তিন বন্ধুর শিং মাছ চাষ

জাগো নিউজ ডেস্ক
জাগো নিউজ ডেস্ক জাগো নিউজ ডেস্ক বেনাপোল (যশোর)
প্রকাশিত: ১১:৫৫ এএম, ০৮ নভেম্বর ২০২১

যশোরের শার্শা উপজেলায় তিন বন্ধু মিলে আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করে দেশীয় শিং মাছের চাষ করছেন। যদিও তাদের মৎস্য অধিদপ্তর থেকে কোনো প্রশিক্ষণ নেই। তারপরও তাদের এই মাছ চাষ দেখে এলাকায় আরো অনেকে শিং মাছ চাষের উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানা গেছে।

স্বশিক্ষিত ও বেকার তিন বন্ধু হলেন উপজেলার স্বরুপদাহ গ্রামের মৃত মতলেব বিশ্বাসের ছেলে আফতাব হোসেন (৫০), শিবচন্দ্রপুর ওয়াপদাহ খাল পাড়ের বাসিন্দা মৃত রায়হান সর্দ্দারের পুত্র আব্দুর রশিদ (৪৫) ও মতিয়ার রহমানের ছেলে সোহাগ হোসেন (৩৫)।

সরেজমিনে দেখা যায়, ৩২ শতাংশের পুকুরে শতাংশ প্রতি চার গ্রাম ওজনের শিং মাছের পাঁচ হাজার পোনা মজুদ করেন। দিনে দুইবার (সকাল ও রাতে) মাছের খাদ্য প্রয়োগ করেন। পুকুরের ভেতরে মাছের বিষ্ঠা পরিষ্কার করার জন্য রয়েছে আধুনিক প্রযুক্তির মেশিন।

jagonews24

সারাদিনের মাছের বিষ্ঠা গুলো আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে পানি থেকে তুলে ফেলা হয় এবং তা আবার ব্যবহার হয় জৈব সার হিসাবে। এই জৈব সার দিয়ে মাছের খামারের পাশে বিভিন্ন সবজির চাষও করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে শিং মাছ চাষে সফলতার স্বপ্ন দেখছেন শার্শার তিন বন্ধু। ঝুঁকিপূর্ণ শিং মাছের আধুনিক প্রযুক্তিতে চাষ করার জন্য আগ্রহ সৃষ্টি করেছে তাদের বন্ধু আব্দুর রশিদ।

জানা যায়, তিন বন্ধুর মধ্যে আব্দুর রশিদ ভারতে থাকাকালীন তিনি মহারাষ্ট্রের বেলাপুরে একটি বৃহত্তম মৎস্য হ্যাচারিতে ৫ বছর কর্মরত ছিলেন। সেখানে মাছের পরিচর্যার পাশাপাশি তিনি শিং মাছ চাষ করার প্রযুক্তি সম্পর্কে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে থাকে এবং পরিপূর্ণ অভিজ্ঞতা অর্জন করে দেশে ফিরে আসেন। তারপর নিজেই শিংমাছ চাষ করার সিদ্ধান্ত নেন।

কিন্তু আব্দুর রশিদের পুঁজি না থাকাতে দুই বন্ধুর সহযোগিতায় তিন বন্ধু প্রথমে ১৫ কাঠার জমির একটি পুকুর লিজ নিয়ে চলতি বছরের মার্চ মাসে পুকুর তৈরি করে মাছের রেনু পোনা ছাড়েন। এরপর কিছু দিনের মধ্যেই তারা মাছের জন্য খাদ্য তৈরি করার পরিকল্পনা করে খাবার তৈরি করা মেশিন বানিয়ে নিজেদের প্রযুক্তি ব্যবহার করে মেশিন দ্বারা বয়লার ও পোল্ট্রি মুরগির নাড়ী, কেঁচো, শামুক, লবণ, খৈল, চিটা গুড় ও মধুর সংমিশ্রণে তৈরি করেন হাইপ্রোটিন জাতীয় মাছের খাদ্য।

jagonews24

চরম অর্থ কষ্টের মাধ্যমে শুরু হয় তাদের শিং মাছ চাষের যাত্রা। তিন মাসে মাছের ওজন এক লাখে এক কেজি ছিল বর্তমানে ১০টি মাছে কেজিতে দাঁড়িয়েছে।

মাছ চাষি আব্দুর রশিদ জানান, শিং মাছ দুই থেকে তিন মাস পর পরিচর্যার ত্রুটির কারণে লেজ বাঁকিয়ে যায়। যে কারণে মাছের গ্রোথ আসে না। সিং মাছের চাষ যেই করুক না কেন পরিচর্যা না জানার কারণে সেই চাষি কখনই সফল হবে না। শার্শা মৎস অফিস থেকে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আমাদের শিং মাছ চাষ দেখে গেছেন এবং আমাদের কিছু পরামর্শও দিয়েছেন।

রশিদ আরো জানান, শিং মাছ চাষে কেউ সহযোগিতা পেতে চাইলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করলে অবশ্যই আমরা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবো।

তিন বন্ধু জানায়, শার্শা উপজেলায় শিং মাছের চাষ একেবারেই কম এবং চাষ পদ্ধতিও নতুন। কোন প্রকার সরকারি সহযোগিতা ছাড়াই স্বশিক্ষিত এই তিন বন্ধু চরম অর্থ কষ্টে ধার দেনা করে সিং মাছ চাষে ঝুঁকে পড়ে। শিং মাছের চাষ যারা করেছেন কেউ প্রতিষ্ঠিত হতে পারেনি।

jagonews24

তবে আমরা চেষ্টা করছি প্রতিষ্ঠিত হব ইনশাল্লাহ। আমরা এখানে ব্যাপক আকারে আধুনিক প্রযুক্তিতে দেশীয় শিং মাছ চাষ করতে চাই। কিন্তু শুধুমাত্র ইচ্ছাশক্তি হলে সম্ভব না। অর্থেরও প্রয়োজন। তবে সরকার থেকে ক্ষুদ্র ঋণের ব্যবস্থা করা হলে আমরা আরো সফলভাবে এগিয়ে যেতে পারবো।

শার্শা উপজেলা সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবুল হাসান জানান, আব্দুর রশিদসহ তিন বন্ধু মিলে স্বরূপদা গ্রামের ওয়াপদা খাল নামক স্থানে শিং মাছ চাষ করছেন শুনে আমি নিজে কয়েকবার দেখতে গিয়েছি।

এ সময় শিং মাছ চাষের কারিগরি বিষয়ে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়েছি। সরকারিভাবে যে সমস্ত সহযোগিতা করা যায়, আমি তাদেরকে আশ্বস্ত করেছি এবং ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে চাইলে আমাদের পক্ষ থেকে তাদেরকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।

মো জামাল হোসেন/এমএমএফ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।