ডাকাতিয়ার কেন এই মরণদশা
‘ডাকাতিয়া’ নামটি শুনলে চিনবে না এমন লোক বাংলাদেশে খুব কমই পাওয়া যাবে। রূপ, যৌবন, গুণ সবই ছিল তার। হঠাৎ করেই যেন ভিন্ন একরূপে অবতীর্ণ হলো নদীটি। চার নদী বেষ্টিত জেলা চাঁদপুর। ডাকাতিয়া নদী তার মধ্যে অন্যতম। এক সময়ের প্রবল স্রোত আর জোয়ার-ভাটার নদীটি এখন ধ্বংসের মুখে। বিস্তারিত জানাচ্ছেন রিফাত কান্তি সেন-
বিভিন্ন বর্জ্য-আবর্জনা ফেলে নদীটিকে যেন ময়লার ভাগাড় হিসেবে গড়ে তুলেছে। নদী দখল, আবর্জনা ফেলা, নদী খনন না করাসহ বেশকিছু কারণেই নদীটি তার সৌন্দর্য হারাতে বসেছে। মানুষের উদাসীনতার কারণে নদীটি এখন মরা নদী হিসেবেই সবার কাছে পরিচিত। ডাকাতিয়ার বর্তমান অবস্থা এমন যেন এটি কোন নদী নয়, মনে হবে ডাস্টবিন। আর ডাস্টবিনে পড়ে আছে ময়লা। ময়লার স্তূপ থেকে বাতাসে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। এতে পরিবেশও মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে। নদী পাড়ের মানুষের জীবনও দুর্বিসহ হয়ে উঠছে। বাতাসে ছড়াচ্ছে রোগ-জীবাণু। এতে পরিবেশের সাথে সাথে মানুষের শরীরেও নানা রোগ-ব্যধি জন্ম নিতে শুরু করেছে। আবর্জনা পঁচে পানির সাথে মিশে মৎস্য সম্পদের জন্যও হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। নদীতে মাছ নেই বললেই চলে। দূষিত ডাকাতিয়ার এমন দূরাবস্থা দেখে বিস্মিত হয়েছেন নদী গবেষকরাও।
নদীটি চাঁদপুর সদরের বাগাদী নানুপুর স্লুইচ গেইট হয়ে প্রবেশ করেছে ফরিদগঞ্জে। সদর ও পৌরসভার বাজারে ব্যবসায়ীদের জন্য নির্ধারিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা না থাকায় নদীতেই ফেলছে ময়লা। এব্যাপারে নুর নবী নোমান বলেন, ‘ডাকাতিয়া সিআরপি বেড়িবাঁধের আগে খুব প্রভাবশালী নদী ছিল। বেড়িবাঁধ হওয়ার কারণে নদী এখন মরা ডাকাতিয়ায় পরিণত হয়েছে। এখানে পানি বেশি দূষিত হয় শুষ্ক মৌসুমে। তখন কচুরিপানা এবং নানা আবর্জনা পানি দূষিত করে। দেশীয় প্রজাতির মাছ এখন বিলুপ্তির পথে।’
স্থানীয় আবদুর রহমান গাজী, রাজিব ও কালাম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই নদীটি আমরা দেখে আসছি। নদীর পাড়েই হেসে-খেলে বড় হয়েছি। এখন যে অবস্থা তা সত্যি নিন্দনীয়। পুরো বাজারের ময়লা-আবর্জনা এনে পানিতে ফেলে। অচিরেই কর্তৃপক্ষ দূষণের হাত থেকে নদীটিকে বাঁচাবে- এটাই কামনা করি।’
জাহাঙ্গীর হোসেন নৌকায় করে যাত্রীদের পার করেন। ডাকাতিয়ার এমন বাজে অবস্থায় অতিষ্ঠ হয়ে তিনি বলেন, ‘যত ময়লা-ছয়লা আছে সব আইন্না নদীত হালায়। মাইনষে গোসল করতে হারে না গন্ধের জালায়। হোলা হাইনের গোডাগাডি উইড্ডা যায়। এই আরকি অবস্থা।’
বিষয়টি নিয়ে নদীর পার্শ্ববর্তী জনগণের মাঝেও চাপা ক্ষোভ রয়েছে। অনেকেই নিরুপায়, তাই কোন কিছু না বলে চুপচাপ থাকতেই পছন্দ করেন। তবে যেভাবে ময়লা-আবর্জনা ফেলে নদীটিকে নষ্ট করা হচ্ছে, তাতে একদিন ডাকাতিয়ার ফরিদগঞ্জের অংশটি থাকবে কি-না সে নিয়েও সন্দেহ রয়েছে। অচিরেই কর্তৃপক্ষ নদীটি সংরক্ষণের ব্যবস্থা নিবেন বলে প্রত্যাশা সবার।
এসইউ/আরআইপি