পাকুন্দিয়ায় গাছ আলু চাষে বদলাচ্ছে কৃষকের জীবন

এসকে রাসেল
এসকে রাসেল এসকে রাসেল , জেলা প্রতিনিধি, কিশোরগঞ্জ
প্রকাশিত: ১২:২৬ পিএম, ০২ অক্টোবর ২০২৫
মাচার ওপরে লতায় ঝুলে থাকে এ আলু, ছবি: জাগো নিউজ

কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় কৃষকদের নতুন সম্ভাবনার আলো দেখাচ্ছে একটি সবজি—গাছ আলু। সাধারণ আলুর মতো মাটির নিচে নয় বরং মাচার ওপরে লতায় ঝুলে থাকে এ আলু। স্থানীয়রা একে ডাকেন ‘পান আলু’ বা ‘গাছ আলু’। কয়েক বছর আগেও যেখানে এটি পরীক্ষামূলকভাবে সীমিত জমিতে চাষ করা হতো। এখন তা বাণিজ্যিকভাবে বিস্তৃত হচ্ছে।

বিস্তীর্ণ জমিতে গাছ আলুর চাষ

উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে এখন চোখে পড়ছে গাছ আলুর মাচা। দূর থেকে দেখলে মনে হয়, যেন কোনো সবুজ জঙ্গল দাঁড়িয়ে আছে। ধুন্দল বা চিচিঙা তোলার পর একই মাচায় গাছ আলুর চারা রোপণ করা হয়। মাত্র তিন থেকে চার মাসের মধ্যেই পাওয়া যায় ফলন।

পাকুন্দিয়ায় গাছ আলু চাষে বদলাচ্ছে কৃষকের জীবন

কম খরচে বেশি লাভ

কৃষকদের দাবি, গাছ আলু চাষে খরচ অনেক কম। সার বা কীটনাশকের তেমন প্রয়োজন হয় না। কৃষক আব্দুল কাদের বলেন, ‘এক বিঘা জমিতে আমার খরচ হয়েছে প্রায় ৩৫ হাজার টাকা। আলু বিক্রি করে পেয়েছি ১ লাখ টাকার মতো। খরচ বাদ দিয়ে ভালো লাভ হয়েছে।’

কৃষক সফির উদ্দিন বলেন, ‘বর্ষার শেষে বাজারে যখন সবজির সরবরাহ কম থাকে; তখন পাই গাছ আলুর ফলন। বাজারে প্রচুর চাহিদা থাকে, তাই দামেরও কমতি নেই। এখন কেজিপ্রতি ৩৫ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি করছি।’

বাজারে বাড়ছে চাহিদা

বর্তমানে সাধারণ আলু যেখানে কেজিপ্রতি ২৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে; সেখানে গাছ আলুর দাম প্রায় দেড়গুণ বেশি। কৃষকদের হিসাব অনুযায়ী, মাত্র ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা খরচ করে এক মৌসুমে লাখ টাকার মুনাফা পাওয়া সম্ভব। অতিরিক্ত লাভের কারণেই প্রতিদিন নতুন নতুন কৃষক গাছ আলুর আবাদে ঝুঁকছেন।

পাকুন্দিয়ায় গাছ আলু চাষে বদলাচ্ছে কৃষকের জীবন

আরও পড়ুন
গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ করে লাভবান হচ্ছেন কৃষকেরা 
টাঙ্গাইলে ৫৮ কোটি টাকার হলুদ বিক্রির সম্ভাবনা 

কৃষি বিভাগের আশাবাদ

কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা গাছ আলুকে বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় নতুন অর্থকরী ফসল হিসেবে দেখছেন। তাদের মতে, এটি শুধু একটি নতুন সবজি নয় বরং দেশের কৃষিখাতের জন্য এক নতুন দিগন্ত খুলে দিচ্ছে। বিশেষ করে বর্ষার পরে যখন জমিতে অন্য কোনো ফসল ভালো ফলন দিতে পারে না; তখন গাছ আলু কৃষকের জন্য একটি লাভজনক বিকল্প হিসেবে কাজ করছে।

চরফরাদী ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা এমদাদুল হক বলেন, ‘গাছ আলু এ এলাকার কৃষকদের জন্য নতুন সম্ভাবনা হয়ে উঠেছে। খুব অল্প খরচে ভালো ফলন পাওয়া যাচ্ছে। বাজারেও এর চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। আমরা নিয়মিত কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি, যেন তারা সঠিক সময়ে চারা রোপণ করেন এবং মাচার যত্ন নেন। এ ফসল শুধু কৃষকের আয় বাড়াবে না বরং পাকুন্দিয়াকে দেশের অন্য অঞ্চলের জন্যও একটি আদর্শ মডেল হিসেবে গড়ে তুলতে পারে। ভবিষ্যতে রপ্তানির সুযোগ তৈরি হলে কৃষকের জীবনমান আরও উন্নত হবে।’

পাকুন্দিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার নূর-ই-আলম বলেন, ‘গাছ আলু একটি পুষ্টিকর এবং সুস্বাদু সবজি। বর্ষার শেষে অন্য ফসল না থাকলেও এটি ভালো ফলন দেয়। আমরা এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন জেলায় এর আবাদ ছড়িয়ে দিচ্ছি। যেহেতু এটি দীর্ঘদিন সংরক্ষণযোগ্য, তাই বিদেশেও রপ্তানির সম্ভাবনা রয়েছে।’

পাকুন্দিয়ায় গাছ আলু চাষে বদলাচ্ছে কৃষকের জীবন

উৎপাদন ও সম্ভাবনা

চলতি মৌসুমেই পাকুন্দিয়ায় প্রায় ৩ হাজার বিঘা জমিতে গাছ আলুর আবাদ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ৫০০ মেট্রিক টন। কৃষি বিভাগের আশা, এ নতুন ফসল শুধু স্থানীয় কৃষকের জীবনমান উন্নত করবে না, ভবিষ্যতে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের বড় উৎস হিসেবেও গড়ে উঠতে পারে।

কৃষকের চোখে নতুন স্বপ্ন

পাকুন্দিয়ার কৃষকেরা বলছেন, গাছ আলু এখন তাদের জন্য নতুন আশার প্রতীক। একদিকে কম খরচ, অন্যদিকে বেশি দাম—এ দুয়ের সমন্বয়ে তারা পাচ্ছেন স্বস্তি। ফলে গাছ আলুর কারণে কৃষকের মুখে ফিরেছে হাসি আর গ্রামীণ অর্থনীতিতেও আসছে গতি।

এসইউ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।