নষ্ট হচ্ছে চাষির স্বপ্ন

কুয়াশায় উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি নীলফামারী
প্রকাশিত: ০৩:২০ পিএম, ১৮ জানুয়ারি ২০২৪

উত্তরের জেলা নীলফামারীতে গত এক সপ্তাহ ধরে বরফ ঝরা শিশির ও কুয়াশায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। সেই সাথে ঘন কুয়াশা আর প্রতিকূল আবহাওয়ায় আলু, ভুট্টা, সরিষা ও বোরো ধানের বীজসহ বিভিন্ন ফসল নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষকেরা। পচন রোধে ও বোরো ধানের বীজতলা রক্ষায় কৃষকেরা ছত্রাকনাশক কীটনাশক ছিটিয়ে আবাদ করার চেষ্টা করছেন। তবে মহামারি আকার ধারণ করায় এ সুযোগে ছত্রাকনাশক প্যাকেটের মূল্যের চেয়ে বেশি দাম নিচ্ছেন কীটনাশক ব্যবসায়ীরা।

সরেজমিনে জানা গেছে, জেলার বিভিন্ন এলাকার ফসলের মাঠ এখন আলু, ভুট্টা, সরিষা ও বোরো ধানের বীজসহ কচি সবুজ গাছে ভরে গেছে। জেলার অধিকাংশ বীজতলা নষ্টের পথে। কুয়াশা থেকে বাঁচতে বীজতলায় পলিথিন ব্যবহার করেও লাভ হচ্ছে না। কিন্তু তার আগেই যেভাবে আলুর জমিতে লেইট ব্লাইট (নাভিধসা) রোগে আক্রান্ত হয়েছে, তাতে শঙ্কায় রয়েছেন জেলার অনেক কৃষক। এ কারণে আলু, ভুট্টা, সরিষা ও বোরো ধানের বীজ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন চাষিরা।

দেখা গেছে, ঘন কুয়াশায় আলু গাছের সবুজ পাতা ও ডগায় পচন ধরেছে। এ রোগ একবার দেখা দিলে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এর প্রভাবে ক্ষেতের আবাদ উজাড় হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই ঘন কুয়াশা আর শীতের মধ্যে আলু গাছের রোগ দমন রোধে ছত্রাকনাশক ছিটিয়ে আবাদ করার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন কৃষকেরা। যে কোনো মূল্যে রোগ দমন করার জন্য পরামর্শ মতে তারা জমিতে স্প্রে করছেন।

আরও পড়ুন: শীতে ফসলের বড় ক্ষতির শঙ্কা, উৎপাদন কমছে ডিম-মুরগির 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, জেলায় এ বছর ২১ হাজার ৭১২ হেক্টর জমিতে আলু ও ২০ হেক্টর জমিতে বোরো বীজতলা, ২৬ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে ভুট্টাসহ ৬ হাজার ৭৭৭ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

উপজেলার পলাশবাড়ী ইউনিয়নের কৃষক নবীজুল ইসলাম নবীন জাগো নিউজকে বলেন, ‘কুয়াশা পড়ে বেশিরভাগ বীজতলা নষ্ট হয়ে গেছে। এবার চড়া দামে চারা কিনে ধানের আবাদ করা ছাড়া উপায় থাকবে না।’

জেলা সদর টুপামারী ইউনিয়নের ঈদ্রিস আলী জাগো নিউজকে বলেন, ‘এবার এক বিঘা জমিতে বোরো আবাদের জন্য বীজতলা তৈরি করেছিলাম। কিন্তু গত ৭-৮ দিন কুয়াশা আর শীতের তীব্রতায় বীজতলার করুণ অবস্থা। পলিথিন মোড়া দিয়েও কাজ হচ্ছে না।’

সুলতান আলী জাগো নিউজকে জানান, এবার তিনি পাঁচ বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছেন। অর্ধেক জমির আলু গাছই পচন রোগে আক্রান্ত। প্রতি বিঘা জমিতে যে পরিমাণ সার ও বীজ খরচ হয়েছে, এবার কুয়াশা ও শীতের কারণে সেই তুলনায় কীটনাশক ছিটাতে বেশি খরচ হচ্ছে। তা-ও ফল পাওয়া যাচ্ছে না।’

আরও পড়ুন: শীতে ধানের বীজতলার যত্ন নেওয়ার উপায় 

উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা প্রফুল্ল চন্দ্র রায় জাগো নিউজকে বলেন, ‘ঘন কুয়াশা ও তীব্র ঠান্ডায় কৃষকদের বোরো আবাদে বিলম্ব হচ্ছে। বীজতলা এখনো নষ্ট হওয়া শুরু করেনি। তবে তাপমাত্রা ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে থাকলে চারা খাদ্যগ্রহণ করতে না পেরে পাতা হলুদ হয়ে যায়। বীজতলা নষ্টের হাত থেকে বাঁচাতে কৃষকদের বাড়তি যত্ন ও ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া কয়েকদিনের মধ্যে আবহাওয়া উন্নতি হলে এ সমস্যা কেটে যাবে।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. এস এম আবু বক্কর সাইফুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় লেইট ব্লাইট বা নাভিধসা রোগ দেখা দিয়েছে। যেসব বীজতলা কুয়াশায় ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে; সেগুলোতে সেচ দিয়ে সারাদিন ভিজিয়ে রেখে সকালে পানি বের করে দিতে হবে। আমরা সব সময় কৃষকদের সাথেই আছি। মাঠপর্যায়ে কৃষকদের পাশে থেকে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।’

এসইউ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।