হাসপাতালের চাকরি হারিয়ে মাশরুম চাষে সফল সাইদুর

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি নওগাঁ
প্রকাশিত: ০১:৫৩ পিএম, ১৫ মে ২০২১

নওগাঁর মান্দায় মাশরুম (ছত্রাক) চাষ করে সফলতা পেয়েছেন সাইদুর রহমান (৪৫) নামে এক উদ্যোক্তা। বর্তমানে তার ৫৮টি মাশরুম বীজ প্যাকেট (স্পন প্যাকেট) রয়েছে।

মান্দা উপজেলার কালিকাপুর ইউনিয়নের চকরামাকান্ত দহপাড়া গ্রামের সাইদুর রহমান। তিনি রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চাকরি করতেন। গত বছর করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে চাকরি হারিয়ে বাড়ি চলে আসেন। এরপর ছেলে সাজিদ হোসেন আরাফাত তার বাবাকে মাশরুম চাষের ব্যাপারে পরামর্শ দেন। মাশরুম চাষের বিষয়ে আরাফাতের আগে থেকে ধারণা থাকায় তেমন বেগ পেতে হয়নি।

কুরিয়ারের মাধ্যমে ঢাকার মোহাম্মদপুর আঁটিবাজার থেকে ৮ কেজি মাসরুম বীজ আনতে খরচ হয় হাজার টাকা। সাথে আরো ২ থেকে ৩ হাজার টাকা খরচ করে ৬০টি ছত্রাকের প্যাকেট বা সিলিন্ডার তৈরি করা হয়। এরপর গত বছরের ডিসেম্বর মাসে বাড়ির দ্বিতীয় তলার ১২ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৬ ফুট প্রস্থের ঘরে রশিতে বেঁধে ঝুলিয়ে রাখা হয় এক একটি ছত্রাকের প্যাকেট। যা থেকে উৎপন্ন হয় ৫ থেকে ৭ হাজার টাকার মাসরুম।

jagonews24

মাশরুম চাষি সাইদুর রাহমান বলেন, করোনায় চাকরি হারিয়ে বেকার হয়ে পড়ায় দুশ্চিন্তায় ছিলাম। ছেলের কথামতো মাশরুম চাষ করি। অয়েস্টার জাতের মাশরুমের বীজ সংগ্রহ করে চাষ শুরু করা হয়। ঘরে ৫৮টি মাশরুম বীজ প্যাকেট (স্পন প্যাকেট) আছে। এ বছর জানুয়ারি থেকে মার্চের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত ৭ হাজার টাকার মাশরুম বিক্রি করেছি।

যেখানে আড়াই হাজার টাকার মতো বিনিয়োগ হয়েছে। একেকটি স্পন প্যাকেট তৈরি করতে খরচ হয়েছে ৩০ টাকা। আর এমন স্পন প্যাকেট বিক্রি হয় ৪৫০ টাকায়। প্রতি কেজি মাশরুম বিক্রি করা হয়েছে ২৫০ থেকে ২৮০ টাকায়। আশেপাশের লোকজন এসে মাশরুম কিনে নিয়ে যান। যখন বেশি উৎপাদন হয় তখন স্থানীয় বাজারেও বিক্রি করা হয়।

jagonews24

তিনি বলেন, এলাকায় মাশরুমের তেমন পরিচিত না থাকায় মাইকিং ও লিফলেট ছাপিয়ে প্রচারণা করেছি। অনেক ডায়াবেটিস রোগী কিংবা সাধারণ মানুষ চাহিদা দেখিয়েছেন। প্রথমবার ভালো বীজ পাওয়া যায়নি। কিন্তু তারপরও ভালো লাভ হয়েছে। উৎপাদন করা খুব সহজ হলেও বিক্রি করতে অনেকটাই ঝামেলা। যদি বিক্রির নিশ্চয়তা থাকত, তাহলে কাজটি আরোও সহজ হতো। তবে বড় পরিসরে করার পরিকল্পনা আছে।

সাইদুর রহমানের ছেলে সাজিদ হোসেন আরাফাত বলেন, মাশরুম চাষের জন্য দেড় থেকে দুই ইঞ্চি খড় সিদ্ধ করে হালকাভাবে শুকাতে হয়। যাতে চাপ দিলে পানি না ঝরে। এরপর খড়গুলো পলিথিনে প্যাকেটে রেখে তাতে মাশরুমের বীজ দিতে হবে।

jagonews24

প্যাকেটের মুখ বন্ধ করে দিয়ে কয়েকটা ছিদ্র করে দিতে হবে। এরপর ২০ থেকে ২৫ ডিগ্রি তাপমাত্রায় অন্ধকার ঘরে রেখে দিতে হবে। দিনে ৮ থেকে ১০ বার স্পনগুলোতে পানি দিতে হয়। সাধারণত ২৫ থেকে ৩০ দিনে মধ্যে পলিথিনের গায়ে সুক্ষ্ম ছিদ্র দিয়ে সাদা আস্তরণ দেখা যাবে যাকে মাইসেলিয়াম (মাশরুমের ছাতা) বলে। এরপর মাশরুম খাওয়ার উপযোগী হয়।

মান্দা উপজেলা কৃষি অফিসার শায়লা শারমিন বলেন, সাইদুরের মাশরুমের প্রজেক্টটি দেখেছি। তার উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। আমরা কিছু কিনেছিলাম। মাশরুম চাষে মার্কেটিং সবচেয়ে বড় বিষয়। মাশরুম চাষের উপর একটা বরাদ্দ এসেছিল, সেটা এখন আর নেই। পরবর্তীতে কোন বরাদ্দ আসলে তার জন্য থাকবে।

আব্বাস আলী/এমএমএফ/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।