লোকসান চাষিদের
বিক্রি না হওয়া টমেটো ময়লার ভাগাড়ে

টমেটো চাষে বাম্পার ফলন হলেও লাভের মুখ দেখেননি চাষিরা। গরম শুরু হওয়ায় গাছ শুকিয়ে টমেটো পচতে শুরু করেছে। বাধ্য হয়ে চাষিরা ময়লার ভাগাড়ে ফেলে দিয়েছেন টমেটো। খুলনা জেলার কৃষিনির্ভর তেরোখাদা উপজেলা ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়।
জানা যায়, তেরোখাদা অঞ্চলের অধিকাংশ মানুষ কৃষিনির্ভর। বারো মাস ধান, শাক-সবজি ও বিভিন্ন ফসল উৎপাদনে ব্যস্ত থাকেন তারা। প্রতি মৌসুমে প্রচুর শাক-সবজি উৎপাদিত হয়। সেই সাথে কৃষিযোগ্য জমির মধ্যে এবার শীত মৌসুমে প্রায় ১০০ হেক্টর জমিতে টমেটো উৎপাদিত হয়েছে। কিন্তু সে টমেটো বিভাগীয় শহর খুলনার মুখ দেখেনি। অধিকাংশ টমেটো নড়াইল জেলার বাজারে সরবরাহ হলেও একটি বড় অংশ শীতের শেষ পর্যন্ত রেখেও বিক্রি করতে পারেননি কৃষকেরা।
প্রতি বছর নদীর কারণে তেরোখাদা থেকে সরাসরি খুলনার আড়তে কৃষিপণ্য পরিবহনে জটিলতা থাকায় কৃষকদের এমন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। অন্যদিকে টমেটো ব্যবহৃত খাদ্যপণ্য উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলো এ অঞ্চল থেকে টমেটো সংগ্রহ না করায় প্রতি বছর লোকসানের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। টমেটো সস কোম্পানিগুলো শীতকালে খুলনার সব অঞ্চলের টমেটো সংগ্রহ করলেও তেরোখাদা অঞ্চলের উৎপাদিত টমেটো সংগ্রহ হয়নি। ফলে ক্ষেতে পচে নষ্ট হয়েছে অনেক টমেটো। অনেক চাষি ক্ষোভে টমেটো ফেলে দিয়েছেন ময়লার ভাগাড়ে।
স্থানীয় চাষিরা জানান, প্রতি বছরই শীতের শেষে টমেটো ফেলে দিতে হয়। সস, চাঁটনি এবং টমেটো জাতীয় খাবার তৈরিতে কাঁচা-পাকা টমেটো ব্যবহার হলেও দেশের বড় বাণিজ্যিক কোম্পানিগুলো এ অঞ্চলের টমেটো সংগ্রহ করে না। ফলে টমেটোতে লোকসান গুনতে হচ্ছে স্থানীয় চাষিদের।
তেরোখাদা উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নে প্রায় পনেরো হাজার হেক্টর কৃষিযোগ্য জমি আছে। সব মৌসুমেই এসব জমিতে শাক-সবজি উৎপাদিত হচ্ছে। পাশাপাশি ২০২৪ সালের শীত মৌসুমে প্রায় ১০০ হেক্টর জমিতে টমেটো উৎপাদিত হয়েছে। প্রতি হেক্টর জমিতে প্রায় ২০ টন টমেটোর ফলন পেয়েছেন চাষিরা।
ছাগলাদহ ইউনিয়নের চাষি যতেন্দ্র বাগচী জানান, তিনি নিজের ২ বিঘা জমিতে শাক-সবজি এবং টমেটো চাষ করেন। গত তিন বছর কৃষি অফিসের পরামর্শে আধুনিক পদ্ধতিতে অন্যান্য সবজির পাশাপাশি টমেটো চাষ করে বাম্পার ফলন হয়েছে। এ বছর বাম্পার ফলন হলেও টমেটো বিক্রি করতে অনেক কষ্ট হয়েছে। ২ বিঘা জমিতে প্রায় ৩০০ কেজি ফলন হলেও শীতের শেষে ২ টাকা কেজি দরেও বিক্রি করতে পারেননি তিনি।
বারাসাত ইউনিয়নের চাষি কারিমুল বলেন, ‘এবার শীতে টমেটোর প্রচুর ফলন হয়েছে। তবে বিক্রি করে লাভ করতে পারিনি। খুলনার আড়তে শাক-সবজি নিয়ে গেলে খরচ অনেক পড়ে। পাইকাররা এত দাম দিয়ে কিনতে চান না। এ অঞ্চলে বড় সস কোম্পানিগুলোর কোনো অফিসার আসেন না। তারা সরাসরি এলে অনেক কম দামে টমেটো কিনতে পারতেন। এতে আমাদের টমেটো ফেলে দিতে হতো না।’
তেরোখাদা উপজেলা কৃষি অফিসার শিউলি মজুমদার বলেন, ‘এ অঞ্চলে প্রচুর শাক-সবজি উৎপাদিত হয়। এবার কৃষকেরা টমেটো চাষে সফল হয়েছেন। কিন্তু ফলনের তুলনায় বিক্রি কম হয়েছে। তাই কৃষকেরা কিছুটা হতাশ হয়েছেন। টমেটো বিক্রির নতুন ক্ষেত্র তৈরি করতে পারলে কৃষকেরা লাভের মুখ দেখতে পারবেন।’
মো. আরিফুর রহমান/এসইউ/জিকেএস