খাবার টেবিল থেকে হারিয়ে যাবে কফি ও চকলেট
সভ্যতার বিবর্তনের সঙ্গে পাল্লা দিতে না পেরে ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে নৃগোষ্ঠীর সংখ্যা। মানব সভ্যতার সর্বাধুনিক পর্যায়ে নৃগোষ্ঠীদের হারিয়ে যাওয়া অনেক আগে থেকেই উদ্বেগের বিষয়। কিন্তু সম্প্রতি এই উদ্বেগের সঙ্গে নতুন করে যোগ হয়েছে খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়। নতুন এক গবেষণার দাবি, এক সময় খাবার টেবিল থেকে কফি ও চকলেট হারিয়ে যাবে। সম্পূরক এই খাবার না খেয়েই মানুষকে আগামী দিনগুলোয় অভ্যস্ত হতে হবে।
তবে আশার খবর বিশেষ ধরনের কৃষি প্রজনন ব্যবস্থা ও কৃষিবৈচিত্র্য এই খাদ্যগুলোকে বিলুপ্তির হাত থেকে বাঁচাতে পারে।
সাম্প্রতিককালে বন্যপ্রাণী বিলুপ্তি বিষয়ে নানা গবেষণা ও আলোচনা হয়েছে। কিন্তু উপেক্ষিত থেকেছে খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বায়োডারভারসিটি ইন্টারন্যাশনাল সম্পূরক খাদ্য বিলুপ্তি বিষয়ে গবেষণা করে। কীভাবে এই খাদ্যগুলো বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করা যায় সে বিষয়েও অভিমত দেয় গবেষণাকারী প্রতিষ্ঠানটি।
বায়োডায়ভারসিটি ইন্টারন্যাশনালের মহাপরিচালক অ্যান টুতলিয়ার (Ann Tutwiler) বলেন, ২০ বছর আগেও আমাদের জীবনে অর্গানিক খাদ্যের বিষয়টি ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিল। কিন্তু কোনো কারণেই হোক খাদ্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি উপেক্ষিত থেকে গেছে। তিন ধরনের খাদ্য ধান, গম, ভুট্টা আমাদের খাদ্যজগতের ৫০ শতাংশ ক্যালরি সরবরাহ করে। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ভবিষ্যতে এই খাদ্য উৎপাদন বিপর্যস্ত হতে পারে।
‘এ থেকে রক্ষা পেতে হলে কৃষিখাতে জীববৈচিত্র্যের বিষয়টি গুরুত্ব দিতে হবে’ বলেন তিনি।
অ্যান টুতলিয়ার বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ২০৫৫ সালের মধ্যে বনজ আলু পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে যাবে। সারা বিশ্বে চকলেট উৎপাদনে ৭০ শতাংশ চাহিদা পূরণকারী কোকো গাছ ঘানা ও আইভরি কোস্টে থাকবে না, যদি তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পায়। ১৯৬০ সালের পর থেকে তাঞ্জানিয়ায় কফি উৎপাদনের পরিমাণ এরইমধ্যে অর্ধেকে নেমে এসেছে।
গার্ডিয়ানে সম্প্রতি প্রকাশিত এক নিবন্ধে অ্যান টুতলিয়ার বলেন, ‘দেশি বীজের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা, তাপ সহন ক্ষমতা অনেক বেশি। বিশেষ উপায়ে এই বীজগুলো সংরক্ষণ করতে হবে এবং সেগুলো উৎপাদনে ব্যবহার করতে হবে।’
বায়োডারভারসিটি ইন্টারন্যাশনালের অভিমত, জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে শিল্পকেন্দ্রিক কৃষি ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। কৃষকদের উচিৎ হবে একই সময়ে একাধিক ফসল উৎপাদনের দিকে মনোযোগ দেওয়া। পাশাপাশি বিকল্প খাদ্যের চাহিদা বাড়াতে হবে।
খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ক এই গবেষণা নিশ্চয় চোখ খুলে দেবে সংশ্লিষ্টদের। আগামী ৫ অক্টোবর লন্ডনে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে খাদ্য ও প্রাণী বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলন। আশা করা যাচ্ছে এই সম্মেলনে মানুষ, পশুপাখি সর্বোপরী পৃথিবীর জন্য নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থা, ভবিষ্যত কৃষি ব্যবস্থা কেমন হওয়া উচিৎ সেই বিষয়ে পরীক্ষামূলক বিল উত্থাপিত হবে। সূত্র : ডয়েচে ভেলে।
একে/আরআইপি