ক্যাপসিকাম চাষে ৩০ কৃষকের ভাগ্য বদলের চেষ্টা

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি কুষ্টিয়া
প্রকাশিত: ১২:৪৩ পিএম, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫

উচ্চফলনশীল সবজি ক্যাপসিকাম চাষ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের অন্তত ৩০ জন কৃষক। চলতি মৌসুমে ইউনিয়নের নিয়ামতবাড়িয়া গ্রামের মাঠপাড়া এলাকায় কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে প্রায় ১০ বিঘা জমিতে ‘ইন্দ্রা গোল্ড’ জাতের বিদেশি সবজি চাষ করেছেন তারা।

গত এক সপ্তাহে ১৫০-২০০ টাকা দরে প্রায় ২ হাজার কেজি ক্যাপসিকাম প্রায় ৩ লাখ টাকায় বিক্রি করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ক্যাপসিকাম থেকে চলতি মৌসুমে খরচ বাদে প্রায় ১৪ লক্ষাধিক টাকা মুনাফা সম্ভব বলে জানিয়েছেন কৃষকেরা। গাছে ভালো ফল ধরায় এবং লাভজনক চাষ হওয়ায় অন্যরাও ক্যাপসিকাম চাষের স্বপ্ন দেখছেন।

বিজ্ঞাপন

কৃষক লিখন আলী বলেন, ‘জমির ইজারা, চারা, সার, পরিচর্যাসহ ১০ বিঘা জমিতে ক্যাপসিকাম চাষে খরচ হয়েছে প্রায় ১০ লাখ টাকা। ৭ দিনে প্রায় ২ হাজার কেজি ক্যাপসিকাম তুলেছেন। প্রতি কেজি ক্যাপসিকাম পাইকারি ১৫০-২০০ টাকা করে ৩ লাখ টাকা বিক্রি করেছেন। জমিতে যে পরিমাণ ক্যাপসিকাম হচ্ছে; তাতে উৎপাদন আগামী ২ মাসে আরও প্রায় ১৪ হাজার কেজির প্রত্যাশা করছেন। এতে অনায়াসেই ২১-২২ লাখ টাকার ক্যাপসিকাম বিক্রি সম্ভব হবে।’

ক্যাপসিকাম চাষে ৩০ কৃষকের ভাগ্য বদলের চেষ্টা

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

জানা গেছে, চাঁদপুর ইউনিয়নে জংগলী আধুনিক কৃষি সমবায় সমিতি নামে কৃষকদের একটি সংগঠন আছে। সমিতির সভাপতি ইলিয়াস হোসেন খসরু ২০২৪ সালে কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে ২ বিঘা জমিতে ক্যাপসিকাম চাষ করেন। সে বছর এ চাষে ২ লাখ ২০ হাজার টাকা খরচ করে তিনি প্রায় ৪ লাখ টাকা মুনাফা পান। এতে আগ্রহ বাড়ে অন্য সদস্যদের। তাদের মধ্যে ৩০ জন কৃষক যশোর অঞ্চলের টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় নিয়ামতবাড়িয়া মাঠপাড়া এলাকায় ১০ বিঘা জমিতে ক্যাপসিকাম চাষ করেন। ১২০ দিন জীবনকালের এ সবজির চারা রোপণের ৬০ দিনের মাথায় ফল দেওয়া শুরু হয়েছে।

সরেজমিনে জানা যায়, পাকা সড়ক ঘেঁষে নিয়ামতবাড়িয়া মাঠপাড়া এলাকা। সেখানে চারদিকে জাল দিয়ে ঘিরে মালচিং পদ্ধতিতে ক্যাপসিকাম চাষ করা হয়েছে। সবুজ গাছে ঝুলছে ফল। ৪-৫ জন করে কৃষকেরা দলবেঁধে কেউ গাছ থেকে ফল তুলছেন, কেউ পরিষ্কার করছেন। কেউবা আবার আধুনিক যন্ত্রে পরিমাপ করে প্যাকেট করছেন বাজারে নেওয়ার জন্য।

ক্যাপসিকাম চাষে ৩০ কৃষকের ভাগ্য বদলের চেষ্টা

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

ষাটোর্ধ্ব কৃষক মুন্সী মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘প্রথমবারের মতো ক্যাপসিকাম চাষ করা হয়েছে। গাছে প্রচুর ফল দেখে খুব ভালো লাগছে। বাজারে ভালো দাম থাকায় ব্যাপক লাভের আশা করছি।’

ধান, পাট, পেঁয়াজসহ অন্যান্য চাষাবাদের পাশাপাশি এ বছর ৩০ জন মিলে ক্যাপসিকাম চাষ করেছি। গেল সাতদিন ধরে ফল তুলে কুষ্টিয়া, রাজশাহী, পাবনা, খুলনা ও ঢাকায় বিক্রি করা হচ্ছে বলে জানান কৃষক গোলাম মোস্তফা। তার ভাষ্য, ভালো ফলন হওয়ায় প্রতিদিনই দূর-দূরান্ত থেকে কৃষকেরা দেখতে আসেন। তাদের পরামর্শও দিচ্ছেন।

সমিতির অন্যতম সদস্য নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আগামী দুই মাস ধরে ফল পাওয়া যাবে। এরপর ক্যাপসিকামের বদলে আধুনিক জাতের পেঁপের চারা রোপণ করা হবে।’

বিজ্ঞাপন

ক্যাপসিকাম চাষ দেখতে এসেছেন নিয়ামতবাড়িয়া গ্রামের কৃষক রাজ্জাক বিশ্বাস। তিনি বলেন, ‘এলাকায় প্রথমবারের মতো এ চাষ হয়েছে। ভালো ফলন ও লাভজনক হওয়ায় আগামী বছর ১ বিঘা জমিতে ক্যাপসিকাম চাষ করবো।’

ক্যাপসিকাম চাষে ৩০ কৃষকের ভাগ্য বদলের চেষ্টা

বিদেশি সবজি চাষের খবর পেয়ে ছুটে এসেছেন কুষ্টিয়া ইবি থানার মৃত্তিকাপাড়া এলাকাল কৃষক আতিয়ার রহমান। তিনি বলেন, ‘গাছে রোগবালাই নেই, মালচিং পদ্ধতিতে বিষমুক্ত চাষাবাদ হয়েছে। দেখে-শুনে খুব ভালো লাগছে। আগামীতে ৩ বিঘা জমিতে চাষ করবো।’

বিজ্ঞাপন

জংগলী আধুনিক কৃষি সমবায় সমিতির সভাপতি ইলিয়াস হোসেন খসরু বলেন, ‘কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে গত বছর ২ বিঘা জমিতে প্রথম ক্যাপসিকাম চাষ করেছিলাম। এতে ২ লাখ ২০ হাজার টাকা খরচে প্রায় ৪ লাখ টাকা লাভ হয়েছিল। আমার দেখাদেখি সমিতির সদস্যদের আগ্রহ বাড়ে। সে জন্য এ বছর ৩০ জন মিলে ১০ বিঘা জমিতে চাষ করেছি। আগামী বছর ২৫ বিঘা জমিতে চাষের পরিকল্পনা আছে।’

উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘একদল কৃষক উচ্চমূল্যের সবজি ক্যাপসিকাম চাষ করে ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন। কৃষি অফিসের পরামর্শ, উপকরণ ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কৃষকেরা প্রায় ৮-১০ লাখ টাকা খরচ করে ২৪ লাখ টাকার ক্যাপসিকাম বিক্রির স্বপ্ন বুনছেন।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রাইসুল ইসলাম বলেন, ‘উচ্চমূল্যের সবজি ও ফসল চাষাবাদে যশোর টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় কৃষকদের পরামর্শ, উপকরণ প্রদান ও প্রশিক্ষণের কার্যক্রম চলমান আছে।’

বিজ্ঞাপন

আল-মামুন সাগর/এসইউ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন jagofeature@gmail.com ঠিকানায়।