ্রিক পরিবেশবান্ধব উদ্যোগ

বাড়িওয়ালা বয়স্ক মানুষ হওয়ায় নিজে বাগান না করলেও অসীমকে বাগান করার অনুমতি দিয়েছেন। অসীম বলেন, ‘বাড়িওয়ালা নিজেও গাছপালা পছন্দ করেন। তাই আমাকে গাছপালা করার অনুমতি দেন এবং তিনি নিজেও এই গাছপালা উপভোগ করেন।’

অসীমের ছাদ বাগানে আছে নানা প্রকারের ওষুধি, ফলদ, বনজ গাছ এবং শাক-সবজি। এখানে পাওয়া যায় আতা, লেবু, করমচা, আম, কামরাঙা, আমলকি এবং সবজি হিসেবে সাজনা, করল্লা, কচুশাক, পুঁইশাক, তেলাকুচা, পালংশাক, বিলাতি ধনেপাতা। এ ছাড়া ওষুধি গাছের মধ্যে আছে নিম, ঘৃতকুমারী, মেহেদি এবং ফুলের মধ্যে বেলি, হাসনাহেনা, রঙ্গন, কাঠগোলাপ, নয়নতারা, ঘাসফুল ইত্যাদি। এসব গাছ তার পরিবারের খাদ্যের চাহিদা পূরণ করে। এমনকি প্রতিবেশীর সঙ্গে ভাগ করে নেওয়ার আনন্দ বাড়িয়ে দেয়।

শহরকেন্দ্রিক পরিবেশবান্ধব উদ্যোগ

অসীম শুধু গাছপালার প্রতি ভালোবাসাই দেখাননি, তিনি পাখি পালনেও মনোযোগী। তিনি বলেন, ‘পাখির ডাক আমাকে খুব আনন্দ দেয়। সকালবেলা ঘুঘু, কবুতর, বাজিগর পাখির ডাকে ঘুম ভাঙে; যা খুবই উপভোগ্য। প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষার্থে কিছু পাখি মাঝে মাঝে ছেড়ে দিই, যাতে অন্যরাও মিষ্টি পাখির ডাক শুনতে পারেন।’

অসীমের সন্তান জন্মের পূর্বেই তিনি সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছিলেন, তার সন্তানকে একটি ভালো পরিবেশ দেবেন। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে আমার সন্তান প্রতিদিন সকালে গাছের ফুল, ফল, পাতা নিয়ে খেলে। টিভি বা মোবাইলে কোনো আসক্তি নেই। সমাজের জন্য এটি অনেক বড় বার্তা। তিনি যোগ করেন, শহরের অন্য বাড়িতেও এমন প্রাকৃতিক পরিবেশ তৈরি করা গেলে বাচ্চাদের শারীরিক ও মানসিকভাবে ভীষণ উপকার হবে।’

অসীম মনে করেন, বর্তমান প্রজন্ম গাছপালা নিয়ে সচেতন এবং শহরের সৌন্দর্য বাড়াতে গাছ লাগানো ও দেওয়াল লিখন গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, ‘গাছ লাগানো ও দেওয়াল লিখন আমাদের শহরকে সুন্দর করে তুলেছে। শহরে আরও গাছ লাগানো গেলে এবং দেওয়ালে আরও সুন্দর চিত্রকর্ম আঁকা হলে আমাদের দেশ প্রাকৃতিকভাবে আরও সুন্দর হবে এবং জলবায়ু পরিবর্তনে সাহায্য করবে।’

শহরকেন্দ্রিক পরিবেশবান্ধব উদ্যোগ

তিনি শুধু ছাদ বাগানেই সীমাবদ্ধ থাকেননি, সড়কেও অজস্র গাছ লাগিয়েছেন। অসীম বলেন, ‘শহরের তাপমাত্রা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই আমরা যদি শহরের প্রতিটি রাস্তায় গাছ লাগাই তাহলে তাপমাত্রা কিছুটা হলেও কমবে। সিটি কর্পোরেশন আগে কিছু গাছ লাগালেও অধিকাংশ অযত্নে নষ্ট হওয়ার উপক্রম। তাই মহাখালী থেকে গুলশান পর্যন্ত ডিভাইডারে আমি অনেক গাছ রোপণ করেছি।’

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে অসীম বলেন, ‘আমার ছাদ বাগানটি ছোট। তাই আমি যখনই সময় পাবো, যেখানে মাটি পাবো গাছ লাগাবো। শহর বা গ্রাম, দেশ বা বিদেশ যেখানেই সম্ভব আমি গাছ লাগাবো। গাছ লাগানো আমার নেশায় পরিণত হয়েছে। গাছের প্রতি আমার ভালোবাসা এতটাই গভীর যে, তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়।

এসইউ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।