ভোজ্যতেলের চাহিদা মেটাবে ‘সাউ পেরিলা’

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি দিনাজপুর
প্রকাশিত: ১১:২০ এএম, ২১ অক্টোবর ২০২২

দিনাজপুরের বোচাগঞ্জে প্রথমবারের মতো চাষ হচ্ছে তেল ফসল সাউ পেরিলা-১। যা ব্যাপকভাবে চাষ হলে দেশে কিছুটা ভোজ্যতেলের চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে। কমবে ভোজ্যতেল আমদানি নির্ভরতা। বিদেশেও করা যাবে রপ্তানি। দেশে দিন দিন বাড়ছে ভোজ্যতেলের চাহিদা। সেই চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানির জন্য পেরিলা একটি দারুণ সম্ভাবনাময় ফসল হতে পারে দেশের জন্য।

অপার সম্ভাবনার হাতছানি দেওয়া এ ফসল চাষ করছেন কাহারোল উপজেলার মুকুন্দপুর সুন্দইল গ্রামের বাসিন্দা সৈয়দ রোকনুজ্জামান। এর আগে তিনি পঞ্চগড়ে অল্প কিছু জমি লিজ নিয়ে পরীক্ষামূলক ভাবে ২০২১ সালে পেরিলা চাষ করেন। সেখানে তিনি ঘানিতে পরীক্ষামূলক কিছু তেল উৎপাদন করেছিলেন। যা তিনি পরিচিতজনদের কাছে বিক্রি করেছিলেন। বাকি বীজ তিনি পাশের উপজেলা বোচাগঞ্জে জমি লিজ নিয়ে রোপণ করেছেন।

jagonews24

জানা গেছে, সৈয়দ রোকনুজ্জামান পেরিলা গবেষক মোহাম্মদ আবদুল কাইয়ুম মজুমদারের কাছ থেকে ২০২১ সালে বীজ সংগ্রহ করেন। তার পরামর্শে পঞ্চগড়ের তেতুলিয়ায় অল্প কিছু জমি লিজ নিয়ে পেরিলা চাষ শুরু করেন। সেখানে সফল হওয়ার পর এবার বোচাগঞ্জ উপজেলার নাফানগর ইউনিয়নের বড় সুলতানপুরে ১২ একর জমি লিজ নিয়ে বাণিজিক্যভাবে চাষ শুরু করেছেন। আশা করছেন, এবার তিনি তার উৎপাদিত বীজ দক্ষিণ কোরিয়া রপ্তানি করতে পারবেন।

১২ একর জমিতে ফসল সংগ্রহ পর্যন্ত আনুমানিক ব্যয় হবে ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা। আর উৎপাদিত পেরিলা বীজ থেকে ১০-১২ লাখ টাকার মতো তেল বিক্রি করতে পারবেন। খুব কম সময়ের ফসল পেরিলা। ৩ থেকে সাড়ে ৩ মাসের মধ্যে ফসল সংগ্রহ করা যায়।

কৃষি উদ্যোক্তা সৈয়দ রোকনুজ্জামান বলেন, ‘পেরিলা বাংলাদেশে কয়েক বছর ধরে চাষ হচ্ছে। এটি নিয়ে গবেষণা করছেন আবদুল কাইয়ুম মজুমদার। আমি ২০২১ সালে এটি নিয়ে কাজ শুরু করি। ভোজ্যতেল হিসেবে এর গুণাগুণ উচ্চমানের। আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা রয়েছে। আমার চেষ্টা থাকবে অদূর ভবিষ্যতে সারাদেশে পেরিলা চাষ কীভাবে সম্প্রসারণ করা যায়। সেজন্য কৃষি বিভাগের সহযোগিতা প্রয়োজন।’

বোচাগঞ্জ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. আরিফ আফজাল বলেন, ‘উচ্চমাত্রায় ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ হওয়ায় অনেক আগে থেকেই পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোয় পেরিলা তেলের ব্যাপক চাহিদা। তেল ফসল হিসেবে পেরিলা চাষ বাংলাদেশে সম্প্রসারিত হচ্ছে। এটি বর্ষা মৌসুমেও চাষ করা যায়। ফলন প্রায় সরিষার মতো।’

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এরইমধ্যে কৃষি মন্ত্রালয় থেকে নতুন এ তেল ফসলের নিবন্ধন দিয়েছে জাতীয় বীজ বোর্ড। পেরিলা লেমিয়াসি (মিন্ট ক্রপ) পরিবারের একটি ফসল। এটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া তথা দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, চীন, নেপাল, ভিয়েতনাম এবং ভারতের কিছু অঞ্চলে চাষ হয়ে থাকে।

jagonews24

২০২০ সালে দীর্ঘসময় গবেষণার পর দেশের ১৪টি জেলায় সফলভাবে এর পরীক্ষামূলক চাষ হয়। ২০২১ সালে দেশের ৫০টিরও বেশি জেলায় প্রথম বাণিজ্যিকভাবে চাষ হয় পেরিলা। চলতি বছরেও দেশের বিভিন্ন জায়গায় চাষ হচ্ছে। উচ্চ গুণাগুণ সম্পন্ন এ তেল আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি লিটার ২১০০-২৫০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। দেশের তেল ভাঙার মিলগুলোর মাধ্যমে পেরিলা তেল সংগ্রহ করা যায়।

পেরিলা তেল হার্টের জন্য খুব উপকারী। মোট ফ্যাটের শতকরা ৯১ ভাগ অসম্পৃক্ত। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। চোখের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এর অসম্পৃক্ত ফ্যাটি অ্যাসিড শরীরের জন্য অনেক উপকারী। বিশেষত হৃদযন্ত্র, মস্তিষ্ক ও ত্বকসহ ডায়াবেটিস প্রতিরোধে এটি কার্যকর ভূমিকা রাখে।

এমদাদুল হক মিলন/এসইউ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।