তিতির পালনে সাবলম্বী রাজবাড়ীর রুবেল

রুবেলুর রহমান
রুবেলুর রহমান রুবেলুর রহমান , জেলা প্রতিনিধি রাজবাড়ী
প্রকাশিত: ০১:০৩ পিএম, ১০ জানুয়ারি ২০২৫

বেকারত্ব দূর ও কর্মস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে বর্তমানে নতুন নতুন উদ্যোক্তা ও খামারির উদ্ভব ঘটেছে। এতে শ্রম ও ঘাম দিয়ে সফল হচ্ছেন অনেকেই। তেমনই একজন যুবক রাজবাড়ীর সদর উপজেলার শহীদ ওহাবপুর ইউনিয়নের রাজু আহম্মেদ রুবেল।

বাড়ির আঙিনায় সাড়ে ৩ বছর আগে শখের বশে মাত্র ১৩টি তিতির পাখি দিয়ে শুরু করেন রুবেল। এখন খামারে আছে ছোট-বড় প্রায় ৯০০ তিতির। অল্প খরচ ও কষ্টে তিতির পাখি পালন লাভজনক হওয়ায় তিনি সম্পূর্ণ বাণিজ্যিকভাবে লালন-পালন করছেন। নিজের খামারের ডিম দিয়েই মেশিনের সাহায্যে প্রতি মাসে উৎপাদন করছেন প্রায় ৩ হাজার বাচ্চা। যা মুহূর্তের মধ্যেই বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। চাহিদা অনুযায়ী পারছেন না সরবরাহ করতে।

তিতির পালনে সাবলম্বী রাজবাড়ীর রুবেল

খামারের খরচ বাদ দিয়ে এখন প্রতি মাসে আয় প্রায় ৭০-৮০ হাজার টাকা। তার সফলতা দেখে আশপাশসহ বিভিন্ন স্থানের অনেকেই আগ্রহী হচ্ছেন তিতির পালনে। এই তিতির পাখির মাংস সুস্বাদু হওয়ায় বেশ চাহিদা আছে। তবে সরকারি ভাবে পৃষ্ঠপোষকতা ও প্রশিক্ষণ পেলে তিতির পাখি পালন করে বেকারত্ব দূরসহ স্বাবলম্বী হবেন রুবেলের মতো তরুণ খামারিরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শখের বশে ২০২১ সালের মাঝামাঝি ১৩টি তিতির পাখি এনে লালন-পালন শুরু করেন তরুণ উদ্যোক্তা রাজু আহম্মেদ রুবেল। এখন তার খামারের ৪টি শেডে আলাদা আলাদা স্থানে ছোট-বড় ৯০০ তিতির পাখি আছে। যার মধ্যে প্রায় ৪০০-৫০০ আছে ডিম দেওয়া পাখি। ডিম থেকে তিনি মেশিনের সাহায্যে প্রতি মাসে উৎপাদন করছেন প্রায় ২ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার বাচ্চা।

তিতির পালনে সাবলম্বী রাজবাড়ীর রুবেল

তিতির পাখি দেখতে অনেকটাই মুরগির মতো। মুরগির মতো ছেড়ে বা খামারে পালন করা যায়। অন্য মুরগির মতোই দানাদার খাবার খাওয়ানো হয়। ফলে পালাক্রমে বাড়ির সবাই মিলে খামার পরিচর্যা করেন। ডিম দেওয়া এক জোড়া পাখির দাম ৩ হাজার, ১ মাসের বাচ্চা প্রতি পিস ২০০ ও সদ্য ভূমিষ্ট বাচ্চা ৯০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। প্রতি মাসে খামার পরিচর্যায় সব মিলিয়ে ৮০-৯০ হাজার টাকা খরচ হয়। আয় হয় প্রায় ১ লাখ ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা।

আরও পড়ুন

এদিকে দিন দিন তিতির পাখি ও বাচ্চার চাহিদা বাড়ায় আশপাশের অনেকের মাঝে আগ্রহ বেড়েছে। অনেকে স্বল্প পরিসরে শুরুও করেছেন। অন্যদিকে রাজবাড়ী জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরে তিতির পাখির কোনো খামার বা উদ্যোক্তার তথ্য নেই। তবে তারা উদ্যোক্তা বা খামারিদের পরামর্শ, প্রশিক্ষণসহ সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে।

স্থানীয় মিরাজুল ইসলাম এবং পরান শেখ বলেন, ‘তিতির পাখির খামার ও সফলতা দেখে আশপাশের অনেকেই খামার থেকে বাচ্চা নিয়ে ছোট পরিসরে লালন-পালন শুরু করেছেন। তাছাড়া দূর-দূরান্ত থেকেও অনেকে আসেন বাচ্চা ও বড় তিতির নিতে। এ পাখি পালনে সরকারি ভাবে প্রশিক্ষণ ও সহযোগিতা পেলে বেকার যুবকসহ তরুণ উদ্যোক্তরা উপকৃত হবেন।’

তিতির পালনে সাবলম্বী রাজবাড়ীর রুবেল

রাজু আহম্মেদ রুবেলের স্ত্রী হালিমা বলেন, ‘আমার স্বামী শখের বশে তিতির পালন শুরু করলেও এখন পুরোপুরি বাণিজ্যিক ভাবে পালন করছেন। খামারের আয় দিয়েই যাবতীয় খরচ চলে। সরকারি ভাবে সহযোগিতা পেলে খামার আরও বড় পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারবো।’

সফল খামারি রাজু আহম্মেদ রুবেল বলেন, ‘এ পাখি পালন খুবই লাভজনক এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক ভালো। সরকারি সাহায্য-সহযোগিতা পেলে খামারের পরিসর বাড়ানোর পাশাপাশি দেশে মাংসের চাহিদা পূরণে ভূমিকা রাখতে পারবো। বর্তমানে প্রতি মাসে সব মিলিয়ে ৯০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়। এখান থেকে আয় হচ্ছে প্রায় ১ লাখ ৬০-৭০ হাজার টাকা।’

রাজবাড়ী জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. প্রকাশ রঞ্জন বিশ্বাস বলেন, ‘এটি সম্ভাবনাময় খাত। তিতির পাখির মাংস মুরগির মাংসের মতোই। এটি লালন-পালন দেশি বা সোনালি মুরগির চেয়ে বেশি লাভজনক। এর বাজারমূল্য বয়লার বা সোনালি মুরগির চেয়ে বেশি। অনেকে সৌখিন পাখি হিসেবেও পালন করেন। পাখিটি ডিম ও মাংসের চাহিদা পূরণে ভূমিকা রাখে। প্রাণিসম্পদ দপ্তর সব সময় এ বিষয়ে খামারি বা উদ্যোক্তাদের উৎসাহ দেওয়ার পাশাপাশি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সহযোগিতা করে আসছে।’

এসইউ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।