হর্টিকালচারে অর্থাভাবে ফলজ গাছ উৎপাদন ব্যাহত
নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার হর্টিকালচারে অর্থাভাবে জায়গা ভরাট ও ‘মাতৃ’ গাছ তৈরি করতে না পারায় ফলজ গাছ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এতে উপজেলার শত শত বৃক্ষপ্রেমী ও ড্রাগন ফল চাষে আগ্রহী কৃষকরা সরকারি নির্ধারিত মূল্যে ড্রাগন ফলসহ বিভিন্ন ফলের গাছ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
হর্টিকালচার অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে সরকার নির্ধারিত মূল্যে ‘সমন্বিত মান সম্পন্ন উদ্যান উন্নয়ন’ ফলজ গাছ সরবরাহ করার লক্ষ্যে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে হর্টিকালচার স্থাপন করা হয়। দ্বিতীয় পর্যায়ে খামারবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের আওতায় ৪.৫৩ একর জমির উপর এক কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে এটি নির্মিত হয়।
হর্টিকালচারটিতে বেশ কয়েকটি ভবন নির্মাণ করে সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে চারজন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে দায়িত্ব দেয়া হয়। এছাড়া অস্থায়ীভাবে একজন মালি দিয়ে হর্টিকালচারের কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। অস্থায়ী মালি দিয়েই প্রায় ১৬ হাজার বিভিন্ন জাতের আম, থাই পেয়ারা, মাল্টা, বাতাবি লেবু, সফেদা, আমলকি, নারিকেল, বেল, ড্রাগন ফলের চারা তৈরি করা হয়। গত কয়েক মাসে হর্টিকালচারের কর্মকর্তাদের তত্ত্বাবধানে জেলায় ড্রাগন ফল গাছের ২১টি প্রদর্শনীয় প্লট তৈরি করা হয়েছে।
চলতি বছরের জুন মাসে সমন্বিত মান সম্পন্ন উদ্যান উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ বরাদ্দ শেষ হয়ে গেলে গত জুলাই মাসে ‘বছরব্যাপি ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন’ প্রকল্পে আওয়াতায় হটিকালচারর্টি চলে আসে। কিন্তু নতুন এই প্রকল্পের আওতায় আসার পর গত ৫ মাস থেকে কোনো অর্থ বরাদ্দ না থাকায় কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
অস্থায়ী মালি আকতার হোসেন বলেন, প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠার সময় থেকে তিনি একা থাকায় চারা গাছ কাটিং, স্থানান্তর, নিড়ানী, কলমজাত করা, লাগানোর ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে। এদিকে গত ৫ মাস থেকে বেতন-ভাতা বন্ধ রয়েছে। এতে পরিবার পরিজন নিয়ে কষ্টে চলতে হচ্ছে। তাকে স্থায়ীভাবে নিয়োগ দেয়ার দাবি জানান।
উপজেলার কাদিবাড়ী গ্রামের নজরুল ইসলাম বলেন, পুষ্টি সমৃদ্ধ এই ফল চাষ করতে আগ্রহী হলেও ড্রাগন ফল গাছের চারা না থাকায় বেশি করে চাষ করতে পারেনি। ড্রাগন ফলের চারা বেশি করে তৈরি করে কৃষকদের মাঝে সরবরাহের দাবি জানান তিনি।
এছাড়া নওগাঁর সদর উপজেলার বর্ষাইল গ্রামের দলিলুর রহমান বলেন, হর্টিকালচার থেকে দেয়া ৯০টি ড্রাগন ফলের গাছে এখন পর্যন্ত কোনো রোগবালাই দেখা না দেওয়ায় ভাল আছে। আশা করছেন অল্পদিনের মধ্যে ফল আসবে।
হর্টিকালচারের উপ-সহকারী উদ্যান কর্মকর্তা আব্দুল করিম বলেন, উন্নত জাতের ১৯ প্রজাতির আম, থাই পেয়ারাসহ ড্রাগন ফল গাছের চারা আছে। তবে জেলায় ড্রাগন ফল ও থাই পেয়ারার ব্যাপক চাহিদা দেখা দিয়েছে। লোকবল সঙ্কট থাকায় ফলজ গাছ সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না।
হর্টিকালচারের উপ-সহকারী উদ্যান কর্মকর্তা আতোয়ার রহমান বলেন, প্রকল্পের অর্থ বরাদ্দ না থাকায় অবকাঠামোসহ মাটি ভরাট না করতে পারায় ‘মাতৃ’ গাছ তৈরি এবং চারা গাছ প্রতিস্থাপন সম্ভব হচ্ছে না।
হর্টিকালচারের সমন্বিত উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (এলআর) আ.ন.ম আনারুল হাসান বলেন, মাটি ভরাটের জন্য ইত্যেমধ্যে ১৬ লাখ টাকার অর্থ বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। এক-দুই মাসের মধ্যে বরাদ্দ আসলে হর্টিকালচারের কার্যক্রম পুরোপুরি শুরু হবে।
আব্বাস আলী/এসএস/এমএস