গবাদি পশুর রোগ ও প্রতিকার- দ্বিতীয় পর্ব
আমাদের গৃহপালিত বা খামারের গবাদি পশুর মাঝে মাঝে বিভিন্ন রোগ-ব্যাধি দেখা দেয়। এতে গবাদি পশুর উৎপাদন কমে যায়। এসব বিষয়ে সবারই প্রাথমিক জ্ঞান থাকা আবশ্যক। আসুন জেনে নেই গবাদি পশুর রোগ ও তার প্রতিকার সম্পর্কে। আজ থাকছে দ্বিতীয় পর্ব-
পোকাপড়া রোগ
প্রধানত কচলিওওমায়া হোমিনিভোরাক্স ও ক্রিসোমায়া বেজিয়ানা দ্বারা পোকাপড়া রোগ বা স্ক্রুওয়ার্ম মিয়াসিস হয়ে থাকে। এটি একটি মাছি ঘটিত রোগ। এসব মাছির লার্ভা ত্বকের ক্ষত আক্রান্ত করে এ রোগ সৃষ্টি করে। তাই এ রোগকে ক্ষত মিয়াসিস বলে।
লক্ষণ
১. লার্ভা ক্ষত ছিদ্র করে গর্তের সৃষ্টি করে।
২. আক্রান্ত টিস্যুতে ক্রমশ নিক্রোসিস (পঁচা) ও রক্ত ক্ষরণ হয়।
৩. ক্ষতে রক্ত ক্ষরণের কারণে অ্যামোনিয়া ও প্রোটিনের পরিমাণ হ্রাস পায়।
৪. ক্ষত থেকে বাদামি বর্ণের দুর্গন্ধযুক্ত নিঃস্রাব পড়ে, যা অন্যান্য প্রজাতির মাছিকে আকৃষ্ট করে।
৫. এই ক্ষতে অন্যান্য মাছিও ডিম দেয় এবং একই সাথে বহু প্রজাতির মাছির আক্রমণ ঘটে।
৬. জ্বর, টকসেমিয়া ও ডিহাইড্রেশন দেখা যায়।
৭. চিকিৎসাবিহীন অবস্থায় পশু মারা যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আরও পড়ুন- গবাদি পশুর রোগ ও প্রতিকার- প্রথম পর্ব
চিকিৎসা
লার্ভানাশক ও জীবাণুনাশক পদার্থ দ্বারা পোকাপড়া ক্ষতের চিকিৎসা করা হয়। প্রথমে ক্ষতস্থান থেকে লার্ভাগুলো চিমটার সাহায্যে তুলে ৭০% অ্যালকোহলযুক্ত বোতলে সংগ্রহ করতে হয়। সমপরিমাণ তারপিন তেল ও ক্লোলফর্মে গজ চুবিয়ে ক্ষতের একেবারে ভিতরে ঢুকিয়ে দিয়ে পরদিন গজ টানলে গজের প্রান্তে লার্ভাগুলো দেখা যাবে। পরে ক্ষত পরিষ্কার করে ডাস্টিং পাউডার দিয়ে ক্ষত ড্রেসিং করতে হবে। এছাড়া ক্রেসল ও তারপিন তেল প্রয়োগে কার্যকর হয়।
লার্ভানাশক হিসেবে ৫% লিনোডন অথবা ৩% কোয়ামাকোস ব্যবহার কার্যকরী। আইভারমেকটিন ০.২ মিলিগ্রাম বা কেজি হিসেবে ত্বকের নিচে একবার ইনজেকশন দিলে ২ দিনের মধ্যে সব লার্ভা মারা যায় এবং ১৬-২০ দিন প্রতিরোধ করে।
প্রতিরোধ
• মাছির উপদ্রব নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
• দেহে যাতে ক্ষত সৃষ্টি না হয় সে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
• সম্ভব হলে ক্ষতস্থান পলিথিন বা কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে যাতে মাছি না পড়ে। যথাসম্ভব ক্ষতস্থানের চিকিৎসা করতে হবে।
• আইভারমেকটিন ০.২ মিলিগ্রাম বা কেজি হিসেবে খোঁজা করার সময় ত্বকের নিচে ইনজেকশন দিলে ১৬-২০ দিন এ রোগ থেকে প্রতিকার সম্ভব।
• বায়োলজিক্যাল প্রতিরোধ-পিউপাকে কালচার করে কোবাল্ট ৬০ দ্বারা ইরেডিয়েশনের মাধ্যমে পুরুষ মাছিকে বন্ধা করে ছেড়ে দিলে স্ত্রী মাছির সাথে মিলন হয়ে অনুর্বব ডিম সৃষ্টি হয়, ফলে মাছির বংশ বিস্তার রোধ হয়।
এসইউ/জেআইএম