যে কারণে হারিয়ে যাচ্ছে মেঘহও মাছরাঙা

মামুনূর রহমান হৃদয়
মামুনূর রহমান হৃদয় মামুনূর রহমান হৃদয় , ফিচার লেখক
প্রকাশিত: ০৮:১৫ এএম, ২৮ আগস্ট ২০২৩

বর্ষাকালের ঘটনা। ছুটিতে গ্রামের বাড়ি গিয়েছি। বাড়ির পাশেই বিশাল দীঘি। সবাই ডাকে রত্না দীঘি বলে। ভোরবেলা দীঘির পাশে দাঁড়িয়ে মনটা ভালো হয়ে গেল। সকালের মিষ্টি বাতাস গায়ে দোলা দিতে লাগল। হঠাৎ তীক্ষ্ণ কণ্ঠের ক্রেরক ক্রেরক শব্দ। তাকিয়ে দেখি লম্বা ঠোঁটের একটি পাখি। মাছরাঙা। সঙ্গে সঙ্গে পানিতে শব্দ হলো। তাকিয়ে দেখি নীলচে-সবুজ পাখিটি ছোঁ মেরে মুখে মাছ নিয়ে গাছের ডালে বসেছে।

মাছ মুখে নিয়েই শিকারের খুশিতে আরেকবার ডাকল। এরপর কোথায় যেন উড়ে চলে গেল। তবে নীলচে-সবুজ পাখিটি ছাড়াও আরেকটি পাখি সেখানে ছিল, যার ঠোঁটও বেশ মোটা। তবে দেখতে অনেকটা কবুতরের মতো। আগ্রহ জন্মাতে আমি মাছরাঙা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চেষ্টা করি।

আমাদের দেশে নানা প্রজাতির পাখি আছে। এর মধ্যে চোখ জুড়ানো সুন্দর পাখি মাছরাঙা। মাছরাঙা সচরাচর মাছ শিকার করে। বিভিন্ন জলাধার, পুকুর, বিল-ঝিলের পাশে গাছের ডালে মাছরাঙাকে বসে থাকতে দেখা যায়। গাছের ডালে ওৎ পেতে থাকে কখন মাছ পানির উপরিভাগে উঠবে, কখন সে ‘ছো’ মেরে মাছ ধরবে।

আরও পড়ুন: বৃষ্টির পানি পান করে যে পাখি 

মাছরাঙার ইংরেজি নাম ‘কিংফিশার’, বৈজ্ঞানিক নাম ‘আলসেডো এথিস’। মাছরাঙা দেখতে ক্ষুদে হলেও এরা মানুষের মতো মাছ শিকার করতে পারদর্শী। পৃথিবীজুড়ে ৯৪ প্রজাতির মাছরাঙা আছে। তার মধ্যে বাংলাদেশে ১২ প্রজাতির মাছরাঙার দেখা মেলে। তবে সেটি খুবই কম।

দেখার ভেতর তুলনামূলক বেশি চোখে পড়ে ছোট নীল মাছরাঙা। মাছরাঙার মূল আকর্ষণ ঠোঁট ও পা। ঠোঁট ও পা দিয়ে এদের সহজেই শনাক্ত করা যায়। মাছরাঙার ঠোঁট তুলনামূলক বড় ও বেশ মোটা। পা খুব খাটো। নীল মাছরাঙা লম্বায় প্রায় ১৮ সেন্টিমিটার। গায়ের ওপরের পালক উজ্জ্বল নীল, শরীরের কিনারে ও ডানায় সবুজের ছোঁয়া। নীল মাছরাঙার মাথায় কালচে নীল রঙের টানাটানা দাগ। পায়ের রং লাল।

তবে বিপন্ন প্রজাতির মাছরাঙার ভেতর মেঘহও মাছরাঙা অন্যতম। এর বৈজ্ঞানিক নাম ‘হ্যালসিয়ন ক্যাপেনসিস’। পাখিটি আকারে অনেকটা কবুতরের মতো। এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য লম্বা লাল রঙের চঞ্চু। মাথার রং বাদামি, ডানা সবুজ-নীল রঙের। ঘাড় ও শরীরের নিচের অংশের রং হলদে বাদামি। সচরাচর মাছ, ব্যাঙ, কাঁকড়া ইত্যাদি জলজ ছোট প্রাণী খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে মেঘহও মাছরাঙা। মাঝে মাঝে কিছু ছোট পাখির ডিমও খায়।

আরও পড়ুন: জাতীয় পাখি দোয়েল কি বিলুপ্তির পথে? 

একা বা জোড়াভাবে পাখিটি নদী, বিল-ঝিল ও পুকুরের আশপাশে ঘুরে বেড়ায়। বৈদ্যুতিক তার বা শুকনো ডালের ওপর শিকারের সন্ধানে অপেক্ষা করে। শিকারের কৌশল অন্য মাছরাঙার মতোই। এরা ‘ক্যা ক্যা ক্যা’ করে ডাকে। জানুয়ারি-জুলাইয়ের ভেতর ঘর বানায়। নিরাপদ হলে একই স্থানে বছরের পর বছর থাকে। বাসা অন্য জাতের মতোই। নদীর তীরে বা গাছের গুঁড়িতে গর্ত করে বাসা বানায়। এছাড়া উঁইয়ের ঢিবি, অন্য পাখির খোড়া গর্ত কিংবা গাছের পচা-গুঁড়ির ফোকরেও বাসা বাঁধে। বর্ষা আসার ঠিক আগে ডিম পাড়ে। একসঙ্গে পাঁচ থেকে সাতটি। দেখতে চকচকে সাদা।

ভারত ও বাংলাদেশে এ পাখির দেখা মেলে। তবে শুষ্ক অঞ্চলে থাকে না। দুঃখের বিষয় আমাদের দেশের খাল-বিল কমার সঙ্গে সঙ্গে ধীরে ধীরে কমছে মেঘহও মাছরাঙার সংখ্যাও। বিলুপ্ত হচ্ছে অন্য শিকারি মাছরাঙাও।

এসইউ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।