হলুদের উৎপাদন বাড়াতে চাইলে


প্রকাশিত: ০৮:০০ এএম, ৩০ এপ্রিল ২০১৭

মসলা হিসেবে হলুদ বাংলাদেশে খুবই জনপ্রিয়। মসলা ছাড়াও বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠানে বা ওষধি হিসেবেও হলুদের ব্যবহার খুবই ব্যাপক। বাংলাদেশের প্রায় দশভাগ এলাকাজুড়ে হলুদ চাষ হয়। এছাড়া বিস্তৃত পাহাড়ি এলাকায় জুমচাষে হলুদ একটি বিরাট অংশ দখল করে আছে।

উৎপাদন
ছায়াযুক্ত সমতল স্থানে হলুদ চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। দেশের প্রায় ১৮ হাজার হেক্টর জমিতে হলুদ চাষ হয়। এর মোট উৎপাদন প্রায় ৭২ হাজার টন। বারি উদ্ভাবিত হলুদ চাষে এলাকা বাড়িয়ে এর উৎপাদন আরো বাড়ানো সম্ভব।

প্রক্রিয়াজাতকরণ
হলুদ সংগ্রহের পর প্রক্রিয়াজাতকরণের বিভিন্ন ধাপগুলো হলো- পরিষ্কার করা, বাছাই করা, সিদ্ধ করা, শুকানো, পলিস করা এবং গুড়া করা। প্রতি ৪০ কেজি কাঁচা হলুদ সিদ্ধ করে শুকিয়ে ৮-১০ কেজি শুকনা হলুদ পাওয়া যায়। এরপর মানসম্পন্ন হলুদ ও কাঙ্ক্ষিত রং পেতে গুড়া করার আগে হলুদকে পলিস করতে হয়। পলিসের কাজটি ঠিকমতো করা না হলে হলুদের গুড়ার সঙ্গে মিশে এর গুণ ও রং নষ্ট করে। এমনকী স্বাস্থ্যহানি ঘটায়। কৃষকরা সাধারণত বস্তায় ভরে হাত দিয়ে পিটিয়ে পলিসের কাজ করে থাকে। পাহাড়ি এলাকায় বাঁশের তৈরি ঢেঁকির সামনে বস্তাভর্তি হলুদ বেঁধে পলিস করে। সেজন্য আধুনিক যন্ত্র হলে ভালো হয়।

পলিস যন্ত্রের বৈশিষ্ট্য
• স্থানীয়ভাবে প্রাপ্ত লৌহসামগ্রী দিয়ে তৈরি করা যায়।
• মাত্র ০.৫ অশ্বশক্তির বৈদ্যুতিক মোটর দ্বারা চালানো সম্ভব।
• একজন মানুষ সহজেই এ যন্ত্র চালাতে পারে।
• রৌদ্র তাপে শুকিয়ে গরম অবস্থায় পলিস করলে ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় ও গুনাগুন ভাল হয়।

যন্ত্রের বিবরণ
• যন্ত্রটি এমএস অ্যাঙ্গেলবারম, এমএস রড, এমএস শীট, এমএস ফ্লাটবার, ডি-পুলি, রিডিউসার গিয়ার বক্স, বিয়ারিং ইত্যাদি দিয়ে তৈরি।
• ষড়ভুজাকৃতির ড্রামের ভিতরের দিকে খাঁজ কাটা প্লেট বসানো থাকে।
• ঘূর্ণায়মান ষড়ভুজাকৃতির ড্রামের দৈর্ঘ্য ৬১০ মিলিমিটার, বাহিরের ব্যাস ৬৯০ মিলিমিটার এবং ভেতরের ব্যাস ৫৯০ মিলিমিটার।

যন্ত্রের মাপ : ১০৪০ x ৮৫০ x ১৪৫০ মিলিমিটার।
প্রতি ব্যাচে হলুদের ওজন : ৩০ কেজি।
যন্ত্রের ওজন : ৯০ কেজি।
কার্যক্ষমতা : ৬৫-৯০ কেজি বা ঘণ্টা।
প্রয়োজনীয় শ্রমিক : ১ জন।
মূল্য : ৩০,০০০ টাকা (মোটরসহ)।

কার্যপ্রণালি
যন্ত্রটি একটি ছায়ামুক্ত সমতল ও খোলা জায়গায় বসান। হলুদ পলিসের আগে পরিমাণমতো সিদ্ধ করে ভালোভাবে শুকিয়ে নিন। যন্ত্র ব্যবহারের দিন সকালের রোদে পুনরায় শুকিয়ে হালকা গরম করে নিলে মাড়াই ক্ষমতা ও গুণগতমান বৃদ্ধি পায়। প্রথমে ষড়ভুজাকৃতির ড্রামে ৩০ কেজি হলুদ ঝুড়ি দ্বারা ঢেলে দরজা ভালো করে বন্ধ করে দিতে হবে। তারের সাহায্যে বৈদ্যুতিক লাইনে মোটরকে সংযোগ দিন। সুইচ অন করলে মোটরটি চালু হবে এবং ড্রামটি ঘুরতে থাকবে। ড্রামের ঘূর্ণনের সময় ভিতরকার খাঁজকাটা অংশের দ্বারা হলুদের বহিরাংশের চামড়া ও ময়লা পরিষ্কার হয়ে যায়। ড্রামের ফাঁকা অংশ দিয়ে ময়লা নিচে পড়তে থাকে। আনুমানিক ২০ মিনিটে এক ব্যাচের হলুদ পলিস হয়ে যায়। পলিসকৃত হলুদকে ড্রামের দরজা খুলে বের করে এনে পুনরায় নতুন ব্যাচে ৩০ কেজি হলুদ ড্রামে প্রবেশ করাতে হয়। যন্ত্রটি প্রতিবার ব্যবহারের পর অবশ্যই ভালোভাবে পরিষ্কার করে ঘূর্ণায়মান অংশে প্রয়োজনীয় পিচ্ছিলকারক পদার্থ দিয়ে নিরাপদ স্থানে সংরক্ষণ করুন।

এসইউ/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।