‘২০৫০ সালে দেশ থেকে হারিয়ে যেতে পারে কৃষিশ্রমিক’

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৮:৫০ পিএম, ০৩ আগস্ট ২০২২
ফাইল ছবি

একদিকে দেশে জনসংখ্যা বাড়ছে, অন্যদিকে ছোট হচ্ছে কৃষি জমি। ফলে অল্প জমি থেকে বেশি মানুষকে খাওয়াতে হচ্ছে। সেই সঙ্গে কৃষকের স্থান দখল করে নিচ্ছে যন্ত্র। আর সেই যন্ত্রের ব্যবহারে উৎপাদন বাড়ছে। এতে করে পুরাদস্তুর বাণিজ্যে রূপ নিতে চলেছে কৃষি। সে ক্ষেত্রে একটি গোষ্ঠীর হাতে চলে যাবে এই খাত। ফলে ২০৫০ সাল নাগাদ দেশ থেকে হারিয়ে যেতে পারে কৃষিশ্রমিক। সেই সঙ্গে হারিয়ে যেতে পারে পারিবারিক খামারও। অথচ বাংলাদেশের গ্রামীণ উন্নয়নের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত এই খামার। তাই বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনই এটা নিয়ে আলোচনা করতে হবে। করতে হবে সুরাহা।

বুধবার (৩ আগস্ট) ঢাকায় বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) কনফারেন্স রুমে এসব কথা তুলে ধরেন যুক্তরাজ্যের বাথ ইউনিভার্সিটির সোশ্যাল অ্যান্ড পলিসি সাইন্স বিভাগের ইমিরেটস অধ্যাপক ড. জিওফ উড। এসময় তিনি ‘ডিসঅ্যাপিয়ারেন্স অব দ্যা বেঙ্গলি ফ্যামিলি ফার্ম’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

উড বলেন, খাদ্য নিরাপত্তায় পারিবারিক খামার গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। কিন্তু জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও বিশ্বায়নের ফলে কৃষি জমি ছোট হয়ে যাচ্ছে। এর ফলে হারিয়ে যাচ্ছে পারিবারিক কৃষি খামার। কৃষিতে নতুন বৈচিত্র্য এসেছে। সনাতন পদ্ধতির স্থলে জায়গা করে নিয়েছে যান্ত্রিকীকরণ। ৮০’র দশক থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত আমরা যে কৃষিকে চিনতাম তার মধ্যে একটা বিরাট পরিবর্তন এসেছে। আগে কৃষক যেভাবে নিজের জমি চাষ করতো সেই সনাতন পদ্ধতি এখন নেই।

jagonews24

বিআইডিএস কনফারেন্স রুমে আলোচনায় বক্তারা, এসময় পরিকল্পনামন্ত্রীও উপস্থিত ছিলেন

তিনি আরও বলেন, তবে এখানে তিন ধরনের সম্ভাবনা রয়েছে। তার মধ্যে একটা হলো, ফার্মগুলো ভেঙে যাবে, দ্বিতীয়ত বড় কমার্শিয়াল ফার্মের জন্ম হবে। তৃতীয় হলো সনাতনী রূপটা থাকবে না আবার কমার্শিয়ালও থাকবে না এর মাঝামাঝি কিছু একটা থাকবে। তবে এখানে কৃষকের জায়গাটা নেবে সার্ভিস প্রভাইডাররা। এতে করে কৃষক পুরোপুরি কৃষি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। জমিটা একটা গোষ্ঠী নিয়ে সিজনাল সময়ে কমার্শিয়ালভাবে চাষাবাদ করবে। এতে করে একটা মাস্তানিজম কাজ করবে।

বাংলাদেশের জন্য কৃষিখাত খুবই গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে এই বিশেষজ্ঞ বলেন, পৃথিবীর মধ্যে ঘনবসতিপূর্ণ দেশ বাংলাদেশ। যেখানে বিশ্বায়ন ও নগরায়ন চলছে। যে দেশে রেমিটেন্স একটা বড় ভূমিকা পালন করে। সেখানে কৃষিখাতের ভূমিকা বাড়ছে। কারণ অল্প জমি থেকে বেশি মানুষকে খাওয়াতে হচ্ছে। ফলে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, কৃষকের কাজ কী সার্ভিস প্রভাইডাররা পূরণ করতে পারবে? বাংলাদেশে কৃষি কাজে বর্গা জমি ২০-৪৫ শতাংশ হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, নতুন একটা গোষ্ঠী কৃষি কাজে এলে তারা কোন মোটিভেশনালে এলো, তারা কৃষিখাতকে শোষণ করার জন্য এসেছে? নাকি অন্য কিছু। এসব নিয়ে আমাদের আরও আলোচনা করতে হবে। একটা কাজের মধ্য দিয়ে সুরাহা করতে হবে।

দেশের বিশিষ্ট কৃষি অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. এম এ সাত্তার মণ্ডল বলেন, মালিকানা কেন্দ্রিক বা পরিবারভিত্তিক যে কৃষি তা হারিয়ে যাচ্ছে। আগে দেখতাম ধনী কৃষক নিজের ফসল উৎপাদনের পাশাপাশি অন্যের জন্যও ফসল ফলাতো। একদিকে জমি খণ্ড খণ্ড হচ্ছে, অন্যদিকে এখাতে নতুন নতুন উদ্যোক্তা আসছে। বিশেষ করে গ্রামীণ তরুণেরা কৃষি জমিতে কাজ করছেন।

jagonews24

ছোট জমিতে প্রযুক্তির ব্যবহার প্রসঙ্গে এই কৃষি অর্থনীতিবিদ বলেন, আমাদের ধারণা ছিল বড় যন্ত্র ব্যবহার করতে হলে বড় পরিসরে জমি দরকার। এটা নিয়ে বড় শঙ্কায় পড়ে গিয়েছিলাম। আমরা মনে করেছিলাম যন্ত্র ব্যবহার করতে হলে বড় জমি লাগবে। তবে আমি বাংলাদেশ একটা ভিন্নতা দেখেছি। এমন প্রযুক্তি আছে জমি ছোট হলেও ব্যবহার করা যাবে। এখানে জাপানি ও চীনারা বড় ভূমিকা পালন করেছে। ছোট খামারেও যন্ত্র চলে।

উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, একটা শ্যালো মেশিন সঠিকভাবে চালাতে ১৫ একর জমি লাগে। কিন্তু অনেক কৃষকের ১৫ একর জমি নেই, কিন্তু শ্যালো মেশিন আছে। একাধিক কৃষক শেয়ার করে শ্যালো মেশিন ব্যবহার করতে লাগলেন। এছাড়া পাওয়ার টিলারও ব্যবহার করতে লাগলেন কৃষক।

বিআইডিএস’র মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অংশ নেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, ব্র্যাকের চেয়ারম্যান ও অর্থনীতিবিদ ড. হোসেন জিল্লুর রহমান প্রমুখ।

এমওএস/জেডএইচ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।