অনুমোদন পেলো নতুন দুই ধানের জাত

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১২:৫৫ এএম, ১০ জানুয়ারি ২০২৪

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) উদ্ভাবিত নতুন দুই জাতের উচ্চ ফলনশীল ধানের অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় বীজ বোর্ড। এগুলো হলো প্রিমিয়াম কোয়ালিটি ও উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ নতুন ধানের জাত ব্রি ধান১০৭ ও জিরা টাইপ জাত ব্রি ধান১০৮।

মঙ্গলবার (৯ জানুয়ারি) অনুষ্ঠিত জাতীয় বীজ বোর্ডের ১১১তম সভায় ধানের এসব জাত অনুমোদন করা হয়। এর ফলে ব্রি উদ্ভাবিত সর্বমোট ধানের জাতের সংখ্যা দাঁড়ালো ১১৫টি।

জাতীয় বীজ বোর্ডের ১১১তম সভায় সভাপতিত্ব করেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ওয়াহিদা আক্তার। এতে ব্রির মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীরসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

নতুন উদ্ভাবিত জাত ব্রি ধান১০৭, প্রিমিয়াম কোয়ালিটি সম্পন্ন উফশী বালাম জাতের বোরো ধান। এ জাতটি বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) কর্তৃক ২০১৫ সালে কৃষকের মাঠ থেকে সংগ্রহ করে বিশুদ্ধ লাইন বাছাইকরণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নির্বাচিত করা হয়। ব্রি গাজীপুরের গবেষণা মাঠে নির্বাচিত কৌলিক সারিটি ৩ বছর সফল ফলন পরীক্ষণের পর ২০১৯ সালে ব্রির আঞ্চলিক কার্যালয়গুলোর গবেষণা মাঠে ও ২০২০ সালে বাংলাদেশের বিভিন্ন কৃষি অঞ্চলে কৃষকের মাঠে পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয়।

২০২২ সালে বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সি কর্তৃক স্থাপিত প্রস্তাবিত জাতের ফলন পরীক্ষায় (পিডিটি) সন্তোষজনক হওয়ায় জাতীয় বীজ বোর্ডের মাঠ মূল্যায়ন দলের সুপারিশের ভিত্তিতে জাতটি ছাড়ার বিষয়ে আবেদন করা হয়। জাতীয় বীজ বোর্ডের সভায় সারাদেশে চাষের জন্য একটি প্রিমিয়াম কোয়ালিটির উচ্চ ফলনশীল বালাম জাতের বোরো ধান হিসেবে লতা বালামকে ব্রি ধান১০৭ হিসেবে অনুমোদন দিয়েছে।

jagonews24.com

ব্রি ধান১০৭ এর পূর্ণ বয়স্ক গাছের গড় উচ্চতা ১০৩ সেন্টিমিটার। ব্রি ধান১০৭ এর গড় জীবনকাল ১৪৩ দিন, যা ব্রি ধান৫০ এর সমান। এর ডিগ পাতা প্রশস্ত, খাড়া ও লম্বা এবং পাতার রং সবুজ। প্রতি হেক্টরে গড় ফলন ৮ দশমিক ১৯ টন। তবে এটি অনুকূল পরিবেশে উপযুক্ত পরিচর্যা পেলে হেক্টর প্রতি ৯ দশমিক ৫৭ টন পর্যন্ত ফলন দিতে সক্ষম। পিভিটি পরীক্ষায় দশটি অঞ্চলে ব্রি ধান১০৭ এর ফলন ব্রি ধান৫০ এর চেয়ে প্রায় ১৭ দশমিক ৬৭ শতাংশ বেশি পাওয়া যায়। এ ধানের গুণগতমান ভালো অর্থাৎ চালের আকৃতি অতি লম্বা চিকন (৭.৬ মিলিমিটার)।

এ ধানের চালে অ্যামাইলোজ এবং প্রোটিনের পরিমাণ যথাক্রমে ২৯ দশমিক ১ এবং ১০ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ এবং ভাত ঝরঝরে। ব্রি ধান১০৭ এর এক হাজারটি পুষ্ট ধানের ওজন ২৬ দশমিক ১ গ্রাম। এ ধানের দানার রং খড়ের মতো এবং চাল অতি চিকন ও সাদা। উচ্চ ফলনশীল, অতি চিকন চাল ও ভাত ঝরঝরে হওয়ায় বাংলাদেশের মানুষ এ জাত চাষাবাদে ব্যাপক আগ্রহী হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

নতুন অনুমোদিত ব্রি ধান১০৮ জাতটি বোরো মৌসুমে সারা দেশে চাষের জন্য অনুমোদন করা হয়েছে। এই জাতের গ্রেইন টাইপ জিরা ধানের মতো। প্রতিটি ছড়ায় অধিক সংখ্যক ধান (২৫০-২৭০টি) ঘনভাবে সন্নিবেশিত। আইআর ৮০৫৬১ এবং চীনা ইনব্রেড ৩২১ এর মধ্যে সংকরায়ণ পদ্ধতিতে বিআরএইচ১১-৯-১১-৪-৫বি উদ্ভাবিত হয়। ওই কৌলিক সারিটির গবেষণা কার্যক্রম ব্রিতে ২০১২ সালে শুরু হয়। এনএটিপি প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি), গাজীপুর এবং ব্রির আঞ্চলিক কার্যালয়গুলোর গবেষণা মাঠে এবং দেশের বিভিন্ন এলাকায় কৃষকের মাঠে নানান কৃষি পরিবেশে দীর্ঘ সময় ধরে এই নতুন কৌলিক সারিটির উপযোগিতা, ফলন ও অন্যান্য কাঙ্ক্ষিত বৈশিষ্ট্যসমূহের ব্যাপক ও নিবিড় পর্যবেক্ষণ পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে জাতীয় বীজ বোর্ডের ১১১তম সভায় এ কৌলিক সারিটি ব্রি ধান১০৮ নামে বোরো মৌসুমে সারা দেশে চাষাবাদের জন্য অবমুক্ত করা হয়।

ব্রি ধান১০৮ এর পূর্ণ বয়স্ক গাছের গড় উচ্চতা ১০২ সেন্টিমিটার। এর ডিগ পাতা খাড়া ও গাঢ় সবুজ। একই সঙ্গে হেলে পড়া সহিষ্ণু এবং জীবনকাল ১৪৯ থেকে ১৫১ দিন। এই জাতের গ্রেইন টাইপ জিরা ধানের মতো। জাতটি কৃষকদের ভালো বাজার মূল্য পাওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করে উদ্ভাবন করা হয়ছে। ব্রি ধান১০৮ এ উচ্চ ফলন ও ফাইন গ্রেইন এর সমন্বয় ঘটেছে। এ জাতটির প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এর প্রতিটি ছড়ায় অধিক সংখ্যক ধান (২৫০-২৭০ টি) ঘনভাবে সন্নিবেশিত এবং গড় ফলন প্রতি হেক্টরে ৮ দশমিক ৭ টন। ব্রি ধান১০৮ এর এক হাজার পুষ্ট ধানের ওজন প্রায় ১৬ দশমিক ৩ গ্রাম। চাল মাঝারি লম্বা ও চিকন যা জিরা চালের মতো। ভাত ঝরঝরে, রং সাদা এবং আমাইলোজ ও প্রোটিনের পরিমাণ ২৪ দশমিক ৫ এবং ৮ দশমিক ৮ শতাংশ।

এনএইচ/কেএসআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।