সখীপুরে একদিনেই বিক্রি হয় দুই কোটি ডিম

মামুন হায়দার
মামুন হায়দার মামুন হায়দার , সাংবাদিক
প্রকাশিত: ০৭:৫২ এএম, ১৭ আগস্ট ২০১৭

টাঙ্গাইলের সখীপুরে ডিম উৎপাদনে রেকর্ড ছাড়িয়ে যাচ্ছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে দেশের কোনো উপজেলায় ডিম উৎপাদনে নতুন রেকর্ড গড়তে যাচ্ছে সখীপুর উপজেলাটি। পোল্ট্রি খামারি ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

স্থানীয় প্রাণিসম্পদ কার্যালয়, খামারি ও আড়তদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সখীপুর, ভালুকা, ফুলবাড়ীয়া, ঘাটাইল, কালিহাতী উপজেলাসহ আশপাশের কয়েকটি উপজেলায় প্রায় অর্ধলক্ষ ছোট, বড় ও মাঝারি পোল্ট্রি খামার গড়ে উঠেছে। দেশের মধ্যে অঞ্চলটি এখন পোল্ট্রি শিল্পে প্রধান অঞ্চল হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছে। ডিম ও মাংসের মুরগি কিনে নিতে ঢাকা, মুন্সীগঞ্জ, কাপ্তানবাজার, নারায়ণগঞ্জ এবং চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের কয়েকশ’ ট্রাক ঢুকছে এলাকায়। দেশের বেশ চাহিদার ডিম ও মাংসের জোগান দেওয়া হচ্ছে অঞ্চলটি থেকে।

Sakhi

ডিম বিক্রির জন্য সখীপুর উপজেলার বিভিন্ন বাজার ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অর্ধশত আড়ৎ গড়ে উঠেছে। এরমধ্যে সখীপুর সদর, কচুয়া, কালিয়া, বড়চওনা, ভূয়াইদ, কুতুবপুর, জোরদিঘী, সাগরদিঘী, আড়াইপাড়া, কালিদাশ, বানিয়ারছিট, মহনন্দপুর, তৈলধারা, গড়বাড়ি, দিঘীরচালা, গজারিয়া, দাড়িয়াপুর, হাতীবান্ধা, যাদবপুর ও বহেড়াতৈল বাজার উল্লেখযোগ্য।

প্রতিটি আড়তে প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ লাখ এবং ৫ থেকে ৪ লাখ পিচ ডিম যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। খামারিদের কাছে অগ্রীম ডিম কিনছেন স্থানীয় আড়তদাররা। খামারিরা ভ্যানগাড়ি ও ঠেলাগাড়িতে করে আড়তদারদের কাছে পাঠাচ্ছে।

Sakhi

কচুয়া বাজারের আড়তদার মামুন শিকদারসহ একাধিক আড়তদার জানান, দেশের আড়তদার ব্যবসায়ীদের দুইশ’ থেকে আড়াইশ’ ডিম পরিবহনের ট্রাক প্রতিদিনই ঢুকছে সখীপুরে। ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ পিচ ডিম যাচ্ছে প্রতিটি গাড়িতে।

ঘোনারচালা গ্রামের খামারি মোতালেব হোসেনসহ একাধিক খামারি জানান, অন্যান্য বছরের তুলনায় চলতি বছর তাদের লেয়ার খামারে দ্বিগুণ ডিম উৎপাদন হচ্ছে। গত তিন বছর দরপতন তেমন না হলেও চলতি বছরের ৩-৪ মাস লোকসান গুনতে হয়েছে। বর্তমান বাজার স্বাভাবিক হওয়ার পথে এবং ডিম উৎপাদনে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে।

উপজেলা পোল্ট্রি শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি মো. নজরুল ইসলাম খান ও সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম ডিম উৎপাদনে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে জানিয়ে জাগো নিউজকে বলেন, ‘এ সাফল্যকে ধরে রাখতে ডিম উৎপাদনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের আরও বেশি উদ্যোগী হতে হবে। বৃহত্তর সম্ভাবনা খাতে খামারিদের নানা সমস্যা সমাধানে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজর দেওয়া উচিত।’ ডিম উৎপাদনের প্রান্তিক খামারি, উদ্যোক্তা ও শ্রমিকদের জীবন মানের উন্নতি যাতে নিশ্চিত হয় সেদিকে সবাইকে নজর দিতে হবে- এমন প্রত্যাশার কথা যোগ করেন তারা।

Sakhi

টাঙ্গাইল জেলা পোল্ট্রি শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি অধ্যক্ষ সাঈদ আজাদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘নানা সিন্ডিকেট ও ভেজালে বেশকিছু খামার বন্ধ হওয়ার পরও এ শিল্পের অগ্রগতি থেমে থাকেনি। বেসরকারি পর্যায়ে ক্ষুদ্র ও মাঝারি মানের উদ্যোক্তাদের অক্লান্ত শ্রম আর সাধনায় এসেছে সাফল্য, ঘটেছে নীরব বিপ্লব।’

তিনি জানান, পোল্ট্রি শিল্পকে কেন্দ্র করে পরিচালনা, পরিচর্যা, বাজারজাতকরণ এবং ওষুধ ও খাদ্য উৎপাদন কার্যক্রমটি ভেজালমুক্ত হলে এ খাতে আরো ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকারে ব্যবসা এবং ব্যাপক কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. এসএম উকিল উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘নতুন আশা আর স্বপ্ন নিয়ে উদ্যোক্তারা যে পোল্ট্রি খামার গড়ে তুলেছেন, তা অবশ্যই আশার কথা। পোল্ট্রি শিল্পের আরো উন্নয়ন সম্ভব হলে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল হবে। সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এই পদক্ষেপ সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন।’

এসইউ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।