কলা চাষে ভাগ্য বদলেছে চরবাসীর

উপজেলা প্রতিনিধি উপজেলা প্রতিনিধি ঈশ্বরদী (পাবনা)
প্রকাশিত: ১২:৪৯ পিএম, ১২ মার্চ ২০২৪

এক সময়ের নিষ্ফলা শত শত হেক্টর চরভূমিতে এখন বাণিজ্যিকভাবে কলা চাষ করে ভাগ্য বদলেছেন পাবনার ঈশ্বরদীর চরাঞ্চলের মানুষ। চরবাসীর চিরচেনা কষ্টের জীবন এখন আর নেই। কলা চাষে চরের কৃষকদের যেমন দিন বদল হয়েছে; তেমনই হাজার হাজার দিনমজুরের কর্মসংস্থান হয়েছে।

পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত পদ্মা নদীর লক্ষ্মীকুন্ডা ইউনিয়নের শত শত হেক্টর জমি এক সময় ছিল বিশাল বালুচর। বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলে প্রাকৃতিকভাবে কাশবন আর বালু ছাড়া এক সময় অন্য কিছু চোখে পড়তো না। চাষিরা বিস্তীর্ণ বালুচরের কিছু অংশে চিনাবাদাম ও অন্য ফসল ফলালেও খুব বেশি লাভ হতো না। মাত্র ৫-৬ বছর আগেও এসব জমি অনাবাদি পড়ে থাকতো।

এখন পদ্মার চরজুড়ে সবুজের সমারোহ। বাণিজ্যিকভাবে এখানে চাষ হচ্ছে সবরি, সাগর, অমৃতসাগরসহ বিভিন্ন জাতের কলা। কলা চাষি, দিনমজুর, ব্যবসায়ী, গাড়ির চালক-শ্রমিকসহ শত শত মানুষের কর্মচাঞ্চল্যে মুখরিত থাকে। কলা চাষে বদলে গেছে চরাঞ্চলের চিত্র। স্বপ্নের মতো তাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ঘটেছে। কাঁচা বাড়ি বদলে এখন অনেকেই পাকা বাড়ি করেছেন। চাষিরা কিনেছেন ট্র্যাক্টরসহ আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি। লিজ নিয়ে কলা চাষ করা অনেকেই জমির মালিক হয়েছেন।

কলা চাষে ভাগ্য বদলেছে চরবাসীর

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় এবার ১৮৪০ হেক্টর জমিতে কলা চাষ হয়েছে। লক্ষ্মীকুন্ডা ইউনিয়নের পদ্মার চরাঞ্চলের গ্রামগুলোতে ১৮০০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। ইউনিয়নের কামালপুর, দাদাপুর, লক্ষ্মীকুন্ডা, কৈকুন্ডা, চরকুরুলিয়া, শান্তিনগর ও ডিগ্রীর চরজুড়ে কৃষকেরা অন্য ফসল না করে শুধু কলা চাষ করেছেন।

আরও পড়ুন

চরকুরুলিয়া গ্রামের কলা চাষি কামাল হোসেন বলেন, ‘শিক্ষাজীবন শেষে একটি বেসরকারি কলেজে কর্মরত ছিলাম। এমপিওভুক্ত না হওয়ায় গ্রামে ফিরে আসি। ভেবেছিলাম ব্যবসা করবো। এসে দেখলাম কলা চাষ করে অনেকেই লাভবান হচ্ছেন। আমিও কলা চাষে আগ্রহী হলাম। কলা চাষ আমাদের মতো শত শত মানুষের ভাগ্য বদলে দিয়েছে।’

কলা চাষে ভাগ্য বদলেছে চরবাসীর

কামালপুর চরের আক্কাস আলী বলেন, ‘৬০ বিঘা জমিতে চাষ করেছি। বিঘায় লাভ হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার টাকা। কলা চাষে এ চরের কৃষকদের ভাগ্য বদলে গেছে। এখানকার অসংখ্য কৃষক এখন আর্থিকভাবে স্বচ্ছল। চরে এখন কলা ছাড়া অন্য ফসল নেই বললেই চলে।’

ডিগ্রীচরের মোক্তার হোসেন ও মোতালেব হোসেন বলেন, ‘একটি জায়গায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি, সেটি হলো সারের দাম বৃদ্ধি। এছাড়া শিলাবৃষ্টি ও প্রবল ঝড় না হলে ফলন ভালো হয়। এখন কিছু গাছে ভাইরাস দেখা দিয়েছে। সেটিও নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি। কিছু প্রতিবন্ধকতা থাকলেও কলা চাষে কৃষকেরা লাভবান হচ্ছেন।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিতা সরকার বলেন, ‘পদ্মার চরাঞ্চলে কলার ভালো ফলন হয়েছে। কৃষকেরা লাভবান হওয়ায় প্রতি বছরই চাষ বাড়ছে। কলা চাষের জন্য কৃষকদের সব ধরনের পরামর্শ ও সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে কৃষি বিভাগ।’

শেখ মহসীন/এসইউ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।