ভুট্টা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন কালীগঞ্জের কৃষকরা
গাজীপুরের কালীগঞ্জে চলতি মৌসুমে ভুট্টা চাষে বাম্পার ফলনের স্বপ্ন দেখছেন স্থানীয় ভুট্টা চাষিরা। উপজেলায় ডেইরি ও পোল্ট্রি ফার্ম বৃদ্ধি পাওয়ায় এর খাদ্যের জোগান দিতে স্থানীয় কৃষকরা ভুট্টা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।
তাছাড়া ভুট্টা চাষ সহজ ও লাভজনক হওয়ায় কৃষকের মাঝে বেশ আগ্রহের সৃষ্টি হয়েছে। তবে স্থানীয় কৃষি বিভাগ বলছে গত বছরের উৎপাদনের তুলনায় চলতি বছরে উৎপাদন হবে দ্বিগুণ।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য মতে, কালীগঞ্জ পৌর এলাকাসহ উপজেলার তুমলিয়া, নাগরী, বক্তারপুর, জাঙ্গালীয়া, মোক্তারপুর, জামালপুর ও বাহাদুরসাদী ইউনিয়নে ভুট্টার আবাদ হয়। তবে উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নে ভুট্টার আবাদ একটু বেশি হয়।
আর স্থানীভাবে উৎপাদিত ভুট্টার জাতগুলোর মধ্যে সুপার সাইন-২৭৬০, রাজলক্ষ্মী-৩৩৫৫। তবে এই দুটি জাতের মধ্য সুপার সাইন-২৭৬০ বেশি চাষ হয়। ভুট্টা চাষের মোট ২১ হেক্টর জমির মধ্যে ১৯ হেক্টর জমিতে সুপার সাইন-২৭৬০ চাষ হলে বাকি ২ হেক্টর জমিতে চাষ হচ্ছে রাজলক্ষ্মী-৩৩৫৫।
সূত্র আরো জানায়, স্থানীয় কৃষকরা গত বছর মাত্র ১২ হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদ করেছে। সে বছর ওই পরিমাণ জমিতে ৮ মেট্টিক টন ভুট্টা উৎপাদন হয়। কিন্তু এবছর ২১ হেক্টর জমিতে ভুট্টার চাষ হচ্ছে। তবে এবছর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ না করলেও গত বছরের উৎপাদনের তুলনায় চলতি বছরে উৎপাদন দ্বিগুণ হবে বলে আশা করছেন স্থানীয় কৃষি অফিস।
উপজেলার বক্তারপুর ইউনিয়নের উত্তর খৈকড়া গ্রামের ভুট্টা চাষি মোক্তাজুল খান (৩৫) জানান, গত বছর তিনি কৃষি অফিসের সহযোগিতায় ১ বিঘা জমিতে ভুট্টার চাষ করেছেন। ওই বছর ফলনও ভালো ছিল। প্রায় ৪৫ মণ উৎপাদিত ভুট্টা পুরোটাই তিনি গোখাদ্য হিসেবে ব্যবহার করেছেন। এবারও তিনি কৃষি অফিসের সহযোগিতায় ২ বিঘা জমিতে ভুট্টার চাষ করেছেন। আশা করছেন এবছর বাম্পার ফলন হবে। আর ফলনকৃত ভুট্টার কিছু গোখাদ্য হিসেবে ব্যবহার করে বাকিটা তিনি বিক্রি করে দেবেন।
জামালপুর ইউনিয়নের খাগড়াচর এলাকার ভুট্টা চাষি আবু তাহের (৪৭) জানান, তিনি গত বছর আধা বিঘা জমিতে ভুট্টার চাষ করেছেন। স্থানীয়ভাবে মাছ ও গরু খামারিদের কাছে ভুট্টার বেশি কদর থাকায় এবং দাম ভালো পাওয়ায় এবার তিনি ১ বিঘা জমিতে সুপার সাইন-২৭৬০ জাতের ভুট্টার চাষ করেছেন। এছাড়া ওই ১ বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করতে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে বিনা মূল্যে ডিএপি, এমওপি সার ও বীজ পেয়েছেন বলেও জানান তিনি।
একই এলাকার ভুট্টা চাষ করা মোর্শদা বেগম (৪৫) জানান, তিনি গত বছর কৃষি অফিসের সহযোগিতায় ১ বিঘা জমিতে ভুট্টার চাষ করেছেন। এবারও তিনি একই পরিমাণ জমিতে সুপার সাইন-২৭৬০ জাতের ভুট্টার আবাদ করেছেন।
তবে এবছর তার পুরো জমিতে কৃষি অফিসের অধীনে রাজস্ব খাতের অর্থায়নে একটি প্রদর্শনী দেওয়া হয়েছে। আর তাতে তিনি বিনা মূল্যে ডিএপি, এমওপি সার, বীজ ছাড়াও বালাইনাশক ও কীটনাশক পেয়েছেন।
উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের চুপাইর ব্লকের দায়িত্বে থাকা কৃষি উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শারমীন আক্তার জানান, জামালপুর ইউনিয়নের খাগড়াচর এলাকার ভুট্টার ফলন উপজেলার অন্য যেকোন স্থানের চেয়ে চোখে পড়ার মতো।
তাছাড়া ভুট্টা চাষিদের উৎপাদন করা ভুট্টা নিজেদের গরুর খামারে গরুর খাদ্য ও মৎস্য খামারে মাছের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করছেন। ভুট্টা চাষ সহজ ও লাভজনক হওয়ায় এখানকার কৃষকের মাঝে বেশ আগ্রহ সৃষ্টি হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ফারজানা তাসলিম বলেন, কালীগঞ্জে ডেইরি ও পোর্ল্টি ফার্ম দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর জোগান দিতে কৃষকরা ভুট্টা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। আর ভুট্টা চাষ এগিয়ে নিতে কৃষকদের উৎসাহিত করতে প্রশিক্ষণসহ সম্ভাব্য সবধরনের সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছি।
আমরা প্রণোদনা কর্মসূচি ও রাজস্ব প্রদর্শনীর মাধ্যমে ভুট্টার প্রদর্শনী বাস্তবায়ন করছি। এবছর সরকারের কৃষি প্রণোদনা হিসেবে স্থানীয় ২০০ কৃষককে বিনা মূল্যে ২ কেজি করে ভুট্টার বীজ ও ১০ কেজি ডিএপি ও ১০ কেজি এমওপি সার বিতরণ করা হয়েছে। তাছাড়াও সরকারের রাজস্ব খাতের অর্থায়নে ১০টি প্রদর্শনী দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, স্থানীয় ব্লকের দায়িত্বে থাকা কৃষি উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা নিয়মিত ভুট্টার ক্ষেত পরিদর্শনসহ কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।
এবছর ভুট্টার ফলন যেভাবে দেখা যাচ্ছে তাতে স্থানীয় কৃষক আগামী বছর ভুট্টা চাষে আরো বেশি আগ্রহী হবে। তবে এবছর হেক্টর প্রতি সাড়ে আট থেকে ১০ টন করে ভুট্টার ফলন পাবেন বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
আব্দুর রহমান আরমান/এমএমএফ/জিকেএস