তীব্র খরায় ঝরছে গুটি, শঙ্কায় লিচু চাষিরা
পাবনার ঈশ্বরদীতে প্রচণ্ড খরা ও তাপদাহে লিচুর গুটি ঝরে যাচ্ছে। এতে লিচুর ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন চাষিরা। দেশি লিচু হিসেবে পরিচিত মোজাফ্ফরপুরী জাতের লিচুর গুটি বেশি ঝরছে। পাশাপাশি বোম্বাই লিচুর গুটিও ঝরা শুরু হয়েছে।
রসালো ও সুস্বাদু লিচু উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত ঈশ্বরদীতে বৈশাখের মাঝামাঝিতে গাছে মুকুল আসে এবং চৈত্র মাসে মুকুল থেকে লিচুর সবুজ গুটি দেখা যায়। এখন লিচু গাছের দিকে তাকালেই চোখে পড়ে ছোট ছোট সবুজ গুটি। এ বছর প্রতিটি গাছে রেকর্ড পরিমাণ মুকুল এসেছিল। মুকুল থেকে গুটিও বেশ ভালো হয়েছে। তাই এবার চাষিরা লিচুর ভালো ফলনের আশায় বুক বেঁধেছিলেন। কিন্তু গত ২৮ মার্চ থেকে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত টানা ১০ দিনের প্রচণ্ড তাপদাহে লিচুর গুটি ঝরে পরতে শুরু করেছে। তাই লিচু চাষিদের স্বপ্নভঙ্গের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এ বছর ঈশ্বরদীতে ৩ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ হয়েছে। বৈশাখ মাসে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় প্রতিটি লিচু গাছে এবার ভালো মুকুল এসেছে। এবার লিচুর ভালো ফলনের আশা করছে কৃষি বিভাগ।
সরেজমিনে উপজেলার লিচুগ্রাম হিসেবে পরিচিত মিরকামারী, মানিকনগর, বক্তারপুর, জগন্নাথপুর, বাঁশেরবাদা, জয়নগর, সাহাপুর, আওতাপাড়া, চরসাহাপুর ও বাঁশেরবাদা ঢুকেই চোখে পড়ে সারি সারি লিচুর বাগান। লিচুর পাতার মাঝে সবুজ গুটি ঝুলতে দেখা যাচ্ছে। গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার লিচুর গুটি বেশি। প্রায় প্রতিটি গাছেই প্রচুর গুটি।
উপজেলার মানিকনগর গ্রামের লিচু চাষি জাহাঙ্গীর আলম জাগো নিউজকে বলেন, ‘এবার লিচু গাছে রেকর্ড পরিমাণ মুকুল এসেছিল। চৈত্রের খরতাপে লিচুর গুটি খুব ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এখন ৩৮-৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা। এখানকার কৃষকদের লিচু নিয়ে অনেক স্বপ্ন। তীব্র রোদ ও খরতাপের কারণে গুটি ঝরে পরতে শুরু করেছে। এভাবে গুটি ঝরে পড়া অব্যাহত থাকলে লিচু চাষিদের ভালো ফলনের স্বপ্নভঙ্গ হবে।’
আরও পড়ুন
একই গ্রামের লিচু চাষি ইয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘আমার লিচু বাগানে প্রচুর মুকুল এসেছিল। গুটিও ভালো হয়েছিল কিন্তু কয়েকদিন ধরে গুটি ঝরতে শুরু করেছে।’
জয়নগর গ্রামের লিচু চাষি ইকিবুল মালিথা বলেন, ‘কয়েকদিনের প্রচণ্ড খরার কারণে গাছের লিচুর গুটি সব ঝরে যাচ্ছে। রাতে ও সকালে পানি ও ওষুধ স্প্রে করেও গুটি ঝরা ঠেকানো যাচ্ছে না। দেশি লিচুর পাশাপাশি বোম্বাই লিচুর গুটিও ঝরা শুরু হয়েছে।’
একই গ্রামের কৃষক ময়েন উদ্দিন বলেন, ‘দিনে প্রচণ্ড গরম আবার রাতের আবহাওয়া ঠান্ডা থাকে। গরম-ঠান্ডার কারণে লিচুর গুটি ঝরে যাচ্ছে।’
মানিকনগর গ্রামের কীটনাশক ও সার ব্যবসায়ী মোস্তফা জামান নয়ন বলেন, ‘এবার প্রচণ্ড খরার কারণে লিচুর গুটি ঝরে পড়ছে। চাষিরা গুটি ঝরা রোধ করতে আমাদের কাছে এসে পরামর্শ চাইছেন। আমরা কৃষি কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে গুটি ঝরা রোধে চাষিদের কীটনাশক দিচ্ছি।’
উপজেলার সলিমপুর ইউনিয়নের কৃষি উপ-সহকারী কর্মকর্তা মো. সাইফুদ্দিন ইয়াহিয়া বলেন, ‘প্রচণ্ড খরতাপের কারণে লিচুর গুটি ঝরে পড়ছে। চাষিদের সঠিকভাবে লিচু বাগান পরিচর্যা করা ও প্রয়োজনমতো কীটনাশক ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।’
ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিতা সরকার বলেন, ‘অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে লিচুর গুটি ঝরে পড়ছে। এ জন্য লিচু চাষিদের নানা ধরনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।’
শেখ মহসীন/এসইউ/এএসএম