দুগ্ধবতী গাভীর ওলান সুস্থ রাখতে কর্মশালা
বাংলাদেশের জাতীয় আয়ের ক্রমবর্ধমান অংশ দুগ্ধশিল্প। বাংলাদেশের দরিদ্রতা দূর করা এবং আত্মকর্মসংস্থান তৈরির পেছনে দুগ্ধশিল্পের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। বাংলাদেশে দুগ্ধশিল্প বিকাশমান হলেও ভূমি স্বল্পতার কারণে বেশিরভাগ খামারই এখনো ইনটেনসিভ পদ্ধতিতে (আবদ্ধ অবস্থায়) চলছে। এছাড়া বাংলাদেশের জাতীয় দুগ্ধ নীতিমালার কল্যাণে দুগ্ধউৎপাদনকারী গাভীর ক্ষেত্রে স্থানীয় দেশি জাত থেকে শংকর জাতে রূপান্তর করা সম্ভব হয়েছে। তবে এ শিল্প গড়ে তোলার পেছনে রয়ে গেছে কিছু অন্তরায়। তারমধ্যে অন্যতম দুগ্ধবতী গাভীর ওলান সুস্থ রাখা। কারণ ওলানের অন্যতম ব্যাধি হলো ম্যাস্টাইটিস বা ওলান প্রদাহ, যা দুগ্ধশিল্পের ব্যাপক অর্থনৈতিক ক্ষতির জন্য দায়ী।
প্রকৃতপক্ষে গবাদী পশুপালন এবং দুগ্ধউৎপাদনকারী পশু পালনের ক্ষেত্রে ম্যাস্টাইটিস বিশ্বব্যাপী এক আতংকের নাম। যা কেবল ওলান প্রদাহই করে না, বিভিন্ন প্রজনন জনিত রোগ এবং ক্ষুরা ব্যাধির জন্যও দায়ী। দুধের সাথে এসব জীবাণু মানুষের শরীরে প্রবেশ করে তৈরি করছে বিভিন্ন ধরনের সংক্রামক ব্যাধি। এশিয়ার বিভিন্ন দেশের মধ্যে সাবক্লিনিক্যাল ম্যাস্টাইটিসের প্রাদুর্ভাব রয়েছে বাংলাদেশেও। দুগ্ধ উৎপাদনে এ সাবক্লিনিক্যাল ম্যাস্টাইটিসের রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব এবং জীবাণুগুলো ছড়িয়ে ক্লিনিক্যাল ম্যাস্টাইটিসেও পরিণত করতে পারে।
> আরও পড়ুন- ঈদের গরুর যত্ন নেবেন যেভাবে
এই বৈশ্বিক সমস্যাকে নিয়ন্ত্রণের জন্য বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ওলান স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রণ গবেষণা কার্যক্রম শুরু হয় ২০১৬ সালে। ৩ বছর যাবৎ চলমান ‘ওলান স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রণ গবেষণা কার্যক্রম’র মাঠ পর্যায়ের এবং গবেষণাগারে সংগঠিত কাজের বেশির ভাগ অংশই সম্পূর্ণ হয়েছে। এসব কাজের থেকে প্রাপ্ত তথ্য, অভিজ্ঞতা, পরামর্শ এবং প্রতিক্রিয়া বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকার খামারিকে জানানো ও প্রশিক্ষিত করার লক্ষ্যে আডার হেলথ বাংলাদেশ (ইউএইচবি) এবং সিভাসু যৌথভাবে দিনব্যাপী প্রশিক্ষণের আয়োজন করে।
তারই ধারাবাহিকতায় ৫ম বারের মত দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মশালা আয়োজন করা হয়। যার মুখ্য উদ্দেশ্য ছিলো- অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে খামারির সচেতনতা বৃদ্ধি, বাঁটের সংক্রমণ বা ওলানপ্রদাহ নিয়ন্ত্রণে হাতেকলমে প্রশিক্ষণ, বাঁটের স্বাস্থ্য রক্ষা ও উন্নয়নে উপযুক্ত বাসস্থান, খাবার ব্যবস্থা, উপযুক্ত গবাদি প্রাণির জাত নির্বাচন, ওলানপ্রদাহ নিয়ন্ত্রণের উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের লিখিত বিবরণ সংরক্ষণ, ড্রাই কাউ থেরাপি ও তার ব্যবস্থাপনা।
এবারের অনুষ্ঠানটি গত ২৮ মার্চ সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। সিলেটের বাছাইকৃত ১০০ জন দুগ্ধ খামারি এতে অংশগ্রহণ করেন। সকাল সাড়ে ৮টায় সেন্ট্রাল অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠানটি শুরু হয়। সূচনা বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জারি ও থেরিওজেনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. কাউসার হোসেন।
> আরও পড়ুন- যেভাবে গরু মোটাতাজা করা যায়
অনুষ্ঠানের ১ম পর্বে দুগ্ধ খামারিদের উদ্দেশে বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন ড. হাবিবুর রহমান ও প্রফেসর ড. মো. মিজানুর রহমান। ২য় পর্বে হাতেকলমে প্রশিক্ষণ দেন রিসোর্স পার্সন ডা. মো. নুরুল আমিন ও ড. মো. শফিকুর রহমান। ৩য় পর্বে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উপস্থাপন করেন ডা. শুভ সিংহ, ডা. দেলোয়ার হোসেন, ডা. মো. নুরুল আমিন, ডা. ফরহাদ হোসেন, ড. মো. শফিকুর রহমান ও ডা. মো. আমজাদ হোসেন।
প্রতি পর্বেই প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে খামারিদের অংশগ্রহণ ছিল স্বতঃস্ফূর্ত। সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রফেসর ড. মো. মতিয়ার রহমান হাওলাদার। বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রফেসর ড. এটিএম মাহবুব-ই ইলাহি, ডা. মো. ফরহাদ হোসেন, ডা. আতিয়ার রহমান। প্রশিক্ষণ কর্মসূচির সারমর্ম তুলে ধরেন প্রফেসর ড. মো. আহাসানুল হক।
এসইউ/এমকেএইচ