আশ্বিন মাসে শাক-সবজি চাষে করণীয়

জাগো নিউজ ডেস্ক
জাগো নিউজ ডেস্ক জাগো নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২:৪৯ পিএম, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩

ঋতুচক্রে শুরু হচ্ছে আশ্বিন মাস। এ সময়ে শাক-সবজি চাষ করা যেতে পারে। শাক-সবজি চাষের জন্য প্রথম ও প্রধান কাজের একটি হলো কোথায় কোন সবজি চাষ হবে তার জন্য উপযুক্ত মাটি তৈরি করা। দুই ভাগ জৈব সার (গোবর বা কম্পোস্ট বা ভার্মি কম্পোস্ট), এক ভাগ কোকোডাস্ট ও এক ভাগ উর্বর দোআঁশ মাটি মিশিয়ে চারার উপযোগী মাটি তৈরি করতে হবে। মাটি বেশ মিহি, ঝুরঝুরে ও সমতলভাবে তৈরি করতে হবে। পানি নিষ্কাশনের সুব্যবস্থা থাকতে হবে। পর্যাপ্ত জৈব সারের পাশাপাশি পরিমিত মাত্রায় রাসায়নিক সারও দিতে পারেন।

সবজি চারা উৎপাদনের জন্য উঁচু এবং আলো-বাতাস আসে এমন জায়গা নির্বাচন করতে হবে। এক মিটার চওড়া এবং জমির দৈর্ঘ অনুসারে লম্বা করে বীজতলা তৈরি করতে পারেন। এছাড়া প্যাকেটে বা ছোট টবে বা সীডলিংট্রেতে বীজ থেকে চারা তৈরি করে নিতে পারেন। রবি বা শীতকালীন সবজি, যেমন- বাঁধাকপি, ফুলকপি, লাউ, শিম, টমেটো, ওলকপি, শালগম, ব্রোকলি, লেটুস, আগাম জাতের ব্রাসেলস স্প্রাউট এবং বেগুনের উন্নত জাতের বীজ বুনতে পারেন। ছাদ বাগানে ড্রাম বা টবে বা বেডে ভালোভাবে মাটি তৈরি করে সরাসরি বীজ বপন করে লালশাক, পালংশাক, পুইশাক চাষ করতে পারেন।

লাউ ও শিমের বীজ বপনের জন্য ৭৫ সেন্টিমিটার চওড়া এবং ৬০ সেন্টিমিটার গভীর টব বা ড্রাম বা বেড ভালো। লাউ ও শিমের জন্য বেড বা টব বা কাটা ড্রামের অর্ধেক সমান আয়তন মাটির সঙ্গে এক বছরের পুরোনো শুকনো পচা গোবর সার, ১০০-১৫০ গ্রাম টিএসপি এবং ৫০-৭০ গ্রাম এমওপি সার মিশিয়ে মাটি তৈরি করে নেবেন। ৭-১০ দিন পর মাটি ওলটপালট করে প্রতি বেডে বা ড্রামে বা টবে ৪-৫টি সবল বীজ বপন করবেন। চারা গজানোর ১৫-২০ দিন পর ২ বার করে ১০০-১৫০ গ্রাম ইউরিয়া ও ৫০-৭০ গ্রাম এমওপি সার প্রয়োগ করবেন। যারা একদমই রাসায়নিক সার ব্যবহার করতে চান না, তারা চাইলে শুধু জৈব সার দিতে পারেন।

আরও পড়ুন: পাহাড়ে বিলেতি ধনে পাতা চাষে লাভবান কৃষক 

নার্সারি থেকে ৩০-৩৫ দিন বয়সী সুস্থ সবল চারা মাদা বা বেড বা ড্রামে বা টবে রোপণ করতে হবে। বেশি ঘন করে চারা লাগালে আলো, বাতাস, পানি ও মাটির পুষ্টি পেতে প্রতিযোগিতা তৈরি হয়। তাই প্রত্যেকটি চারা সমান নির্দিষ্ট দূরত্বে লাগাতে হবে। লাউ, শিম, বরবটি জাতীয় লতানো সবজির চারা লাগানোর পর গাছগুলো বড় হতে থাকলে মাচা তৈরি করে দেবেন। লতানো সবজির দৈহিক বৃদ্ধি যত বেশি হয়, তার ফুল-ফল ধারণ ক্ষমতা তত কম হয়। তাই ১৫-২০% লতা-পাতা কেটে দিতে হবে। তাহলে গাছে দ্রুত ফুল ও ফল ধরবে। লাউয়ের শতভাগ পরাগায়ন ও বেশি ফলন নিশ্চিত করতে হাতপরাগায়ন অপরিহার্য। গাছে ফুল ধরা শুরু হলে প্রতিদিন ভোরবেলা হাতপরাগায়ন নিশ্চিত করলে ফলন অনেক বেড়ে যাবে।

অনেকেই ছাদ বাগানে আলু চাষ করতে পছন্দ করেন। আলু চাষের জন্য বিশেষভাবে মাটি তৈরি না করে পূর্ববর্তী মাসের ফসল উঠিয়ে সেই মাটিতেই চাষ করতে পারেন। উন্নত জাতের বারি সরিষা-১৪ চাষ করতে পারেন। মাসের শেষের দিকে মাটিতে বীজ ছিটিয়ে দেবেন। বিভিন্ন প্রকার শাক, যেমন- মুলাশাক, লালশাক, পালংশাক, ডাঁটাশাক ইত্যাদি প্রায় সব ধরনের মাটিতে সহজেই চাষ করতে পারেন। বেড বা টবের মাটিতে শাকের বীজ ছিটিয়ে দেওয়ার পর একটি জাল বা মশারি দিয়ে বেড বা টব ঢেকে দেবেন। কারণ অনেক সময় পাখি এসে বীজ ও অঙ্কুর খেয়ে ফসলের ক্ষতি করতে পারে।

পূর্ববর্তী মাসের সবজি বা ফসল ফসল সংগ্রহ করার পর বীজ সংরক্ষণ করতে পারেন। কাঁচা বাজারে মসলা জাতীয় ফসল রসুন, পিঁয়াজের দাম দিন দিন বেড়েই চলেছে। তারপরও দৈনন্দিন রান্নায় এর প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। ফলে তা উপলব্ধি করেও কিনতে হয়। ছাদ বাগানে এখনই সময় রসুন ও পিঁয়াজের বীজ লাগিয়ে চারা করার। যেন সারাবছর নিজের উৎপাদিত ফসল থেকেই চাহিদা মেটাতে পারেন।

আরও পড়ুন: পেঁপে চাষে লাভবান মিরসরাইয়ের আব্দুল মান্নান 

মনে রাখবেন, চারাকে ভাইরাস বা ব্যাক্টেরিয়া বা ছত্রাকজনিত রোগ থেকে রক্ষার জন্য চারা লাগানোর আগেই মাটি শোধন করতে হবে। চারা গজানোর পর ‘গোড়া পচা’ রোগ দেখা দিলে বীজতলায় পানির পরিমাণ কমাতে হবে। দ্রুত পানি নিষ্কাশন করা বা শুকনো বালি বা ছাই ছিটিয়ে দিয়ে আর্দ্রতা অর্থাৎ পানির পরিমাণ কমানো যেতে পারে। একই সাথে ডাইথেন এম-৪৫ অথবা কপার অক্সিক্লোরাইড প্রয়োগ করে রোগের বৃদ্ধি রোধ করা যায়।

যারা বেডে বা ড্রামে সবুজ সার ব্যবহার করেন, তারা মাটির সঙ্গে ভালোভাবে মিশিয়ে, মাটিতে মেশানোর ৭-১০ দিন পর চারা রোপণ করতে পারেন। সবজি ফসল ২-৩ দিনের বেশি সময়ের জন্য জলাবদ্ধতা মোটেই সহ্য করতে পারে না। তাই বেশি বৃষ্টিপাতের কারণে গাছের গোড়ার পানি নিয়মিত নিষ্কাশন করতে হবে।

এ মাসের শেষে তাপমাত্রা হ্রাস পায় ও শুষ্কতা বাড়ে অর্থাৎ আর্দ্রতা কমতে থাকে। তাই গাছের গোড়ার আগাছা নিড়িয়ে সার প্রয়োগ করতে হবে। গাছের গোড়ায় মাটি তুলে দিতে হবে। সঠিকভাবে আগাছা ব্যবস্থাপনা কৌশল জানা থাকলে ফলন অনেকাংশে বৃদ্ধি করা সম্ভব। জৈব উপায়ে আগাছা নির্মূল করা যায়। আগাছানাশকের সঠিক মাত্রা বিধি মেনে প্রয়োগ করতে হবে। সরাসরি রোদ ছাড়া ভোরে অথবা সন্ধ্যায় গাছে পানি এবং কীটনাশক প্রয়োগ করা উচিত।

সূত্র: গ্রিনিকালচার

এসইউ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।