মেহেরপুরে তীব্র তাপদাহে ঝরছে আম-লিচুর গুটি
অতিমাত্রার খরতাপে মেহেরপুরের আম-লিচুর গুটি ঝরে পড়ছে। এভাবে গুটি ঝরে পড়তে থাকলে বাগান মালিকেরা মোটা অঙ্কের লোকসানে পড়বেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বৈরী আবহাওয়ায় রাতে ঠান্ডা ভাব, দিনে তাপদাহ। এ কারণে ঝরে যাচ্ছে গুটি। ফলে চলতি মৌসুমে মেহেরপুরের আম-লিচুর ফলনে বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বাগান নিয়ে বিপাকে পড়েছেন বাগান মালিক ও ইজারাদাররা।
চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর জেলায় লক্ষ্য করা গেছে। ৪০ ডিগ্রি থেকে ৪২ ডিগ্রির উপরে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। প্রাকৃতিকভাবেই চলতি মৌসুমে আম-লিচুর মুকুল বেরিয়েছে ৬৫ শতাংশ। বাকিটায় নতুন পাতা বের হয়েছে। অন্যদিকে বর্তমানে আম-লিচুর জন্য প্রতিকূল আবহাওয়া যাচ্ছে। এ কারণে এবার আম-লিচুর ফলন কিছুটা কমার সম্ভাবনা আছে।
মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, জেলায় লিচুর বাগান আছে ৮০০ হেক্টর জমিতে। এসব বাগানে আটি লিচু, বোম্বাই, চিলি বোম্বাই, আতা বোম্বাই ও চায়না-থ্রি জাতের লিচু হয়ে থাকে। চলতি বছরে জেলায় সাড়ে ৮ হাজার টন লিচুর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। আমের বাগান আছে ৩ হাজার ৩৩৬ হেক্টর। ল্যাংড়া, বোম্বাই, হিমসাগর, ফজলি, আম্রপালি, গোপাল ভোগ, হাড়িভাঙাসহ বেশ কয়েকটি জাতের আম বাগান আছে।
চলতি সপ্তাহে মেহেরপুরের আম-লিচুর বাগান ঘুরে দেখা গেছে, সদর উপজেলার কোলা গ্রামে ল্যাংড়া, হিমসাগর, বোম্বাই আমের গাছ আছে সবচেয়ে বেশি। গাছের নিচে ঝরে পড়া আমের স্তূপ হয়েছে। সদর উপজেলার আমঝুপি, বাড়াদি, হরিরামপুর, কালিগাংনী, শ্যামপুর, উজলপুর, কুলবাড়িয়া, গাংনী উপজেলার নওয়াপাড়া, সাহারবাটি, তেতুলবাড়িয়া, বামুন্দি গ্রামে দেখা যায়, সবুজ লিচু গাছ এখন হলুদ রঙের মুকুলে ছেয়ে আছে। কিছু গাছে মুকুল থেকে বেরিয়েছে গুটি। বাগানে ঢুকলেই চোখে পড়ছে গুটি ঝরার দৃশ্য। চাষিরা গুটি ঝরা রোধে নানা চেষ্টা করছেন। কেউ ওষুধ ছিটাচ্ছেন, কেউ স্প্রের যন্ত্র দিয়ে পানি দিচ্ছেন।
আম ও লিচু চাষি সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘মেহেরপুরের হিমসাগর ও বোম্বাই জাতের আমের কদর আছে সারাদেশে। বোম্বাই, মোজাফ্ফর ও দেশি জাতের লিচুর চাষ হয়। ফলে প্রতি বছর মৌসুম শুরুর আগেই পাইকারি ব্যবসায়ীরা বাগানের আম-লিচু কিনে নেন। এরপর আম-লিচু তোলা ও বাজারজাতের কাজটা তারাই করেন। চলতি মৌসুমে আম-লিচুর ফলন কম। গত বছরের তুলনায় অর্ধেক মুকুল এসেছে। বর্তমানে লিচুর জন্য বিরূপ আবহাওয়া। রাতে শীত ও কুয়াশা ভাব। দিনে তাপদাহ। এ কারণে প্রতিদিন প্রচুর আম-লিচুর গুটি ঝরে যাচ্ছে। তাই পাইকাররা লোকসানের ভয়ে বাগান কিনছেন না। এতে চাষিরা চরম বিপাকে পড়েছেন।’
মেহেরপুর সদর উপজেলার আমঝুপি এলাকার কোলা গ্রামের বাগান মালিক রোকনুজ্জামান বলেন, ‘মাঠে ৬ বিঘা জমিতে বিভিন্ন জাতের আম বাগান আছে। গত বছরের তুলনায় হিমসাগর আম গাছে আশানুরূপ মুকুল আসেনি। অতিমাত্রার গরমে আমের গুটি ঝরে পড়ছে। কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ অনুযায়ী সেচ দেওয়া হচ্ছে। নানা প্রকার ছত্রাকনাশক ছিটিয়েও তেমন উপকার পাওয়া যাচ্ছে না।’
একই গ্রামের বাগান মালিক আরশেদ আলী বলেন, ‘সাড়ে পাঁচ বিঘা জমিতে লিচুর বাগান আছে। বাগানে আগাম জাতের আটি লিচু আছে দেড় বিঘা। আটি লিচু গাছের ডগায় ডগায় মুকুলে ছেয়ে গেছে। বাকি জমিতে আছে আতা বোম্বাই লিচুর গাছ। সেগুলোতেও মুকুল দেখা দিয়েছে। কিন্তু গুটিগুলোর ডগা শুকিয়ে যাচ্ছে। একটু বাতাস হলেই ঝরে পড়ছে। এ বছর লিচুর ফলন বিপর্যয় ঘটবে।’
আম-লিচুর ফরিদপুর জেলার মৌসুমি ব্যবসায়ী মোকলেছুর রহমান বলেন, ‘গাছে মুকুল আসার সঙ্গে সঙ্গে জেলার কয়েকটি এলাকায় ৩০ বিঘা আম বাগান ও ১৫ বিঘা লিচু বাগানের ইজারা নিয়েছি। তবে আম-লিচুর গুটি ঝরে পড়ছে। কোনোভাবেই রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। আর কয়েকদিন গরম পড়লে বড় আকারের বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হবে ব্যবসায়ীদের।’
চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র পর্যবেক্ষণ কর্মকর্তা রাকিবুল হাসান জানান, মেহেরপুর জেলায় এবছর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দীর্ঘদিন থেকেই অনাবৃষ্টি। এর প্রভাব ফসলের ওপরে পড়ছে। তবে এমন পরিস্থিতি কবে নাগাদ শিথিল হবে, তা বলা যাচ্ছে না।
মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিজয় কৃষ্ণ হালদার বলেন, ‘তীব্র তাপের কারণেই আমের গুটি ঝরে যাচ্ছে। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে চাষিদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। যেসব বাগানের আম ও লিচুর গুটি ঝরে যাচ্ছে, বিকেলের দিকে পরিমিত মাত্রায় বোরন স্প্রে ও গাছের গোড়ায় পানি দিতে হবে। তাহলে গুটি ঝরা রোধ করা যাবে। এছাড়া নিয়মিত সেচ দিতে হবে।’
আসিফ ইকবাল/এসইউ/জেআইএম