ঢাবি অধ্যাপকের ছাদ বাগানে ফল-সবজির সমারোহ

হাসান আলী
হাসান আলী হাসান আলী
প্রকাশিত: ১২:৫৪ পিএম, ১২ জুলাই ২০২৪

চারপাশে সুন্দরভাবে গুছিয়ে লাগানো হয়েছে নানা জাতের ফল-মূলের গাছ। আছে হরেক রকমের শাক, বাহারি সব সবজি। প্রথম দেখায় মনে হতে পারে, ফুল-ফল বা শাক-সবজির কোনো পরিপূর্ণ ক্ষেত। কিন্তু একটু ভালো করে খেয়াল করলেই কেটে যাবে ভ্রম। এটি কোনো সবজি ক্ষেত বা ফলের বাগান নয়। এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উত্তর ফুলার রোড আবাসিক এলাকার ৫৬ নাম্বার ভবনের ছাদ। দুজন মানুষের ভালোবাসা ও যত্নে তিলে তিলে গড়ে উঠেছে ছাদের এই সৌন্দর্য।

তারা আর কেউ নন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. শহীদুল ইসলাম এবং তার স্ত্রী নাসরিন ইসলাম। প্রতিদিন সকাল ও বিকেলে নিয়ম করে বাগানের যত্ন নেন নাসরিন ইসলাম। ক্লাসসহ নানা ব্যস্ততা থাকায় তেমন সময় না পেলেও সুযোগ পেলেই বাগানের যত্ন নেন ড. শহীদও। তারা মনে করেন, এই ছাদ বাগানে এলে যে প্রশান্তি কাজ করে; সেটি কোটি টাকায়ও কেনা যাবে না।

ঢাবি অধ্যাপকের ছাদ বাগানে ফল-সবজির সমারোহ

স্বামী-স্ত্রীর যত্নে গড়া বাগানে মৌসুমভেদে শাক-সবজি ও ফল-মূল হয়ে থাকে। তবে এখন তাদের বাগানে আছে বিভিন্ন প্রজাতির ফল। কাঁচা-পাকা কামড়াঙা, ড্রাগন ফল, ত্বিন ফল, করমচা, দেশি-বিদেশি পেয়ারা, জাম্বুরা, সফেদা, জামরুল, পেঁপে, লেবু, বরই, আলুবোখারা, আমড়া, জাম, আঙুর, বেল এবং অ্যাভোকাডো।

শাক-সবজির মধ্যে বর্তমানে আছে পুঁইশাক, পালং শাক, কলমি শাক, কচু শাক, চিচিঙা, মিষ্টি কুমড়া, ধুন্দল, দুই জাতের করলা, বেগুন, ঢ্যাঁড়শ, সজনে, দেশি ও বিদেশি মরিচ এবং ধনেপাতা। পাশাপাশি ওষুধি গাছের মধ্যে আছে পুদিনা পাতা, থানকুনি পাতা, ওরিগানো, মাশরুম, স্পারাগাস, জাত নিমসহ নাম না জানা বেশ কয়েক প্রজাতির গাছ। এতকিছুর মধ্যেও এ দম্পতির আছে কবুতর পালনের শখ। ছাদের এক কোণে রেখেছেন বিদেশি জাতের ৫টি কবুতর।

অধ্যাপক ড. শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘যখন এই বাসায় আসি; তখন ছাদে একটা দুইটা করে গাছ লাগানো শুরু করি। যখন দেখলাম এখানে যে ফলগুলো হচ্ছে; সেগুলো খুবই সুস্বাদু এবং যে সবজিগুলো হচ্ছে; সেগুলো খুবই ফ্রেশ এবং সম্পূর্ণ কেমিক্যালমুক্ত। তখন থেকেই মূলত স্থায়ীভাবে করার চিন্তা করি। অল্প অল্প করে শুরু করে আজকের এ অবস্থায় পৌঁছেছে।’

ঢাবি অধ্যাপকের ছাদ বাগানে ফল-সবজির সমারোহ

নাসরিন সুলতানা বলেন, ‘দীর্ঘদিন থেকেই আমার বাগানের শখ ছিল। আমি বেশিরভাগ গাছই বৃক্ষমেলা থেকে কিনেছি। তবে যখন যেখানে ভালো গাছ পেয়েছি; তখন সেখান থেকেই সংগ্রহ করেছি। প্রথমে একটি দুটি করে সংগ্রহ করলেও এখন আমি কলম করে নতুন চারা প্রস্তুত করি।’

সংসারের কাজের পাশাপাশি বাগানের দেখাশোনা করতে কোনো সমস্যা হয় কি না এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘বাগানের পরিচর্যা করাকে আমার কাছে কখনোই পেইনফুল মনে হয়নি। এখানে এলেই আমার আরও রিল্যাক্স ফিল হয়। আমার মন ভালো হয়ে যায়। খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে আমি এখানে দুই ঘণ্টা কাজ করি। বিকেলে আরও দুই ঘণ্টা কাজ করি। এতেই হয়ে যায়।’

ঢাবি অধ্যাপকের ছাদ বাগানে ফল-সবজির সমারোহ

ড. শহীদ ইসলাম বলেন, ‘এখানে গ্রীষ্মকালে এক ধরনের ফল-মূল হয় আবার শীতকালে হয় এক ধরনের। কিছু কিছু সারাবছরই হয়। এ মুহূর্তে ঢ্যাঁড়শ, বেগুন, চিচিঙা আছে। অনেক ধরনের শাক-সবজি আছে। ফলের মধ্যে ড্রাগন সবচেয়ে বেশি। আমরা কোথাও বেড়াতে গেলে নতুন গাছের চারা পেলে নিয়ে আসি। আমার স্ত্রী-ই মূলত দেখাশোনা করে। বাগানের পুরো কৃতিত্ব তাকেই দিতে চাই। যাদের সুযোগ এবং জায়গা আছে; তাদের জন্য পরামর্শ থাকবে, অবশ্যই এটি করবেন। এতে একদিকে ফ্রেশ শাক-সবজি পাবেন, অন্যরাও অনুপ্রাণিত হবেন।’

এমএইচএ/এসইউ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।