বেড়েছে বেগুনের দাম, প্রতিদিন বিক্রি হয় ৪-৫শ মণ
জামালপুরের মেলান্দহ রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় বসেছে বেগুনের হাট। বড় বড় স্তূপ করে বেগুন রাখা হচ্ছে। এবার এ উপজেলায় বেগুনের ভালো ফলন হয়েছে। সারাদেশে চাহিদা থাকায় জমে উঠেছে বেগুনের হাট। এবার বেগুনের দামও বেশি। ভালো ফলন ও দাম পেয়ে মেলান্দহ উপজেলার কৃষকদের মুখে হাসি ফুটেছে।
প্রতিদিন দুপুর ১টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত চলে বেগুনের হাট। এ উপজেলার বেগুনের খ্যাতি সারাদেশেই রয়েছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এর চাহিদাও ব্যাপক। পুরো উপজেলায় এবার ৫৫০ হেক্টর জমিতে বেগুন চাষ হয়েছে।
সরেজমিনে জানা যায়, মেলান্দহ রেলওয়ে স্টেশনের পাশেই একটি খোলা মাঠে বসেছে বেগুনের হাট। উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে কৃষকরা ঘোড়ার গাড়ি, ভ্যানগাড়ি ও খাঁচায় করে বেগুন নিয়ে আসছেন।
দুপুরের পরই পুরো হাট বেগুনে ভরে যায়। এরপর শুরু হয় বেচা-বিক্রি। পাইকার ও শ্রমিকরা বেগুন কিনে বস্তাভর্তি করতে ব্যস্ত থাকেন। এরপর দেশের বিভিন্ন জেলায় নেয়ার জন্য পাইকাররা ট্রাকভর্তি করেন।
কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মেলান্দহ উপজেলার পূর্বপাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে পুরোনো ব্রহ্মপুত্র নদ। প্রমত্তা যমুনার সঙ্গে সরাসরি সংযোগ থাকার কারণে একসময় নদটি ছিল প্রচণ্ড খরস্রোতা।
যমুনার সঙ্গে এখন আর সংযোগ নেই। কিন্তু মেলান্দহের পূর্ব অঞ্চলের টুপকার চর, বালুর চর, ৪নং চর, ২নং চর ও ৫নং চরসহ বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলে ব্যাপকভাবে পলিমাটি জমে। তখন থেকে কৃষকরা সেসব চরে বেগুনের চাষ করে আসছেন।
ধীরে ধীরে বেগুন চাষে খ্যাতি অর্জন করেন উপজেলার কৃষকরা। নভেম্বর থেকে বেগুন বিক্রি শুরু হয়। চলে জানুয়ারি মাস পর্যন্ত। এ তিন মাস রেলওয়ে স্টেশনের সামনেই বসে বেগুনের হাট।
শুরুর দিকে ২ হাজার থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা মণপ্রতি বিক্রি হয়েছে। বর্তমানে বেগুন প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা। গত বছর দাম ছিল ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা মণ।
টুপকার চর গ্রামের কৃষক মনহর মিয়া জানান, তিনি এবার ৬০ শতাংশ জমিতে বেগুন চাষ করেছিলেন। এতে তার ২৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এরমধ্যে তিনি ৭৬ হাজার টাকার বেগুন বিক্রি করেছেন।
আরও ৩০-৪০ হাজার টাকার বেগুন বিক্রি করতে পারবেন বলে জানান এ কৃষক। হাটে ভালো দাম পেয়ে তার মুখে হাসি ফুটেছে। গত বছরের চেয়ে এবার তিনি মণপ্রতি ৫০০ টাকা করে দাম বেশি পেয়েছেন। প্রায় প্রতিদিনিই তিনি এ হাটে বেগুন বিক্রি করতে আসেন।
নেত্রকোণা জেলা থেকে আসা বেগুনের পাইকার রাফি তালুকদার বলেন, ‘এ অঞ্চলের বেগুন দেখতেও সুন্দর; খেতেও সুস্বাদু। ফলে বাজারে এ বেগুনের ব্যাপক চাহিদা। প্রত্যেক বছর এ অঞ্চলের বেগুন কিনে বাজারে বিক্রি করি। এতে ভালোই লাভ হয়।’
তিনি বলেন, ‘প্রায় প্রতিদিনই এ হাট থেকে ট্রাকে করে তিনি বেগুন কিনে নিয়ে যান।’
মেলান্দহ রেলওয়ে স্টেশন হাট কমিটির সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) আব্দুর রশিদ বলেন, ‘পুরো তিন মাস ধরে এ হাটে শুধু বেগুন বেচা-বিক্রি হবে। প্রত্যেক দিন হাটে ৪০০ থেকে ৫০০ মণ বেগুন বিক্রি হয়। ময়মনসিংহ, নেত্রকোণা, সিলেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, টাঙ্গাইল, সুনামগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকাররা বেগুন কিনতে আসেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ হাট থেকেই বেগুন কিনে ট্রাকে ভর্তি করে নিয়ে যান পাইকাররা। সরাসরি পাইকাররা কৃষকদের কাছ থেকে বেগুন কেনায় কৃষকরাও ভালো দাম পাচ্ছেন। গতবারের চেয়ে এবার বেগুনের দাম অনেক বেশি।’
মেলান্দহ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফয়সাল হাসান বলেন, ‘পুরো উপজেলায় এবার ৫৫০ হেক্টর জমির মধ্যে বেগুন চাষ হয়েছে। এতে কৃষক এবার ভালো লাভ পাবেন। এ বেগুন দেখতেই সুন্দর নয়, খেতেও সুস্বাদু।’
সারাদেশেই মেলান্দহের বেগুনের চাহিদা ব্যাপক বলে জানান এ কৃষি কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘কৃষি বিভাগের সার্বিক সহযোগিতায় এ এলাকার কৃষকের কাছে বেগুন এখন অন্যতম অর্থকরী ফসল। বেগুন চাষ করে কৃষকরা এখন আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। অনেক কৃষকের স্বচ্ছলতাও ফিরে এসেছে।’
জেএমএস/এসইউ/এএসএম/জেআইএম