থোকায় থোকায় কমলা, ভাগ্য ফেরাচ্ছে চাষির
ঘন সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে থোকায় থোকায় ঝুলছে রসালো কমলা। দূর থেকে মনে হয়, গাছের পাতার ফাঁকে আলো জ্বলছে। দুই সারির মাঝে হাঁটাপথ। নজরকাড়া কমলা। গাছজুড়ে রসে টইটুম্বুর পাকা কমলার থোকা। বাগানজুড়ে যেন রসালো ‘চায়না’ কমলার রঙিন হাসি। মানুষ কমলা বাগান ঘুরে ঘুরে নেড়েচেড়ে দেখছেন আর অন্যরকম সুখানুভূতিতে আপ্লুত হচ্ছেন।
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত এ ‘চাইনিজ’ কমলা বাগান। উপজেলার ছাপরহাটি ইউনিয়নের পূর্ব ছাপরহাটি এলাকার কমলা চাষি মলয় কুমার লিটনের বাগানে ফলটির বাণিজ্যিক চাষ হচ্ছে। ফলনও হয়েছে ভালো। রং ও আকার দেখে গাছ থেকে পছন্দমতো কমলা নিয়ে দর্শনার্থীদের হাতে তুলে দিচ্ছেন বাগান মালিক।
জেলা শহর থেকে সুন্দরগঞ্জের ধর্মপুর বাজার পৌঁছে সেখান থেকে দেড় কিলোমিটার পশ্চিম দিকে গেলে কমলা বাগানটি চোখে পড়ে। বাগানের উদ্যোক্তা মলয় কুমার লিটন (৪৫) স্থানীয় বাজারে গানের সিডি-ক্যাসেট বিক্রি ও রেকর্ডিংয়ের ব্যবসা করতেন। তা ছেড়ে গোলাপ, গাঁদা, চন্দ্রমল্লিকা, গ্লাডিওলাস আর রজনীগন্ধার বাণিজ্যিক চাষের জন্য ২০০৮ সালে বাবার ৮০ শতাংশ (প্রায় আড়াই বিঘা) জমিতে নার্সারি শুরু করেন।
২০২০ সালে করোনার প্রভাব পড়ে গাইবান্ধার ফুল বাজারে। ফুল ব্যবসায় করোনার ধাক্কা সামলে নিতে এবং মন্দা কাটাতে লিটন ওই বছরই বাগানে কমলার চাষ শুরু করেন। নিবিড় পরিচর্যায় ২০২২ সালে গাছে ফল আসে। কমলা ছাড়াও বাগানে আছে কাটিমন জাতের আম, বরই, সফেদা ও জাম্বুরা। এ ছাড়া সাথী ফসল হিসেবে ২ হাজার বস্তায় চাষ হচ্ছে আদা।
গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, জেলার ৭ উপজেলায় ৪ হেক্টর সমতল ভূমিতে কমলা এবং ৪৪ হেক্টর জমিতে মাল্টার চাষ হচ্ছে। ছোট-বড় মিলিয়ে জেলায় কমলা-মাল্টার ৫৭৬টি বাগানে গাছের সংখ্যা প্রায় ৪০ হাজার। এ থেকে মৌসুমে কমলা-মাল্টার ফলন আসে প্রায় ৬৩৬ মেট্রিক টন। যার বাজারমূল্য প্রায় ১৩ কোটি টাকা।
আরও পড়ুন
লিটনের বাগানে গিয়ে দেখা যায়, সারি সারি কমলা গাছের ভেতর হেঁটে বেড়ানোর ব্যবস্থা আছে। চারদিকে শুধু পাকা কমলার থোকা। বাগান ঘুরে দর্শনার্থী ও ক্রেতারা চায়না ম্যান্ডারিন জাতের সুমিষ্ট-রসালো কমলা কিনছেন। সরাসরি বাগান থেকে নেওয়ায় বাজারের তুলনায় দামও কিছুটা কম।
বাগান মালিক লিটন বলেন, ‘গত চার সপ্তাহ ধরে বাগান থেকে কমলা বিক্রি শুরু হয়েছে। গাছ থেকে নিজ হাতে তোলা প্রতি কেজি কমলা বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা দরে। বাগানে ১০০টি চায়না ম্যান্ডারিন কমলা ও অর্ধশতাধিক মাল্টা গাছের চারা আছে। এগুলোর মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশ গাছে ফলন এসেছে। এ বছর প্রায় আড়াই লাখ টাকার কমলা বিক্রি করেছি। এ ছাড়া সমপরিমাণ টাকার কমলা পাড়া-প্রতিবেশী ও দর্শনার্থীদের উপহার দিয়েছি।’
জেলা শহর থেকে পরিবারের জন্য কমলা নিতে এসেছেন সংস্কৃতিকর্মী মানিক বাহার। তিনি বলেন, ‘কমলাগুলোর আকার ও রং বেশ আকর্ষণীয়। বাজারের কমলার চেয়ে এর স্বাদ ও রস অনেক বেশি। নিজে পছন্দ করে গাছ থেকে রাসায়নিকমুক্ত কমলা তুলতে পেরে আমি আপ্লুত।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর গাইবান্ধার উপ-পরিচালক মো. খোরশেদ আলম জাগো নিউজকে বলেন, ‘লিটনের বাগানে চাইনিজ কমলার ফলন ভালো হয়েছে। স্থানীয় জাতের চেয়ে চাইনিজ কমলা মিষ্টি বেশি। ফলে অনেকেই সেটা পছন্দ করেন। জেলার কমলা-মাল্টা চাষিদের কৃষি দপ্তরের পক্ষ থেকে বীজ-চারা, সার সরবরাহসহ নানা ধরনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। পরিকল্পিতভাবে চাষ করলে এ জাতের কমলার অপার সম্ভাবনা আছে।’
এসইউ/এমএস