শখের ফল বাগানে এখন লাখপতি হুমায়ূন

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি নেত্রকোনা
প্রকাশিত: ০৪:৩৭ পিএম, ২৮ নভেম্বর ২০১৯

শখের বশে বাগান করেন হুমায়ূন আহম্মেদ। শখের সে বাগানে এখন ফলছে বারোমাসি আফ্রিকান আম, পাকিস্তানি ট্রাই লেবুসহ ১৮ জাতের ফল। মাত্র চার বছরেই আর্থিক স্বচ্ছলতার মুখ দেখতে শুরু করেছেন তিনি। বাগানের আয়ে এখন লাখ লাখ টাকার মালিক। তার দেখাদেখি স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে অনেক যুবক।

জানা যায়, সদর উপজেলার কয়রাটি গ্রামের হুমায়ূন আহম্মেদ। এইচএসসি পাস করে কিছুদিন একটি কোম্পানিতে কাজ করেন। ২০১৪ সালে বাড়ির আঙিনায় পরীক্ষামূলকভাবে মাত্র ৫ শতাংশ জায়গায় মিশ্র ফলের বাগান শুরু করেন। শুরু থেকেই গতানুগতিক ধারার বাইরে ব্যতিক্রম কিছু করার চিন্তা ছিল। তাই দেশি গাছের বদলে ভারত থেকে সংগ্রহ করে আফ্রিকান বারোমাসি আমের কলম। পরের বছর বাগানের জায়গা বাড়ানো হয়। বর্তমানে বাগানটি দুটি খণ্ডে ২ একর জমিতে অবস্থিত।

mango-in-(1)

তারপর আর থেমে থাকতে হয়নি। আফ্রিকান বারোমাসি আম ছাড়াও সেখানে ফলছে ১৮ জাতের ফল। বর্তমানে বাগানে রয়েছে ১২০টি আফ্রিকান বারোমাসি আম গাছ, ৬৫টি আম্রপালি আম গাছ, ৬টি সুবর্ণরেখা আম গাছ, ৪শ’টি পাকিস্তানি হাইব্রিড লেবু গাছ (ট্রাই লেবু), ১১০টি চায়না-১ ও চায়না-৩ লিচু গাছ। এছাড়া কমলা, মাল্টা, বেদানা, ডালিম, আঙুর, লটকন, বিলম্বি, জামরুল, পলি পেয়ারা, চায়না পেয়ারা, বাউকুল, আপেল কুল, লন্ডনি লেবু ও সুপারী গাছ রয়েছে। এরমধ্যে আফ্রিকান বারোমাসি আম, পাকিস্তানি হাইব্রিড লেবু চাষ করে এলাকায় রীতিমত সাড়া ফেলে দিয়েছেন।

হুমায়ূন আহম্মেদ জানান, স্থানীয় বাজারে প্রতি কেজি আম বিক্রি হচ্ছে ৪শ’ থেকে ৫শ’ টাকা দরে। কমলা ২শ’ টাকা কেজি, লেবু বিক্রি হয় প্রতি হালি ৩০-৪০ টাকা। গত ১ বছরে ৪ টন আম, ৬ টন লেবু, ৫শ’ কেজি লিচু বিক্রি করে ৪ লাখ ৭৭ হাজার টাকা লাভ হয়েছে। বাগান থেকে এ পর্যন্ত তিনি প্রায় ৬০ লাখ টাকা আয় করেছেন। আয় থেকে সাংসারিক খরচ বাদে ১২ লাখ টাকায় কিনেছেন ৪ কাঠা জমি, ৫০ হাজার টাকায় বন্ধক রেখেছেন ১০ কাঠা জমি।

mango-in-(1)

তার সফলতায় বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ‘বেস্ট অব মেরিট ২০১৮’ পুরস্কার দেয়। তার উৎপাদিত বারোমাসি আমের নামকরণ করা হয়েছে বারোমাসি আম ‘হুমায়ূন-১২’। কয়রাটি ছাড়াও উলুয়াটি শুনুরাসহ আরও ৩টি গ্রামে এখন চাষ হচ্ছে এ আম। কয়রাটি গ্রামের এরশাদ মিয়া, খোকন মিয়া, শেখ চাঁন এবং শুনুরা গ্রমের খন্দকার আনিসুর রহমান উৎসাহিত হয়ে বারোমাসি ও আম্রপালির বাগান করে স্বচ্ছল হয়েছেন।

বাগান ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি গাছে থোকায় থোকায় আম ঝুলছে। আবার নতুন করে মুকুলও বের হচ্ছে। আফ্রিকান বারোমাসি জাতের একেকটি আমের ওজন ৮শ’ থেকে সর্বোচ্চ ১৬শ’ গ্রাম পর্যন্ত হয়। একেকটি লেবুর গড় ওজন ২৫০ গ্রাম।

mango-in-(1)

নেত্রকোনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘হুমায়ূন আহম্মেদের বাগানের ফলন ও বাজার দর ভালো দেখে অনেকেই এগিয়ে আসছেন। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে তাকে প্রশিক্ষণ ও উন্নত চাষাবাদে উৎসাহিত করা হয়েছে।’

কামাল হোসাইন/এসইউ/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।