বস্তায় আদা চাষ করে ঘুরে দাঁড়াতে চান শিক্ষক রুবেল

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি লালমনিরহাট
প্রকাশিত: ১২:১৪ পিএম, ১১ আগস্ট ২০২৩

লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলায় শিক্ষকতার পাশাপাশি কাঠের গুঁড়া, মাটি ও পরিত্যক্ত বস্তা সংগ্রহ করে প্রায় ১ একর জমিতে আদা চাষ করে বাড়তি আয়ের স্বপ্ন দেখছেন শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাক রুবেল (৩৩)। তার আদা চাষে উপজেলায় ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। আদা চাষেই লাভবান হয়ে ঘুরে দাঁড়াতে চান ওই শিক্ষক।

জানা গেছে, আব্দুর রাজ্জাক স্কুল শেষে অবসর সময়কে কীভাবে কাজে লাগানো যায়, বাড়ির পাশে সুপারি বাগানে বাড়তি ফসল ফলানো যায় কি না, তা নিয়ে ভাবতে থাকেন। পরে ইউটিউব ও স্থানীয় কৃষি অফিসের পরামর্শ নিয়ে সুপারি বাগানে গাছের ফাঁকে ফাঁকে ১ একর জমিতে বস্তায় আদা চাষের সিদ্ধান্ত নেন। এরপর কাঠের গুঁড়া ও মাটি সংগ্রহ করেন ৫ হাজার ৫০০ বস্তায়। বাজার থেকে দেশি আদার বীজ সংগ্রহ করে তা লাগাতে শুরু করেন। বর্তমানে আদার গাছ সুন্দর হয়েছে। বাম্পার ফলনের আশা করছেন তিনি।

আদার ভালো ফলন, বাজার চাহিদা ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় প্রতি আদা গাছের বস্তা থেকে ভালো টাকা আয় করা সম্ভব। ব্যতিক্রম পদ্ধতিতে আদা চাষ করায় বিভিন্ন এলাকার মানুষ তার বাগান দেখতে আসেন। স্কুলশিক্ষক আব্দুর রাজ্জাক রুবেল লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার টংভাঙ্গা ইউনিয়নের পশ্চিম বেজগ্রামের ইসাহাক আলীর ছেলে। সে ওই এলাকার আলহাজ সমসের উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। পাশাপাশি জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ শিক্ষক নির্বাচিত হয়েছেন।

jagonews24

আরও পড়ুন: মরিচ গাছের যত্ন জানালো কৃষি তথ্য সার্ভিস 

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, আদা পাইকারি ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। খুচরা বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা। বাজারে দেশি আদার প্রচুর চাহিদা রয়েছে।

আব্দুর রাজ্জাক রুবেল বলেন, ‘প্রথমে বেলে-দোআঁশ মাটি সংগ্রহ করে ব্লিচিং পাউডার ও ডলোচুন দিয়ে পরিষ্কার করে নেওয়া হয়। তারপর কিছুদিন ফেলে রেখে মাটির সঙ্গে গোবর, কাঠের গুঁড়া ও রাসানয়িক সার মিশ্রণ করে ১০-১২ দিন রাখা হয়। এরপর বস্তায় মাটি ভর্তি করে সুপারি গাছের ফাঁকে ফাঁকে রেখে আদার বীজ রোপণ করা হয়। ১ একর জমিতে প্রায় ৫ হাজার ৫০০ বস্তায় আদা চাষ করি। সব মিলে প্রতি বস্তায় খরচ হয় প্রায় ৪০ টাকা। প্রতি বস্তায় ৭০০ গ্রাম থেকে ১২০০ গ্রাম পর্যন্ত আদার ফলন হতে পারে। এতে মোট ২ লাখ টাকা খরচের বিপরীতে প্রায় ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা আয় করার সম্ভাবনা রয়েছে।’

হাতীবান্ধার সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মশিউর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাক সুপারি বাগানের পতিত জমিতে বস্তায় আদা চাষ করেছেন। সুপারি বাগানের আধো রোদ আধো ছায়ায় আদা খুব ভালো জন্মে। একই জমিতে বেশি ফসল হয়। কৃষকরা দ্বিগুণ লাভবান হন।’

jagonews24

আরও পড়ুন: টবে মরিচ চাষ করার নিয়ম 

হাতীবান্ধা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুমন মিয়া বলেন, ‘আমাদের কৃষি অফিস থেকে তাকে বিভিন্নভাবে পরামর্শ ও সহযোগিতা করা হচ্ছে। আশা রাখছি তিনি আদা চাষে শতভাগ সফল ও লাভবান হবেন।’

লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ হামিদুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘আব্দুর রাজ্জাক শিক্ষকতার পাশাপাশি বস্তায় আদা চাষ করে লাভবান হচ্ছেন। তার আদা চাষের সফলতা দেখে অনেকেই আগ্রহ প্রকাশ করছেন। আশা করি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে পতিত জমি আর থাকবে না। জেলায় পতিত জমিগুলোতে বিভিন্ন ধরনের চাষাবাদ করার জন্য কৃষকদের উৎসাহিত করা হচ্ছে।’

রবিউল হাসান/এসইউ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।