পাহাড়ের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখছে ‘তেঁতুল’

মুজিবুর রহমান ভুইয়া মুজিবুর রহমান ভুইয়া , জেলা প্রতিনিধি, খাগড়াছড়ি খাগড়াছড়ি
প্রকাশিত: ১০:৩২ এএম, ১৬ মার্চ ২০২৫
হাট-বাজারে জমে উঠেছে তেঁতুল বেচাকেনা, ছবি: জাগো নিউজ

কলা-কাঁঠালের রাজ্য খ্যাত পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়িতে আর্থিক সম্ভাবনার আরেক নাম তেঁতুল। আম, কাঁঠাল, কলা, বেল, আদা ও হলুদের সাথে পাল্লা দিয়ে বিভিন্ন হাট-বাজারে জায়গা করে নিয়েছে টক-মিষ্টি স্বাদের তেঁতুল। একসময় গাছতলায় পড়ে থাকা তেঁতুল এখন পাহাড়ের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে।

তেঁতুলের নাম শোনা মাত্রই জিহ্বায় জল এসে যায়। তেঁতুলে আসক্তি নেই এমন মানুষের সংখ্যা খুব কমই আছে। খাগড়াছড়ির টক-মিষ্টি স্বাদের তেঁতুলের আচার বিভিন্ন কোম্পানির হাত ধরে বাজার দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

খাগড়াছড়ির বিভিন্ন হাট-বাজারে জমে উঠেছে তেঁতুল বেচাকেনা। ঢাকা, চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, নরসিংদী ও ময়মনসিংহসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে টক-মিষ্টি তেঁতুল। ঢাকা, নরসিংদী ও ময়মনসিংহসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা তেঁতুল ব্যাবসায়ীদের পদচারণায় মুখরিত হয় হাট-বাজার।

সম্প্রতি খাগড়াছড়ির কলা-কাঁঠালসহ কৃষিপণ্যের মাদার মার্কেট বলে খ্যাত গুইমারা ও মাটিরাঙ্গা বাজার ঘুরে এমন দৃশ্য দেখা গেছে। স্থানীয় ও পাইকারী ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি মঙ্গলবার গুইমারা ও শনিবার মাটিরাঙ্গা বাজারে ভোর থেকেই স্থানীয়রা তেঁতুল নিয়ে বাজারে আসেন।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

পাহাড়ের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখছে ‘তেঁতুল’

দুপুরের মধ্যেই এসব তেঁতুল স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে হাত বদল করে চলে যায় ঢাকা, চট্টগ্রাম, নরসিংদী ও ময়মনসিংহসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা ব্যবসায়ীদের হাতে। তেঁতুল কিনে নেওয়ার পরে খোসাবিহীন ও খোসাসহ তেঁতুল আলাদা আলাদা কার্টুনে প্যাকেটিং করা হয় বাজারেই। জানা গেছে, প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে ৪০-৫০ মেট্রিক টন তেঁতুল বিক্রি হয় গুইমারা ও মাটিরাঙ্গা বাজারে।

একসময় খাগড়াছড়ির বিভিন্ন হাট-বাজারে ২০-২৫ টাকা দরে প্রতি কেজি তেঁতুল বিক্রি হলেও সমতলের বিভিন্ন জেলায় তেঁতুলের ব্যাপক চাহিদা থাকায় এখন সেই টক-মিষ্টি তেঁতুল বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা থেকে ১৩০ টাকায়। কোনো ধরনের কীটনাশক বা পরিচর্যা ছাড়াই প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত তেঁতুল লাভজনক হওয়ায় বাণিজ্যিকভাবে তেঁতুল চাষে ঝুঁকছেন স্থানীয়রা।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

বেশ ক’বছর ধরে গুইমারা বাজার থেকে তেঁতুল নিয়ে যান ঢাকার ব্যবসায়ী মো. নুর নবী, নরসিংদীর আবুল হোসেন ও চট্টগ্রামের জামাল উদ্দিন। তারা বলেন, ‘দিন দিন ঢাকা, চট্টগ্রামসহ আশেপাশের জেলায় খাগড়াছড়ির তেঁতুলের ব্যাপক চাহিদা বেড়েছে। তেঁতুলের চাহিদা বাড়ার সাথে সাথে স্থানীয় বাজারে দামও বেড়ে গেছে।’

আরও পড়ুন

দেশের আচার তৈরির কারখানাগুলোতেও খাগড়াছড়ির তেঁতুলের ব্যাপক চাহিদা আছে জানিয়ে নরসিংদী থেকে আসা পাইকার মো. আবুল হোসেন বলেন, ‘নরসিংদীতে পাহাড়ি তেঁতুলের চাহিদা ব্যাপক। তেঁতুলে কোনো ধরনের কীটনাশকের ব্যবহার করা হয় না। ফলে এর গুণগত মান ঠিক থাকে।’

বিজ্ঞাপন

পাহাড়ের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখছে ‘তেঁতুল’

স্থানীয় বাজারে তেঁতুলের দাম ভালো পাওয়ায় খুশি গুইমারার হাফছড়ির হলাপ্রু মারমা বলেন, ‘কোনো ধরনের বিনিয়োগ বা ঝুঁকি ছাড়াই তেঁতুল বিক্রি করে আমার পরিবারে আর্থিক স্বচ্ছলতা এসেছে।’

শুধু হাফছড়ির হলাপ্রু মারমা নয়, প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত তেঁতুল বিক্রি করে সংসারের অর্থনৈতিক চাকা ঘুরিয়েছেন গুইমারা বড়পিলাকের বাসিন্দা মো. আব্দুল হাই ও তবলছড়ির আব্দুর রহমানের মতো অনেকেই। তারা বলেন, ‘তেঁতুলে লোকসান হয় না বলে তেঁতুলের বাণিজ্যিক চাষের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।’

বিজ্ঞাপন

তারা বলেন, ‘একসময় স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করতে হতো বলে ভালো দাম পাওয়া যেত না। বর্তমানে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও নরসিংদীসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকারি ব্যবসায়ী আসার কারণে তেঁতুলের ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে। এতে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন স্থানীয়রা।’

স্থানীয় বিক্রেতা সুনুইপ্রু মারমা বলেন, ‘একসময় তেঁতুল নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হতো। এখন আর বসে থাকতে হয় না। বাজারে আসার সঙ্গে সঙ্গেই ব্যবসায়ীরা কিনে নিয়ে যায়। ভালো দাম পাওয়ার পাশাপাশি ক্রেতার জন্য অপেক্ষার দিনও শেষ হয়ে গেছে।’

পাহাড়ের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখছে ‘তেঁতুল’

বিজ্ঞাপন

দেশব্যাপী খাগড়াছড়ির তেঁতুলের বাজার তৈরি হওয়ার সাথে সাথে পাহাড়ে তেঁতুল দিয়ে কৃষিভিত্তিক শিল্প গড়ে ওঠার সম্ভাবনাও ব্যাপক। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে পাহাড়ের মানুষের অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা আরও বেগবান হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

পাহাড়ে উৎপাদিত তেঁতুলের নির্দিষ্ট কোনো জাত নেই জানিয়ে মাটিরাঙ্গা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. সবুজ আলী বলেন, ‘প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠে তেঁতুল গাছ। সময়ের ব্যবধানে তেঁতুল বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন পাহাড়ের লোকজন।’

তেঁতুল গাছ লাগানোর পর তেমন কোনো পরিশ্রম করতে হয় না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বড় তেঁতুল গাছ থেকে প্রতি বছর কয়েকশ মণ ফল পাওয়া যায়।’

বিজ্ঞাপন

এসইউ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন jagofeature@gmail.com ঠিকানায়।