পানি উন্নয়ন বোর্ড
ঝালকাঠিতে পরিত্যক্ত জমিতে তুলা চাষে সাফল্য

বাংলার সুয়েজখাল খ্যাত গাবখান নদীর তীরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পরিত্যক্ত ৮ বিঘা জমিতে তুলা চাষ করা হচ্ছে। তুলা উন্নয়ন বোর্ডের সহায়তায় কয়েকজন কৃষক জমি লিজ নিয়ে ১৫ বছর ধরে চাষাবাদ করে সফল হচ্ছেন।
পঞ্চম চীন মৈত্রী সেতুর পশ্চিম প্রান্ত রূপসিয়া গ্রাম থেকে শেখেরহাট যেতে গাবখান এলাকায় পূর্ব-পশ্চিম দিকের রাস্তাটির দক্ষিণ পাশে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কয়েক একর জমি আছে। সেই জমি লীজ নিয়ে কৃষির আওতায় এনেছেন উদ্যোক্তারা। বিস্তীর্ণ এলাকায় কৃষকের আবাদের কারণে কৃষি এলাকা হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছে। তুলা, পেয়ারা, মাল্টা, বরই, কলা, সৌদি আরবের খেজুরসহ বিভিন্ন ফলের চাষাবাদ করা হয়েছে। জেলা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকেও সার্বিক তদারকি করা হয়।
সদর উপজেলার গাবখান-ধানসিঁড়ি ইউনিয়নের কৃষিভিত্তিক গাবখান গ্রামে যশোর তুলা উন্নয়ন বোর্ডের সহায়তায় পরীক্ষামূলক ভাবে ২০১১ সালে শুরু হয় রুপালি-১ এবং হোয়াইট গোল্ড জাতের তুলার চাষ। সেই থেকে ১৫ বছর ধরে তুলা চাষ করে অর্থনৈতিক ভাবে স্বচ্ছল হয়েছেন বাগান মালিকসহ কৃষক ও শ্রমিকেরা।
এসব তুলা সরাসরি মিল কর্তৃপক্ষ কিনে নেওয়ায় লাভ হচ্ছে বেশি। এতে তুলা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন স্থানীয় অনেক চাষি। তুলা চাষিরা জানান, একটু উঁচু জমিতে কাঁদি (সজ্জন) পদ্ধতিতে আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে বীজ লাগানো শুরু হয়। বীজ বপনের ৫৫-৬০ দিন পর গাছে ফুল ধরে। সেই ফুল থেকে বের হয় তুলা। বাংলা ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, চৈত্র-বৈশাখ মাসে তারা মাঠ থেকে তুলা সংগ্রহ করেন। বিগত বছরে একর প্রতি ১০-১৫ মণ তুলার ফলন হয়েছে।
গত বছরের ২৭ মে রিমেলের কারণে তুলা ক্ষেত পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় অনেক গাছ নষ্ট হয়েছে। তাই এ বছর নতুন করে আবাদ করতে হয়েছে। তবুও ফলনে কোনো কমতি হয়নি। কৃষকেরা মনে করেন, সরকার তুলা চাষের দিকে একটু নজর দিলে অনেকের কর্মসংস্থান হবে। তুলার ব্যাপক চাহিদা থাকায় বাজার নিয়েও কোনো শঙ্কা থাকবে না।
জমি লিজ নেওয়া কৃষক আব্দুল হালিম বলেন, ‘২০১১ সালে পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে জমি লিজ নিয়ে যশোর তুলা উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় ৮ বিঘা জমিতে চাষ শুরু করি। সেই থেকে অনুকূল-প্রতিকূল পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে এখনো চাষ করে যাচ্ছি। আবহাওয়া ভালো থাকলে কোনো লোকসান হয় না।’
তিনি বলেন, ‘স্থানীয় বেকার ও বয়স্ক লোক দিয়ে তুলা মাঠ থেকে সংগ্রহ করি। তাতে তাদের সংসার খরচটাও এ মৌসুমে ভালো চালাতে পারে। মাঠ থেকেই যশোরসহ বিভিন্ন মিল মালিকদের কাছে বিক্রি করি। শুধু তুলাই নয়, বীজ থেকে তৈল ও খৈড় তৈরি করে বাড়তি আয় করাও সম্ভব।’
দিনমজুর লাল মিয়া হওলাদার বলেন, ‘গাছের ফুল ফেটে তুলা বের হচ্ছে। সংগ্রহ শুরু করেছি। কয়েক বছর ধরে এ বাগানে কাজ করি। বীজ রোপণ এবং ক্ষেত পরিচর্যা করি দৈনিক মজুরি হিসেবে। তুলা সংগ্রহ করে দিলে কেজিপ্রতি ৩০ টাকা মজুরি পাই। প্রতিদিন ২০-২৫ কেজি তুলা সংগ্রহ করতে পারি। আমার বয়স হয়েছে। এখন আর কেউ কাজে নেয় না। তুলাটা চাষ হয় বলে এখানে কাজ করে টাকা রোজগার করতে পারি।’
হেনারা বেগম বলেন, ‘গাবখান এলাকায় তুলা চাষ শুরু হওয়া থেকে আমি প্রতি বছর কাজ করি। তবে রোপণের কাজ করি না। শুধু গাছ থেকে তুলা সংগ্রহ করি। আমার স্বামীও একজন দিনমজুর। তার আয়ে সংসার চালাতে খুব কষ্ট হয়। তাই তুলা সংগ্রহ করে যে টাকা পাই; তা থেকে সংসার ও ছেলে-মেয়ের খরচ চালাই।’
যশোর তুলা উন্নয়ন কর্মকর্তা এস.এম. জাকির বিন আলম বলেন, ‘ঝালকাঠি গাবখান থেকে এ তুলা কিনে নিয়ে যাওয়া হয় যশোরের ঝিকরগাছার একটি বেসরকারি কারখানায়। সেখানে মেশিনের মাধ্যমে প্রক্রিয়া করে বিভিন্ন কটন মিলে বিক্রি করা হয়। তুলা চাষকে কেন্দ্র করে ঝালকাঠির স্থানীয় প্রান্তিক কৃষকের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। ঝালকাঠিতে অনেক পতিত জমি থাকায় এ অঞ্চল তুলা চাষের উপযোগী।’
এসইউ/জিকেএস