৩ বিঘা জমির মিশ্র ফসলে এক মৌসুমে দেড় লাখ টাকা আয়
কঠোর পরিশ্রম ও ইচ্ছা থাকলে কৃষিতেও সফলতা অর্জন করা সম্ভব। এমনটাই প্রমাণ করলেন ঝালকাঠী জেলার রাজাপুর উপজেলার শুক্তাগড় গ্রামের তিন ভাই। তারা হচ্ছেন উত্তম কুমার বিশ্বাস, নয়ন কুমার বিশ্বাস এবং অসীম কুমার বিশ্বাস। পৈতৃকসূত্রে তারা জমি পেয়েছেন আড়াই বিঘা। এ জমির সাথে প্রতিবেশীর কাছ থেকে লীজ নিয়েছেন ১০ কাঠা।
সব মিলিয়ে এই ৩ বিঘা জমিতে তারা মিশ্র ফসল চাষ করে ভাগ্য বদল করেছেন তারা। এদের মধ্যে উত্তম ও নয়ন বিশ্বাস মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষিত হলেও অসীম বিশ্বাস উচ্চশিক্ষিত। তিনি একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে চাকরি করছেন।
এক সময়ে তাদের পরিবারের এমনই অবস্থা ছিলো যেন লবণ আনতে পান্তা ফুরানোর অবস্থা। পিতার একার আয়েই কোনোমতে চলতো সংসার। কিন্তু কয়েক বছর আগে ওই জমিতেই মিশ্র চাষ পদ্ধতি ব্যবহার করে আর্থিক স্বচ্ছলতা ফিরে পেয়েছেন তারা। তাদের সার্বক্ষণিক কৃষি পরামর্শ সহায়তা দেন ওই এলাকায় দায়িত্বরত (শুক্তাগড় ব্লক) উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. তরিকুল ইসলাম।
সরেজমিনে রাজাপুর উপজেলার শুক্তাগড় গ্রামে মিশ্র ফসল চাষের খেতেই দেখা মেলে উত্তম ও নয়ন বিশ্বাসের সঙ্গে। উত্তম বিশ্বাস জানান, আড়াই বিঘা পৈতৃক জমির সাথে ১০ কাঠা জমি লীজ নিয়ে ৩ বিঘা জমিতে কৃষি কাজ শুরু করেন। আড়াই বিঘা জমিতে এক সময় শুধু ধান চাষ করা হতো। তাতে যে ফসল আসতো তা দিয়ে সংসারের খরচ চালানো কষ্টকর ছিল।
একপর্যায়ে তারা ধান চাষের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে বহুমুখী কৃষি কাজের পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী জমি তৈরি করে বিভিন্ন ধরনের বীজ এনে বপন করেন। ক্রমান্বয়ে তাদের সফলতা আসতে থাকে। প্রতি মৌসুমে টমেটো, ফুলকপি, বাঁধাকপি, ওলকপি, শালগম, মূলা, গাজর, লাউ, শিম, লাল শাক, পালং শাক, বেগুন, মিষ্টি কুমড়া, করলা, ঢেঁড়স, বরবটি, পুঁইশাক, কাঁচা মরিচ, বোম্বাই মরিচ ও বাঙ্গির চাষ করেন।
বর্তমানে ওই জমিতে বেগুন, মিষ্টি কুমড়া, করলা, ঢেঁড়স, বরবটি, পুঁইশাক, বাঙ্গি রয়েছে। খরিপ-১ মৌসুমের শুরুতেই তারা দেড় লক্ষাধিক টাকার ফসল বিক্রি করেছেন। তারা সব সময় আগাম ফসল উৎপাদন করে ব্যবসায় সফলতা পাচ্ছেন বলেও জানান উত্তম বিশ্বাস।
তিনি আরো জানান, উপজেলা কৃষি অফিসের শরণাপন্ন হলে কৃষি কর্মকর্তারা তাকে মিশ্র চাষে আরও প্রশিক্ষণ ও উৎসাহ দেন। এরপর তিনি মিশ্র চাষের পরিধি আরও বৃদ্ধি করেন। ৩ বিঘা জমিকে এই চাষ থেকে কোনো মৌসুমে তারা ফসল বিহীন রাখেন না। এভাবে ক্রমেই তাদের সাফল্য বাড়তে থাকে।
মো. আতিকুর রহমান/এমএমএফ/এমকেএইচ