ব্রি’র ৩ জাতের ধান চাষে কৃষকদের মুখে হাসি

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ১২:৫৩ পিএম, ০২ মে ২০২৩

গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার মুক্তারপুর ইউনিয়নের ধনপুর এলাকার কৃষক মো. আলম। তিনি ব্রি ধান-৯২ চাষ করে প্রতি শতাংশে পেয়েছেন এক মণ করে ধান। যা গত ৬০ বছরে নানা জাতের ধান চাষ করেও ফলাতে পারেননি। বঙ্গবন্ধু ধান-১০০, ব্রি ধান-৮৯ এবং ব্রি ধান-৯২ জাতের চাল চিকন। এ জাতের ধান চাষে পানি কম লাগে, কীটনাশক লাগে না বললেই চলে। ফলনও অনেক বেশি হয়। এ বছর তিনি এ জাতের ধান চাষ করে বাম্পার ফলন পেয়েছেন।

সোমবার বিকেলে কালীগঞ্জ উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নে রাইস ফার্মিং সিস্টেম বিভাগের উদ্যোগে ব্রি উদ্ভাবিত নতুন জাতের ধান ব্রি ধান-৮৯, ৯২ এবং বঙ্গবন্ধু ধান-১০০ এর ফসল কর্তন ও মাঠ দিবসে কৃষকরা এ কথা জানান। এসময় ব্রি’র মহাপরিচালক মো. শাহজাহান কবীর এবং ব্রি’র বিজ্ঞানীরা উপস্থিত ছিলেন।

পরে ব্রি’র মহাপরিচালক মো. শাহজাহান কবীর জানান, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) উদ্ভাবিত বঙ্গবন্ধু ধান-১০০ চাষ করে বিগত সময়ে উদ্ভাবিত অনেক ধানের চেয়ে দেড়গুণ বেশি ফলন পাচ্ছেন কৃষকরা। প্রতি শতাংশে কৃষকরা প্রায় এক মণ করে ধান ঘরে তুলেছেন। এছাড়াও ব্রি ধান-৮৯ ও ব্রি ধান-৯২ এর ফলনও প্রায় একই রকম পাচ্ছেন।

jagonews24

আরও পড়ুন: ব্লাস্ট রোগে নষ্ট আগাম জাতের ব্রি-ধান ২৮

তিন জাতের নতুন এসব ধান চাষ করে কৃষকরা অভূতপূর্ব ফলন পেয়েছেন। ৩৩ শতকে ফলন পেয়েছেন ৩৩ মণ অর্থাৎ শতকে এক মণ ফলন হয়েছে।

বিকেলে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা ধনপুর এলাকায় স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় মিলিত হন। এসময় কৃষকরা তিন জাতের ধান চাষ করে তাদের বেশি ফসল ফলানোর অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন।

রাইস ফার্মিং সিস্টেম বিভাগের প্রধান মো. ইব্রাহীমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কৃষক সমাবেশে ব্রি মহাপরিচালক ছাড়াও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক প্রশাসন মো. আব্দুল লতিফ, ব্রি বিজ্ঞানী সমিতির সভাপতি ড. আমিনা খাতুন, কালীগঞ্জ উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা ফারজানা তাসলিম, ব্রি’র রাইস ফার্মিং সিস্টেম বিভাগের সিনিয়র বিজ্ঞানী ড. খায়রুল কায়েস, এবিএম জামিউল ইসলাম ও বীর জাহাঙ্গীর সিরাজী।

ব্রি’র পরিচালক প্রশাসন বিজ্ঞানী ড. মো. আব্দুল লতিফ বলেন, ‘ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত নতুন জাতগুলোর ফলন আগের জনপ্রিয় জাত ব্রি ধান-২৮ ও ২৯ এর তুলনায় অনেক বেশি। এগুলো যদি ভালো পরিচর্যা করা যায়, তাহলে অন্তত অনেক ধানের চেয়ে প্রায় দেড়গুণ বেশি ফলন পাওয়া সম্ভব।’

jagonews24

আরও পড়ুন: বৃষ্টিপাতের জন্য বিশেষ কৃষি আবহাওয়া পরামর্শ

ব্রি’র মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীর বলেন, ‘নতুন এসব জাতের ধানের ফলন বেশি, কম সময়ে পাকে ও রোগ বালাই কম। তাই চাষিরা এ ধান চাষে আকৃষ্ট ও খুব লাভবান হচ্ছেন। এসব ধান প্রতি বিঘায় ৩০-৩২ মণ উৎপন্ন হয়। অন্য জাতের ধানের ফলন যেখানে ২০ মণের মতো হয়। প্রতি বছর আমাদের জনসংখ্যার সাথে ২০-২২ লাখ লোক যোগ হচ্ছে। ১৭ কোটি জনসংখ্যার এ দেশে খাবারের নিশ্চয়তা দিতে হলে অবশ্যই ব্রি উদ্ভাবিত নতুন জাতের ধানগুলো চাষ করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।’

স্থানীয় কৃষক আলতাফ হোসেন বলেন, ‘আগে বিদেশ ছিলাম। কৃষি কাজ করতাম না। কৃষি কাজ অলাভজনক ভাবতাম। কিন্তু ব্রি ধান-৮৯ ও ব্রি ধান-৯২ এবং বঙ্গবন্ধু ধান-১০০ আমার ধারণা বদলে দিয়েছে। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আর বিদেশ নয়; দেশেই কৃষি কাজ করবো। নতুন জাতের ধান চাষ করবো। কৃষি এখন আগের তুলনায় বেশি লাভজনক।’

মো. আমিনুল ইসলাম/এসইউ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।