শার্শায় বারোমাসি আম চাষে সফল নূর ইসলাম

উপজেলা প্রতিনিধি উপজেলা প্রতিনিধি বেনাপোল (যশোর)
প্রকাশিত: ১২:৪৯ পিএম, ২৫ এপ্রিল ২০২৩

যশোরের শার্শার বাগআঁচড়ায় বারি-১১ জাতের আম চাষে অবিশ্বাস্য সাফল্য পেয়েছেন নূর ইসলাম সরদার। বারি-১১ জাতের ‘বারোমাসি’ আম চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন তিনি। অসময়ে বাজারে ওঠা এই আমের চাহিদাও ভালো। প্রতি কেজি আম বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকা।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত নতুন জাতের এই আম চাষ করে সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরেছে বলে জানিয়েছেন বাগআঁচড়া ইউনিয়নের পিঁপড়াগাছী গ্রামের আম চাষি নূর ইসলাম সরদার।
তিনি জানান, দেশ-বিদেশে সাধারণত হিমসাগর, ফজলি, ল্যাংড়া, আম্রপালিসহ বিভিন্ন জাতের আমের চাহিদা আছে। এসব আম এক মৌসুমে হওয়ায় সারাবছর পাওয়া যায় না। তবে নতুন জাতের বারি-১১ আমটি সারাবছর পাওয়া যায়।

নূর ইসলাম জানান, তিনি ২৩ বছর ধরে নার্সারির সঙ্গে জড়িত। প্রথমে অন্যের নার্সারিতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। পরে বসতবাড়ির পাশে ফলদ নার্সারি গড়ে তোলেন। নার্সারির পাশাপাশি আগে থেকেই তার আমের বাগান করার পরিকল্পনা ছিল। স্থানীয় কৃষি বিভাগের সহযোগিতা ও পরামর্শে ২০১৮ সালে বাংলাদেশ আম গবেষণা কেন্দ্র চাপাইনবাবগঞ্জ থেকে নতুন উদ্ভাবিত বারি-১১ জাতের আমের চারা সংগ্রহ করেন। সেই চারা থেকে প্রথম বছরেই সাইন (ডাল) দিয়ে ২ হাজার ২০০ চারা উৎপাদন করেন।

jagonews24

আরও পড়ুন: লিচু ফেটে যাওয়া রোধে করণীয় 

পরের বছর নিজের ৩ বিঘা ও লিজ নেওয়া ৩ বিঘা জমিতে নিজের উৎপাদিত নতুন জাতের বারি-১১ আমের চারা রোপণ করেন। চারা রোপণের ২ বছর বয়স থেকেই বাগানে ফল আসতে শুরু করে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকেই নূর ইসলামের বাগানে আম সংগ্রহ শুরু হয়। প্রতি বিঘা জমিতে ৩৫ থেকে ৪০ মণ আম হয়েছে। প্রতি কেজি আম বাগান থেকে বিক্রি করছেন ৪০০ টাকা কেজি দরে।

তিনি বলেন, ‘গত বছর প্রায় ৪ লাখ টাকার আম বিক্রি করেছি। এতে ৩ লাখ টাকার উপরে লাভ হয়েছে। আম চাষে বছরে খরচ হয় প্রায় লাখ টাকা। এ বছর এখন পর্যন্ত ১ লাখ ৬০ হাজার টাকার আম এবং এ জাতের আমের কলম (চারা) বিক্রি করেছি ৮০ হাজার টাকার মতো।’

jagonews24

বছরে তিনবার আম পাওয়ার কথা জানিয়ে নূর ইসলাম বলেন, ‘প্রতি বিঘায় বছরে ১ লাখ ৬৮ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব।’

স্থানীয় কৃষি বিভাগ জানায়, নূর ইসলামের সফলতা দেখে এলাকার অনেক শিক্ষিত বেকার যুবক বারি-১১ জাতের আম চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। আম চাষিদের প্রয়োজনীয় কারিগরি সহযোগিতা ও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। উপজেলায় হিমসাগর, ল্যাংড়া, ফজলি, গোপালভোগ, আম্রপালি ও মল্লিকা জাতের ৩ হাজার ১৪৪টি আমের বাগান আছে। চলতি মৌসুমে ২ হাজারেরও বেশি চাষি অন্তত ৯৫৯ হেক্টর জমিতে আম চাষ করেছেন।

আরও পড়ুন: ন্যায্যমূল্য না পাওয়ার অভিযোগ কৃষকদের 

jagonews24

কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা তরুণ বালা বলেন, ‘এ উপজেলায় ল্যাংড়া জাতের আম চাষ হয়েছে ১৩২ হেক্টর, হিমসাগর ৪২০ হেক্টর, রুপালি ১৯০ হেক্টর, বারি-চার ১৫ হেক্টর, কাটিমন ২ হেক্টর এবং অন্য জাতের আম ২০০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। বারি-৪, বারি-১১ এবং কাটিমন জাতের আমগাছ থেকে বছরে তিনবার ফলন পাওয়া যায়। অসময়ে আম হওয়ায় কৃষক দামও ভালো পাচ্ছেন। তাই অনেকেই এই জাতের আম চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।’

শার্শা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ কুমার মন্ডল বলেন, ‘অসমে আম উৎপাদন একটি ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। তাই আমি প্রতিনিয়ত নূর ইসলামের বাগানের খোঁজ রাখি ও পরামর্শ দিচ্ছি। নূর ইসলামের মতো কৃষক আমাদের গর্ব। যদি কেউ নতুন ফল ও ফসল উৎপাদন করতে চান, আমরা সব সময় তাদের পাশে আছি। অসময়ে এ আম বাজারে আসায় ভালো দাম পাচ্ছেন।’

মো. জামাল হোসেন/এসইউ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।