চারগুণ লাভে খুশি কৃষক

হাওরের পতিত জমিতে মিষ্টি কুমড়ার বাম্পার ফলন

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি নেত্রকোনা
প্রকাশিত: ০১:০৭ পিএম, ১২ এপ্রিল ২০২৫
জমিতে চাষাবাদ করে দশগুণ লাভ করছেন চাষিরা, ছবি: জাগো নিউজ

 হেক্টরপ্রতি মিষ্টি কুমড়া হয়েছে প্রায় ১০ হাজার পিস
যার বিক্রয়মূল্য প্রায় ৬ কোটি টাকা
খরচ বাদে কৃষকের আয় প্রায় সোয়া ৫ কোটি টাকা
কর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় শতাধিক যুবকের

নেত্রকোনার হাওরাঞ্চলে শত বছর ধরে পতিত থাকা জমিতে মিষ্টি কুমড়ার বাম্পার ফলন হয়েছে। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ভালো ফলন হয়েছে। স্থানীয় কৃষি বিভাগ বলছে, হেক্টরপ্রতি মিষ্টি কুমড়া উৎপাদন হয়েছে প্রায় ১০ হাজার পিস। হেক্টরে ৩৫ মেট্রিক টন উৎপাদন হারে ২৫০ হেক্টরে প্রায় ৮ হাজার ৫০ মেট্রিক টন ফলন হয়েছে। যার বিক্রয়মূল্য এসেছে প্রায় ৬ কোটি টাকা। খরচ বাদে কৃষকের আয় প্রায় সোয়া ৫ কোটি টাকা।

বিজ্ঞাপন

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও স্থানীয়রা জানায়, যুগের পর যুগ হাওরাঞ্চলে কয়েক হাজার হেক্টর সরকারি জমি পতিত ছিল। এসব জমিতে বর্ষায় থৈ থৈ পানি থাকে। শুকনো মৌসুমে পরিণত হয় গোচারণ ভূমিতে। এমন দৃশ্য হাওরবাসীর কাছে চির চেনা। কিন্তু ক’বছর ধরে ঘটেছে ব্যতিক্রম ঘটনা। জেলা প্রশাসন ও কৃষি বিভাগের আবাদের আওতায় আনা হয়েছে এসব জমি। এখন বিস্তীর্ণ এলাকায় ঘন সবুজের সমারোহ। মিষ্টি কুমড়ার পাশাপাশি ফলছে বাদাম, ক্ষিরা, সূর্যমুখী, সরিষাসহ অনেক জাতের শাক-সবজি। কর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় শতাধিক বেকার যুবকের। এক খণ্ড জমিতে চাষাবাদ করে দশগুণ লাভ করছেন চাষিরা।

হাওরের পতিত জমিতে মিষ্টি কুমড়ার বাম্পার ফলন

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, জেলার হাওরাঞ্চলে চাষের আওতায় এসেছে প্রায় আড়াই হাজার হেক্টর অনাবাদি জমি। সার, বীজ, কৃষি উপকরণসহ নিয়মিত তদারকি করছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ।

খালিয়াজুরী উপজেলার জগন্নাথপুর গ্রামের কৃষক আলা উদ্দিন, কাশেম মিয়া, জয়নাল মিয়া জানান, পতিত জমিতে মিষ্টি কুমড়ার আবাদ করে প্রায় ৪ গুণ আয় হয়েছে। বছরের এই সময়টা কাজকর্ম থাকে না। বাড়ির আশেপাশে পতিত জমিতে কৃষি বিভাগের পরামর্শে মিষ্টি কুমড়া, বাদাম, ক্ষিরা, সূর্যমুখী, সরিষা আবাদ করেন তারা। এতে বোরো ফসলের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি লাভ হয়েছে।

আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

মদন উপজেলার বাগজান গ্রামের ফয়েজ আহমেদ বলেন, ‘পড়াশোনা করে বেকার না থেকে সরকারি পতিত জমিতে শাক-সবজির আবাদ করে এলাকার অনেকেই স্বাবলম্বী হয়েছেন। আগামীতে ব্যাপক আকারে চাষাবাদ করা হবে। এখানকার মিষ্টি কুমড়া দেশের নামকরা কোম্পানিগুলো সরাসরি নিচ্ছে। এতে কৃষকেরা আরও উৎসাহিত হচ্ছেন।’

হাওরের পতিত জমিতে মিষ্টি কুমড়ার বাম্পার ফলন

মদন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান বলেন, ‘পতিত জমি চাষাবাদের আওতায় এসেছে। মিষ্টি কুমড়া চাষে এক টাকা খরচ করে কমপক্ষে ৪ টাকা আয় করা সম্ভব। উপজেলায় প্রায় ৫০ হেক্টর জমিতে প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ টাকার দেড় হাজার মেট্রিক টন মিষ্টি কুমড়া উৎপাদন হয়েছে। হাওরের আরও ১ হাজার হেক্টর পতিত জমি চাষের আওতায় আনা গেলে ৪০-৫০ হাজার মেট্রিক টন উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব। তা থেকে আয় করা সম্ভব প্রায় ৬০ কোটি টাকা।’

বিজ্ঞাপন

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচলাক মুহাম্মদ নুরুজ্জামান বলেন, ‘প্রতি হেক্টরে প্রায় ১২ হাজার মিষ্টি কুমড়া ফলেছে। হেক্টরে ৩০ হাজার টাকা খরচ করে জমির মালিকের আয় ২ লাখ টাকার বেশি। হাওরের পতিত জমি আবাদের আওতায় আনায় একদিকে কমছে বেকারত্ব; অন্যদিকে বাড়ছে ফসলের চাষাবাদ।’

হাওরের পতিত জমিতে মিষ্টি কুমড়ার বাম্পার ফলন

নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাস বলেন, ‘আমরা কৃষকদের পতিত জমি দিয়ে তাদের বিনা মূল্যে সার, কীটনাশক ও বীজের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। কৃষি বিভাগ তাদের নিয়মিত পরার্মশ দিয়েছে। এ কারণে কৃষকেরা লাভবান হয়েছেন। তারা এখন অনেকেই স্বাবলম্বী। আগামীতেও এ ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হবে।’

বিজ্ঞাপন

এইচ এম কামাল/এসইউ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন jagofeature@gmail.com ঠিকানায়।