বৈশাখে কৃষকের করণীয়

জাগো নিউজ ডেস্ক
জাগো নিউজ ডেস্ক জাগো নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৮:৪৭ এএম, ০১ মে ২০২৩

মধ্য এপ্রিল থেকে মধ্য মে পর্যন্ত বৈশাখ মাস। নতুন আবহ ও প্রত্যাশার মাঝে কৃষকরা ফিরে তাকান ফসলের মাঠে। এ মাস থেকেই শুরু করেন বছরের কৃষিকাজের পরিকল্পনা। তাই জেনে নেওয়া যাক বৈশাখে কৃষকের করণীয় বিষয়গুলো সম্পর্কে—

বোরো ধান
যাদের বোরো ধানের চারার আনুমানিক বয়স ৫০ থেকে ৫৫ দিন; তাদের ইউরিয়া সারের শেষ কিস্তি সম্পন্ন করতে হবে। তবে গুটি ইউরিয়া ব্যবহার করলে এর প্রয়োজন নেই। জমিতে আগাছা পরিষ্কার করা, সেচ দেওয়া, বালাই দমন এসব কাজ সঠিকভাবে করতে হবে। ধানের থোড় আসা শুরু হলে জমিতে পানির পরিমাণ দ্বিগুণ করতে হবে এবং দানা শক্ত হলে জমি থেকে পানি বের করে দিতে হবে।

এ সময় সাধারণত মাজরা পোকা, বাদামি ঘাসফড়িং, সবুজ পাতা ফড়িং, গান্ধি পোকা, লেদা পোকা, ছাতরা পোকা, শীষকাটা লেদা পোকা, পাতা মোড়ানো পোকার আক্রমণ দেখা যায়। তাই পোকা দমনের জন্য নিয়মিত ক্ষেত দেখে রাখতে হবে। যথোপযুক্ত বালাই ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে আক্রমণ রোধ করতে হবে।

আরও পড়ুন: শার্শায় ভুট্টা চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের 

প্রথমে আলোর ফাঁদ পেতে, পোকা ধরার জাল ব্যবহার করে, ক্ষতিকর পোকার ডিমের গাদা নষ্ট করে, উপকারী পোকা সংরক্ষণ করে, ক্ষেতে ডাল-পালা পুঁতে পাখি বসার ব্যবস্থা করার মাধ্যমে ধানক্ষেত বালাইমুক্ত করার ব্যবস্থা করতে হবে। এসব উপায়ে পোকার আক্রমণ কমানো না গেলে শেষ উপায় হিসেবে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে সঠিক বালাইনাশক সঠিক সময়ে, সঠিক মাত্রায়, সঠিক নিয়মে প্রয়োগ করতে হবে।

ধান ক্ষেতে উফরা, বাদামি দাগ রোগ, ব্লাস্ট, পাতাপোড়া ও টুংরো রোগসহ অন্য রোগ হতে পারে। জমিতে উফরা রোগ দেখা দিলে যে কোনো কৃমিনাশক যেমন ফুরাডান ৫জি বা কিউরেটার ৫জি প্রয়োগ করতে হবে। ব্লাস্ট রোগ দেখা দিলে ইউরিয়া সার দেওয়া থেকে সাময়িকভাবে বন্ধ রেখে হেক্টরপ্রতি ৪০০ গ্রাম ট্রুপার বা জিল বা নেটিভ ১০ থেকে ১৫ দিনের ব্যবধানে দুইবার প্রয়োগ করতে হবে।

জমিতে পাতাপোড়া রোগ হলে অতিরিক্ত ৫ কেজি-বিঘা হারে পটাশ সার উপরিপ্রয়োগ করতে হবে এবং জমির পানি শুকিয়ে ৭ থেকে ১০ দিন পর আবার সেচ দিতে হবে। আর টুংরো রোগ দমনের জন্য এর বাহক পোকা সবুজ পাতা ফড়িং দমন করতে হবে।

আরও পড়ুন: ধানের ব্লাস্ট রোগ দমনে যা করবেন 

গম ও ভুট্টা
বৈশাখ মাসে সাধারণত গম ও ভুট্টা (রবি) মাঠ থেকে বাড়িতে চলে আসে। বাড়িতে এটি ভালোভাবে সংরক্ষণ করতে হবে না। সংরক্ষণ কৌশলে ভালোভাবে বীজ শুকানো, উপযুক্ত পাত্র নির্বাচন, বায়ুরোধী করে সংরক্ষণ, বীজ পাত্রকে মাটি বা মেঝে থেকে আলাদাভাবে রেখে সংরক্ষণ করতে হবে। সংরক্ষণ পাত্রে শুকনো নিমপাতা, বিষকাটালি পাতা রেখে দিলে সহজেই পোকার আক্রমণ রোধ করা যাবে।

ভুট্টা
খরিফ ভুট্টার বয়স ২০ থেকে ২৫ দিন হলে ইউরিয়া সারের উপরিপ্রয়োগ করতে হবে। মাটিতে রসের ঘাটতি থাকলে হালকা সেচ দিতে হবে। জমিতে আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। একই সঙ্গে গাছের গোড়ায় মাটি তুলে দিতে হবে।

ঝড়ে সতর্কতা
বিভিন্ন স্থানে শুরু হয়েছে মৌসুমী কালবৈশাখী ঝড়। এরই মধ্যে কালবৈশাখী হানা দিয়েছে কৃষকের ফসলে। কালবৈশাখী আসলে এক ধরনের সাময়িক বৃষ্টিপাত ও বজ্রঝড়। সাধারণত এপ্রিল থেকে মে মাসে অর্থাৎ বৈশাখ মাসে বাংলাদেশ ও ভারতের কিছু অঞ্চলে এই বজ্রঝড় দেখা দেয়।

আরও পড়ুন: পাঁচবিবিতে গমের ফলনে কৃষকের মুখে হাসি 

বর্তমানে দেশের আবহাওয়া বিভাগ উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যে আগে থেকেই এই ঝড়ের বিষয়ে সাধারণত সতর্ক করে থাকে অঞ্চলভেদে। তবে খুব অল্পসময়ের মধ্যে এই ঝড় বেশি হওয়ায় ক্ষয়ক্ষতি হয় বেশ। ঝড়ের অবস্থা দেখে ঝড়ের আগেই আগাম ফসল কেটে ঘরে তুলে নিতে হবে। তাহলে হয়তো ক্ষতি কিছুটা কমবে।

তাছাড়া যেসব ফসল আগাম চাষ সম্ভব, সেগুলো আগেই চাষ করতে হবে। যেন বৈশাখ মাসের আগেই ঘরে তুলে ফেলা যায়। এ বিষয়ে আগাম প্রচার ও ব্যাপক জনসচেতনতার মাধ্যমে ক্ষতি কমানো সম্ভব।

এসইউ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।