ভাসমান খাঁচায় মাছ চাষ- প্রথম পর্ব

জাগো নিউজ ডেস্ক
জাগো নিউজ ডেস্ক জাগো নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২:০২ পিএম, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৭

জালের খাঁচায় মাছ চাষ একদিন জনপ্রিয় হবে। হবে হাজারও মানুষের কর্মসংস্থান। বাড়বে আমিষের উৎপাদন। শক্ত হবে জাতীয় অর্থনীতি। তাই আসুন জেনে নেই ভাসমান খাঁচায় মাছ চাষের উপায়। আজ প্রথম পর্ব-

কোথায় করবেন
জালের খাঁচায় মাছ চাষের আদর্শ মাধ্যম হচ্ছে নদী-নালা, খাল-বিলসহ উন্মুক্ত জলাশয়। যেখানে প্রবল স্রোত নেই, অথচ আছে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ।

উপাদান
মশারির মতো বিশাল আকারের জাল প্রবাহমান পানিতে ডুবিয়ে চারকোণা বেঁধে ২-৩ ইঞ্চি আকারের পোনা ছেড়ে মাস চারেক লালন-পালন করতে হবে।

কেমন উৎপাদন
পুকুরে যে পরিমাণ উৎপাদন হবে তার অন্তত বিশ গুণ বেশি উৎপাদন হবে এখানে। কারণ পুকুরের পানি বদ্ধ আর এখানকার পানি সবসময়ই প্রবাহমান। তাই এখানকার পানিতে অক্সিজেনের পরিমাণ বেশি, যা মাছ বৃদ্ধির জন্য সহায়ক। পুকুরে সরবরাহকৃত খাবারের উচ্ছিষ্ট ও মাছের মল জমে পানি দূষিত হয়, এখানে সে সুযোগ নেই। পুকুর বদ্ধ হওয়ায় জৈব খাবারের পরিমাণ কম। এখানে জৈব খাবার উৎপাদনের সুযোগ অনেক বেশি।

উদ্ভাবক
বাংলাদেশে নতুন এ ব্যবস্থাটির প্রবর্তন করেন গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ থানার উলুখেলিক গ্রামের হাবিবুর রহমান। তিনি স্থানীয় বালু নদীতে বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করে সফল হয়েছেন। এখন তিনি বাণিজ্যিকভাবে এ পদ্ধতিতে মাছ চাষ করছেন।

উপযুক্ত স্থান
দেশের ব্রহ্মপুত্র, পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, হালদা, সুরমাসহ অধিকাংশ নদ-নদীর বাঁকে এ ধরনের মাছ চাষ সম্ভব। এ ক্ষেত্রে পানি দূষণমুক্ত, খরস্রোতমুক্ত এবং শত্রুমুক্ত হওয়া প্রয়োজন।

খাঁচা স্থাপন
খাঁচা যেকোনো মাপের হতে পারে। ১ বর্গ মিটার (২ হাত-২ হাত প্রায়), ৫ বর্গ মিটার, ১০.৫০ বা ১০০.৫০ বর্গ মিটার মাপের। এ খাঁচা বড় পুকুরেও বসাতে পারেন। তবে সেখানে সমস্ত পুকুরের আয়তনের মাত্র ৫ ভাগ অথবা ১০ ভাগ ব্যবহার করতে পারবেন। প্রতি ঘনমিটারে (২ হাত- ২ হাত- ২ হাত প্রায়) ১০ কেজি থেকে ১৫ কেজি পেতে পারেন ৪-৫ মাসে। খাঁচা বসাতে হবে চলমান খোরা পানিতে। যেমন বর্ষা মৌসুমে যে সমস্ত এলাকা ডুবে যায়, সেখানে অথবা নদীর বাঁকে যেখানে স্রোত থাকে খুব কম। খাঁচা বসাতে পানির গভীরতা থাকতে হবে সর্বনিম্ন ১.২ মিটার বা ৪৬ ইঞ্চি। তবে সর্বস্ব পানির উচ্চতায় কোনো হিসাব নেই। খাঁচা বসাতে খাঁচার মাপে উপরে একটা বাঁশের ফ্রেম তৈরি করতে হবে এবং চার কোণায় বাঁশ পুঁতে শক্ত করে বেঁধে দিতে হবে। পানি বাড়লে খাঁচা ওপরে তুলে দিতে হবে, পানি কমলে নিচু করে দিতে হবে। খাঁচার ওপর খোলা এবং ৫ দিকে জাল এবং পানির ওপরে ১ ফুট উঁচু রাখতে হবে।

কিসের তৈরি
তিন বা চার ইঞ্চি থেকে এক ইঞ্চি ফাঁস আকারের মূল পলিথিন জাল বা এইচডিপি জাল, খাদ্য আটকানোর বেড় তৈরির জন্য পলিয়েস্টার কাপড়, নাইলনের দড়ি, এক ইঞ্চি জিআই পাইপ, ভাসমান খাঁচার জন্য পিভিসি ব্যারেল বা ড্রাম, খাঁচা স্থির রাখার জন্য অ্যাঙ্কর ও বাঁশ। জালের খাঁচা বিশেষ ধরনের পলিথিন জাতীয় সুতা থেকে তৈরি। এ জাল সাধাণত গিরাবিহীন মেশিনে তৈরি করা হয়। চাইলে গিড়া দিয়ে হাতেও তৈরি করে নিতে পারেন। বিদেশ থেকে আমদানি করা জাল বাজারেও পাওয়া যায়।

খাঁচা তৈরি
প্রথমেই জিআই পাইপ দিয়ে সাধারণত দৈর্ঘ্য ২০ ফুট×প্রস্থ ১০ ফুট×উচ্চতা ৬ ফুট বা দৈর্ঘ্য ১২ ফুট×প্রস্থ ১০ ফুট×উচ্চতা ৬ ফুট সাইজের আয়তকারের ফ্রেম তৈরি করতে হবে। ওই ফ্রেমের প্রতিটি কোণে ১০ ফুট উচ্চতাবিশিষ্ট একটি করে জিআই পাইপ ঝালাই করে বসিয়ে দিতে হবে। এরপর ফ্রেমের চারপাশে জাল বেঁধে দিতে হবে। প্রতি দুই ফ্রেমের মধ্যে তিনটি করে প্লাস্টিকের ড্রাম স্থাপন করে পানিতে সারিবদ্ধভাবে ফ্রেমগুলো স্থাপন করতে হবে। প্রয়োজনীয় সংখ্যক নোঙর দিয়ে খাঁচাটি পানির নির্দিষ্ট স্থানে বসাতে হবে। এ ক্ষেত্রে জিআই পাইপের স্থলে বাঁশও ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে সে ক্ষেত্রে স্থায়িত্ব কম হয়।

এসইউ/আইআই

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।