কোরাল মাছের প্রজনন পদ্ধতি
বাংলাদেশে কোরাল মাছ ‘ভেটকি মাছ’ নামেও পরিচিত। লোনা পানির এই মাছ পুষ্টি, স্বাদ ও বেশি দামের কারণে চাষিদের কাছে আকর্ষণীয়। বর্তমানে এই মাছের প্রচুর চাহিদা। প্রায় ৪৫ বছর আগে উপকূলীয় অঞ্চলে এবং স্বাদুপানির পুকুরে, নদীতে ও নদীর মোহনায় এ মাছের চাষাবাদ খাঁচার মাধ্যমে শুরু হয়। তাই জেনে নিন কোরাল মাছের প্রজনন পদ্ধতি।
প্রজনন পদ্ধতি
মিঠা পানিতে এবং অল্প লোনা পানিতে এরা দ্রুত বড় হয়ে ১ থেকে দেড় বছর বয়সে দেড়-আড়াই কেজি হয়ে প্রজননের সক্ষম হয়ে ওঠে। প্রজননের জন্য গভীর সমুদ্রে পাড়ি দেয়। এদের পুরুষ ও স্ত্রী মাছের মধ্যে প্রকারভেদ আছে। কিন্তু এরা উভয় লিঙ্গ গ্রোত্রের মধ্যে পড়ে। অর্থাৎ পুরুষ মাছ স্ত্রী মাছে এবং স্ত্রী মাছ পুরুষ মাছে পরিণত হতে পারে। সাধারণত পুরুষ মাছ আকারে ছোট ২-৩ কেজি ওজনের হয়ে থাকে। পুরুষ মাছ ৪ কেজি বা তার বেশি ওজন হয়ে গেলে স্ত্রী মাছে রূপান্তরিত হয়ে যায়। অগভীর সমুদ্র অঞ্চলের ৫-১১ মিটার গভীরে এদের প্রধান প্রজনন ক্ষেত্র।
কোরাল মাছের প্রধানত দুভাবে প্রজনন হয়ে থাকে-
প্রাকৃতিক প্রজনন
কোরালের প্রজনন ক্ষমতা বেশি। এরা বছরে ৪০ থেকে ৭০ লাখ ডিম দেয়। দ্রুত চলাচল করে এবং বেশি লবণাক্ততা সহিষ্ণু প্রজাতির মাছ। সারাবছর ডিম দিয়ে থাকে। এপ্রিল থেকে আগস্ট মাস এদের মূল প্রজননকাল। এ সময় এক সেন্টিমিটার আকারের অনেক পোনা ধরা পড়ে। এ মাছের দৈহিক বৃদ্ধি মিঠা পানিতে। অল্প লোনা পানিতে এমনকি নদী ও সাগরের মোহনায় হয় কিন্তু ডিম পাড়ার জন্য এরা মোহনার কাছাকাছি সমুদ্রে আসে।
বর্ষার শুরুতে পুরুষ মাছ স্ত্রী মাছের সঙ্গে মিলনের জন্য নদ-নদীর নিম্ন অববাহিকায় আসে। ভরা পূর্ণিমা এবং অমাবস্যার শুরুতে জোয়ারের পানি আসার সময় ৫-১০ কেজি ওজনের প্রতিটি স্ত্রী মাছ ২১ লাখ থেকে ৭১ লাখ পর্যন্ত ডিম পাড়ে। তারপর জোয়ারের পানিতে ভেসে ডিম এবং রেণু পোনা নদীর মোহনায় চলে আসে। রেণু পোনা মোহনা থেকে নদীর উচ্চ অববাহিকার দিকে আসে। পরে পূর্ণবয়স্ক অবস্থায় ডিম পাড়ার জন্য আবার সাগরের দিকে ফিরে যায়।
আরও পড়ুন
কৃত্রিম প্রজনন
প্রজনন ক্ষমতা বেশি হওয়ায় মাঝারি আকৃতির একটি হ্যাচারি পরিচালনার জন্য কমসংখ্যক ব্রুড মাছই যথেষ্ট। হ্যাচারি যৌন মিলনে সক্ষম পুরুষ (২ কেজি ওজন) ও স্ত্রী (৫-১০ কেজি ওজনের) মাছ ট্যাংকে ১ ঘনমিটার অথবা পুকুরে ০.৫ ঘনমিটার (সম্ভাব্য) রাখা হয়। প্রায় ৩০ পিপিটি লোনা পানি দিয়ে ৭০-৭৫% প্রায় পানি পরিবর্তন করতে হয়। কম দামি মাছ যেমন তেলাপিয়াকে সেখানে খাদ্য হিসেবে দেওয়া হয় দেহের ওজনের ৫-৬% হারে। গভীর পর্যবেক্ষণের মধ্যে রাখা হয় ও নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয় এবং প্রয়োজন অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
পরিপক্ক স্ত্রী মাছের ডিমের ব্যাস ৪৫০ মিলিমিটার হলেও পুরুষ মাছের স্মাম্প (মিন্ট) সহজে বের হলে তাদের ডিম পাড়ার ট্যাংকে স্থানান্তরিত করা হয় এবং স্ত্রী ও পুরুষ মাছের পেশীতে LHRHa হরমোন দেহের ওজনের কেজি প্রতি ৬০-৭০ গ্রাম হারে এককালীন প্রয়োগ করা হয়। স্ত্রী মাছ হরমোন প্রয়োগের ৩০-৩৫ ঘণ্টা পর ডিম পারে। নিষিক্ত ভাসমান ডিমগুলো বিভিন্ন পদ্ধতিতে সংগ্রহ করে ইনকিউবেশন ট্যাংকে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে প্রতি লিটারে প্রায় ৬০০-৯০০টি ডিম থাকে। ১৬-১৮ ঘণ্টা পর ডিম ফুটে ১.৪-১.৬ মিলিমিটার সাইজের রেণু বা লার্ভা বা ডিম পোনা বের হয়ে আসে।
এই রেণু বা লার্ভা বা ডিম পোনাগুলোকে নার্সিং ট্যাংকে প্রতি লিটার ঘনত্বে ১০-১৫টি রাখা হয়। তৃতীয় দিন থেকে এদের রটিফার খাওয়ানো হয় প্রায় ৯-১০দিন। যেখানে প্রতি লিটারে ৫-৬টি রটিফার থাকে। এরপর ১৫ দিন পর্যন্ত রটিফার ও আরটিমিয়া খাওয়ানো হয়। পরের ২০ দিন পর্যন্ত শুধু আরটিমিয়া নাউপ্পি খাওয়ানো হয় ও কিছু কিছু পাউডার ফিড (পাউডার ফিড প্রায় ৫০% প্রোটিন ও উচ্চ অ্যামাইনো অ্যাসিড প্রোফাইল সমৃদ্ধ হতে হয়) দিয়ে ফিডে অভ্যস্ত করা হয়। তারপর ০.৭-০.৮ সেন্টিমিটার সাইজের ধানি পোনাকে হ্যাচারিতে বা পুকুরের হাপায় নার্সারি খাদ্য খাইয়ে খাদ্য খাওয়ায় অভ্যস্ত করা হয় বা অনেকে মাছের মাংস খেতেও অভ্যস্ত করে থাকে। বিশেষ করে যারা পরে মাছ খাইয়ে অল্প ঘনত্বে করবে, অনেকটা প্রাকৃতিক নিয়মে চাষ করবে।
এসইউ/জিকেএস