সোহানের সংগ্রহে ৩০০ প্রজাতির গাছ
অডিও শুনুন
মো. রাকিবুল হাসান
বৃক্ষপ্রেমী ওমর ফারুক সোহানের স্নাতক পর্যায়ে পড়াশোনা সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে ৷ ২০১৬ সালে আইন বিষয়ে ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউভার্সিটি হতে স্নাতকোত্তর শেষ করেন। নিজ জেলা চাঁদপুরের জজ কোর্টে শিক্ষানবিশ আইনজীবী ছিলেন বছরখানেক। দেশের প্রথম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি ‘গণ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি’র (গবিসাস) দ্বিতীয় কমিটির (২০১৪-২০১৫) সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন। তিনি গবি সাংবাদিক সমিতির আজীবন উপদেষ্টা। এখন তিনি নিজ এলাকায় নার্সারি ব্যবসা করছেন।
সোহান এখন চাঁদপুর জেলা শহরের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নিবন্ধিত এপ্যোলো নার্সারি এবং পুলিশ লাইন নার্সারির স্বত্বাধিকারী। নার্সারি সম্পর্কে জানতে চাইলে সোহান বলেন, ‘কৃষি সম্ভবনাময় বাংলাদেশ গড়ার জন্যে প্রতিনিয়ত কাজ করছি। আইন বিষয়ে স্নাতকোত্তর শেষ করে এই পেশায় আশা অনেকটা চ্যালেঞ্জিং। আল্লাহর রহমতে ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের ভালোবাসায় ছুটে চলছি।’
সোহানের নার্সারিতে দেশি-বিদেশি ৩০০ প্রজাতির গাছ আছে। দূর-দূরান্ত থেকে ঘুরতে আসা এক দর্শনার্থী বলেন, ‘চাঁদপুর জেলার সবচেয়ে বড় বাগান এটি। আপেল, আনার, তীন, জয়তুন, পার্সিমন, এবোকাডো, রামভুটান, ডুরিয়ান, আনার , ইয়োলো মাল্ট, ব্লাড মাল্টা, নতুন নতুন জাতের কমলাসহ ৫০টিরও বেশি জাতের আম, চা পাতার গাছ, স্টেবেরি, ব্ল্যাকবেরি ফল, ১০০ রংয়ের গোলাপ চারাইনডোর প্লান্ট, সাকুলেন্ট, গ্রিন লিফ, পিটুনিয়া, ক্যাকটাসসহ কতশত গাছ। গাছে গাছে ভরা এই নার্সারি।’
গ্রীষ্মকালে আমের রাজ্যে পরিণত হয় সোহানের ২ একর জমির দুটো নার্সারি। অনলাইনে ৬৪ জেলায় মাল্টি গ্রাফটিং চারা বিক্রি করেন তিনি। কৃষি সেবায় খুলছে ফেসবুক পেজ। সোহানের নার্সারিতে গাছ কিনতে আসা জিন্নাতুল তানিয়া জানান, ‘চমৎকার কয়েকটি গাছ কিনেছি। ভালোমানের সব গাছ সুলভ মূল্যে পেয়েছি। তার ব্যবহারও ছিল প্রশংসনীয়। দুটো গাছ উপহার দিয়েছে।’
ওমর ফারুক সোহান আইনে পড়েও নার্সারি ব্যবসা প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমার বাবা দেলোয়ার চৌধুরী নার্সারি ব্যবসার সাথে যুক্ত ছিলেন। বাবার মৃত্যুর পরে আমি করছি। নার্সারিতে এমনও জাতের চারা আছে; যা বাংলাদেশে একদম নতুন প্রজাতির। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে গাছ বা সায়ন সংগ্রহ করে থাকি। নতুন জাতের মাতৃ গাছও তৈরি করি।’
চাঁদপুরের উদ্ভিদ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সোহান মাতৃ গাছ থেকে সায়ন সংগ্রহ করে নতুন চারা তৈরি করেন। যা কৃষি সম্ভবনাময় বাংলাদেশে বিদেশি ফল উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। জানা যায়, তার পারিবারিক এই ব্যবসার বয়স ২০ বছর। এখানকার পুলিশ লাইনে পরিত্যক্ত ডোবা পড়ে ছিল। তৎকালীন দায়িত্বরত পুলিশ সুপার (এসপি) আমির জাফর ১৫ শতাংশ জমিতে নার্সারি করার অনুমতি দেন। সেই থেকে শুরু।
ক্যাম্পাস জীবনে সোনালি সময় কেটেছে সোহানের। ২৯ বয়সী এই উদ্যোক্তা বলেন, ‘চাচা টাকশালের উৎপাদন শাখার পরিচালক। তার মাধ্যমে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হই। ক্যাম্পাসে থাকাকালীন পলাশ, শিমুল, বকুল আপেলসহ নানা ধরনের গাছ রোপণ করেছি।’
বর্তমানে নার্সারিতে ১০ জন মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। করোনাকালে ১০০ মানুষকে বিতরণ করেন গাছ। অন্যদিকে করোনার সময়ে জেলা প্রশাসন স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করেন তিনি। নিজ উদ্যোগে মহামারিতে বাড়ি বাড়ি ত্রাণ পৌঁছে দেন। পাশাপাশি লকডাউনে সচেতনতামূলক প্রচারণা ও জরুরি অক্সিজেন সেবা চালু করেন।
লেখক: শিক্ষার্থী, গণ বিশ্ববিদ্যালয়।
এমএমএফ/এএসএম